পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অভিযাত্রিক ·GNA এদিকে পাচ দিনের ডাকবাংলোর ভাড়া বাকি, হাতে বিশেষ কিছুই নেই, বিষম মুশকিলে পড়তে হল। সেই সময় ডাকবাংলোয় আমার পাশের কামরায় একজন মুসলমান ভদ্রলোক কাজ উপলক্ষে এসে দিন-তিনেক ছিলেন। তার নাম আমার মনে নেই—মদারিপুর থেকে কিছুদূরে কোনো স্থানের তিনি জমিদার। ডাকবাংলোর চৌকিদারের মুখে তিনি আমার বিপদের কথা সব শুনেছিলেন। একদিন আমায় ডাকিয়ে বললেন—আপনি কলকাভায় থাকেন ? বললাম—ই, তাই বটে, কলকাতায় থাকি । তিনি বললেন—আমি সব শুনেচি আপনার বিপদের কথা । এখানে আপনাকে টাকা ওরা দেবে না—আমি আপনাকে সনাক্ত করতে পারতাম, কিন্তু তাতে মিথ্যে কথা বলা হবে, সত্যিই আমি আপনাকে চিনি না। আমার প্রস্তাব এই যে, কলকাতার ভাড়া আপনাকে আমি দিচ্চি, তাতে আপনি কিছু মনে করবেন ন—পথিক ভদ্রলোক বিপদে পড়েচেন, আমন বিপদে সকলেই পড়তে পারে। আপনি আপনাদের আপিস থেকে গিয়ে টাকা নিয়ে আসুন, আমার নাম-ঠিকানা রাখুন, আমার টাকাটা আমায় সুবিধে মত পাঠিয়ে দেবেন। তিনি আমার কলকাতার ভাড়া দিলেন—তাই নিয়ে আবার কলকাতায় ফিরি। কেশেরামজি শুনে হাসতে হাসতে বললেন—তবেই আপনি আমাদের কাজ করেচেন ! মনিঅৰ্ডার ধরতে পারলেন না, তবে আপনি ফি বারই কি টাকা নিতে কলকাতায় আসবেন নাকি ? আমি বললুম–এবার থেকে নোট রেজেন্ট্রি থামে পাঠাবেন, নইলে বিদেশে এই রকমই কাও । মুসলমান ভদ্রলোকের ঠিকানাতে কেশোরামজি অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে নিজেই তার টাকাটা পাঠিয়ে দিলেন। কতদিনের কথা, ভদ্রলোকের নাম পর্যস্ত মনে নেই—কিন্তু তার সে উপকার জীবনে কখনো ভুলবে না। বিশেষ করে আজকাল হিন্দু-মুসলমানের এই বিবাদের দিনে সে কথা বেশি করে আমার মনে পড়ে। বরিশালে গেলুম মাদারিপুর থেকে স্টীমারেই। আড়িয়ল থ নদীর ওপর দিয়ে স্টীমার কিছুদূর গিয়ে পড়ে কালাবদর নদীতে, তারপর মেঘনার মুখ দিয়ে ঘুরে যায়। পূর্ববঙ্গের নদীপথের শোভা যারা দেখচেন, তাদের চোখের সামনে সেই মুদুরবন দিয়ে ঘেরা গ্রামগুলির ছবি আবার ভেসে উঠবে এ গায়ের কথা উল্লেখ করলেই। আমি সেই একটিবার মাত্র ওপথে যাই, আর কখনো যাইনি–কিন্তু মনের পটে সে সৌন্দর্য আঁকা হয়ে গিয়েচে চিরকালের জন্তে । কত রোমান্সের এরা স্বপ্ন জাগার-কত্ত নতুন স্বষ্টির সাহায্য করে। মানুষের অন্তরের বিচিত্র অনুভূতিরাজির সন্ধান যেন মেলে এদের শুামল পরিবেশের মধ্যে ; যত অপরিচয়, ততই স্ফুর্তি, ততই আনন্দ । দিনে রাতে, সন্ধ্যায় জ্যোৎস্নায় এদের নিয়েই স্বপ্ন-পসারীর কত করিবার ! তবে কথা এই, সন্ধ্যাবেলায় নৌকা ভিড়লে গ্রামের ঘাটে, বেসাতি করি কখন ? কত্ত ধান ক্ষেত, খেজুর গাছ, তারাভরা রাত। সন্ধ্যায় গ্রামের বধুর কলসী কাকে জল নিতে এসে