পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

83)b, বিভূতি-রচনাবলী পথের ধারে মাঝে মাঝে দেহাতী গ্রাম—সেখানে বিশেষ কিছু খাবার পাওয়া যায় না আমরা জানি—সন্ধান করলে হয়তো চি ড়ে পাওয়া যেতে পারে বড়জোর। অম্বিকা বললে—চলো, আগে গিয়ে কোথাও রান্না করে খাওয়া যাবে— —রান্না করবার জিনিসপত্র তো চাই—তাই বা কোথায় পাবো ? —চলে যা হয় ব্যবস্থা হবেই। ব্যবস্থার কোনো চিহ্ন নেই কোনো দিকে । সুদীর্ঘ সোজা পথ, গ্রাম দু-তিন মাইল অন্তর। পুরেনি বলে একটা গ্রাম রাস্তার ধারেই পড়লো—এখানে একটা ডাকঘর আছে, দু-চারখানা দোকান–কিন্তু দোকানের খাবার দেখে কিনতে প্রবৃত্তি হল না আমাদের। পুরেনি ছড়িয়ে মাইল-খানেক গিয়েচি, এক জায়গায় পথের ওপর অনেকগুলো কুলি খাটচে–খোয়া ভাঙচে । তাদের কাছে একথান। এক্কা দাড়িয়ে । একজন বিহারী ভদ্রলোক কুলিদের তদারক করচেন পায়চারি করতে করতে। আমাদের অদ্ভূত দেখেই বোধহয় তার দৃষ্টি সেদিকে আকৃষ্ট হল। দুজনেরই পরনে খাকীর হাফ-প্যান্ট, গায়ে সাদা টুইলের হাতকাটা শাট, মাথার সোলার টুপি, পায়ে হাটু পর্যন্ত উলের মোজা ও বুট জুতো। তার ওপর আবার দুজনেরই চোখে চশমা, হাতে হাতঘড়ি। এ ধরনে সেজেগুজে বিহারের অঙ্গ পল্লীপথে চললে লোকের দৃষ্টি আকৃষ্ট না করে পারে না। পথে দেখে এসেচি প্রত্যেক বস্তির লোক আমাদের দিকে ই করে চেয়ে চেয়ে দেখচে–পুরেনি বাজারে তো লোকে আমাদের দিকে আঙুল দেখিয়ে কি বলাবলি করেচে। - আর কিছু না হই, আমরা যে পুলিসের দারোগ এ ধারণ অনেকেরই হয়েচে সে বিষয়ে নিঃসনোই । ভদ্রলোক বাংলায় জিজ্ঞেস করলেন—আপনার কোথায় যাবেন ? ' ওঁর মুখে বাংলা শুনে আমরা একটু আশ্চর্য না হয়ে পারলুম না। ওঁর চেহারা অবিকল দেহাতী বিহারী ভদ্রলোকের মতই। ভাগলপুর শহর থেকে বারো মাইল দূরে বাঙালীর সঙ্গে এ ধরনের সাক্ষাৎ বড় একটা আশাও করা যার না । —মশায় কি বাঙালী ? —আজে, আমার নাম রামচন্দ্র বস্থ–এই নিকটেই চেরো বলে গ্রাম আছে, ওখানেই আমার বাড়ি। —এখানে বাড়ি করেচেন ? কতদিন হবে ? —আমার বাস এখানে প্রায় পনেরো বছর হল—তার আগে আমরা কহলগাও থাকতাম । আপনারা কোথায় যাবেন ? আমাদের গন্তব্যস্থানের কথা শুনে ভদ্রলোক ভাবলেন আমরা পদব্ৰজে বৈদ্যনাথ ধামে তীর্থ করতে যাচ্চি। বললেন, তা বেশ। আপনাদের বয়সে তো ওসব মানেই না। এসব দেখলেও আমঙ্গ হয় । তা এবেলা আমার এখানে আহার করে তবে যাবেন।