পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

838 বিভূতি-রচনাবলী —মঞ্জু? বেশ সুন্দর নামটি | এসো তো খুঁকি মা এদিকে— —এসো, বাবু বলচেন, কথা শুনতে হয়—এসো—হঁ্য, ভালো কথা—আমার স্ত্রী আপনার সঙ্গে আলাপ করতে চাইছিল। সে কলকাতার লোক কখনো দেখেনি—বলেন তো আনি— —বেশ তো, আমুন না তাকে । চা দেবার পূর্বে ড্রইং মাস্টার বাড়ির মধ্যে গিয়ে কি বলে এল। কিছুক্ষণ পরে অধিঘোমটা দিয়ে একটি ছিপছিপে গৌরাঙ্গী মুন্দরী বধু চা ও খাবার নিয়ে তক্তপোশে আমার সামনে রাখলে। ডুইং মাস্টার বললে— প্রণাম করে—ব্রাহ্মণ— মেয়েটি গলায় আঁচল দিয়ে প্রণাম করলে আমি বাধা দেবার পূর্বেই। কিন্তু এক সে ছেলেমানুষ, বয়েস আঠারো-উনিশের বেশি হবে না -তাতে এত লাজুক যে বেচারী আমার দিকে মুখ তুলে ভালো করে চাইতেই পারলে না। আমি তাকে বসতে বললুম তক্তপোশের এক কোণে। তার স্বামীও বসলো। অনেক বলবার পর মেয়েটির মুখ ফুটলো। দু একটি কথা বলতে শুরু করলে আমার কথার উত্তরে । ঢাকা জেলার পল্লীগ্রামের টান এত বেশি যে ভালো করে বোঝাই যায় না। নিকটেই কি এক গ্রামে বাপের বাড়ি । আমি বললুম—আপনি কখনো কলকাতায় যান নি ? মেয়েটি কিছু বলবার আগে ড্রইং মাস্টার হেসে বললে—ও কখনো শাটিরপাডা ছেড়ে কোথাও যায়নি, রেল স্টীমার চড়েনি। মেয়েটি মুখ নীচু করে হাসলে। বেশ সুন্দর মুখ, যে কেউ মুনারী বলবে মেয়েটিকে। চা খাবার সময়ে আমার দিকে কৌতুহলপূর্ণ ডাগর চোখে চেয়ে দেখতে লাগলো মেয়েটি, যেন কোন অদৃষ্টপূর্ব জীব দেখচে । বললুম—সময় থাকলে আপনার হাতের রান্না একদিন খেতুম, কিন্তু কালই চলে যাচ্চি। আর সময় নেই। ড্রইং মাস্টারের বাডিতে আর কেউ নেই, তার এই স্ত্রী ছাড়া। নিজেই সেকথা বললে। —দেখুন, স্কুলে সামান্ত মাষ্টনে পাই, বাড়িতে একটা ঝি রাখলে ভালো হয় কিন্তু তা পেরে উঠিনে, একা আমার স্ত্রীকে সব কাজকর্ম করতে হয়—ওর আবার শরীর তত ভালো নয়, কি করি, আমার সঙ্গতি নেই বুঝতেই পারচেন। আমি বললুম—ইনি চমৎকার থাবার-দাবার করতে পারেন তো ! এই বয়েসে শিখেচেন অনেক কিছু দেখচি। মেয়েটি নিজের প্রশংসা শুনে লজ্জায় মুখ নীচু করলে। আমি বললুম—এ গ্রামে বেশ শিক্ষিত লোক আছেন ? ডুইং মস্টার বললে—আছেন বটে তবে দেশে থাকেন না। একজন বিখ্যাত লোক আছেন, ঢাকার উকিল ; আরও একজন কলেজের প্রোফেলার আছেন। তবে তারা দেশে আসেন খুব কম। ইতিমধ্যে সেই ছোট মেয়েটি আবার এল—আমি জিজ্ঞেস করলুম, এই মেয়েটি আপনার বাড়ির না ?