পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অভিযাত্রিক 88న পল্লীতে কিংবা পল্লীর আশপাশের মাঠে। তাই বলছিলুম বন-প্রকৃতি মানুষের মুখ-সুবিধার বড়ই উদাসীন। মুচুকুন্দ কলকাতার রাস্তার দ্বধারে যথেষ্ট দেখা যায়, বাংলার পাড়াগায়েও আছে, কিন্তু কোনো বনে কখনো এ গাছ দেখিনি । বাকি রইল বস্তু শেফালি ও সপ্তপর্ণ। বন্ত শেফালি অজস্র দেখা যায় নাগপুর অঞ্চলে পার্বত্য অরণ্যে। সিংস্কৃমেও আছে, তবে অত বেশি নয় । সপ্তপর্ণ দক্ষিণ বিহারের বনপ্রদেশে যথেষ্ট আছে—অন্ত কোথাও একদম নেই। উড়িয়া ও সিংস্কৃমের অরণ্যে সারাদিন খুঁজে বেড়ালেও একটা বন্ত সপ্তপর্ণ চোখে পড়বে না—কিন্তু পড়বে যেখানে মামুষের বাসস্থান । কেবলমাত্র বাংলা দেশেই দেখা যায় পল্লীগ্রামের আশেপাশের বনে অযত্নসভূত বহু সপ্তপর্ণ বৃক্ষ হেমস্তের প্রারম্ভে মধুর পুপ-মুবাসে পথিকের মন আননে ভরিয়ে দেয়। রক্তকরবীর বন দেখেচি চন্দ্রনাথে, কিন্তু সে গেল বাংলা দেশের মধ্যে। খুব বাহারে ও রঙীন কোনো ফুল সাধারণত রুক্ষ পার্বত্য অঞ্চলের অরণ্যে দেখাই যায় না, যদিও থাকলে খুব ভালো হত । একসময়ে আমরা দূর থেকে কয়েকটি পাহাড়ের চুড়া দেখতে পেলুম। মেঘের মধ্যে নীলরঙের তিনটি চুড়, কেঁদ আর শালবনের ফাকে অনেক দূরের আকাশের পটে যেন আঁকা রয়েচে । অম্বিকা ও আমি ঠিক করে নিলুম ঐ নিশ্চয়ই ত্রিকূট। অম্বিকা বললে—ও পাহাড় কিন্তু অনেক দূরে। —মেঘের মধ্যে বলে চোখে ধাঁধা লেগে অমনি হচ্চে। মেঘ সরে গেলে অভ্যত দূর বলে মনে হবে না । বন একেবারে নিবিড়। শুকনো পাতার রাশি গাছতলায় এত জড় হয়েছে যে পায়ে দলে যাবার সময় একটা একটানা মচ মচ শব্দ বহুক্ষণ ধরে শুনচি । এদিকে বেলা বেশ পড়ে এসেচে, রোদ রাড়া হয়ে বড় বড় কেঁদ গাছের মগডালে লেগেচে৷ এ জঙ্গলটাতে আবার বঙ্গ বাশ, খয়ের ও বহেড়া গাছ খুব বেশি। সন্ধ্যা তো হয়ে এল, যদি জঙ্গল শেষ না হয় তবে কি করা যাবে সে বিষয়ে আমরা আগে থেকে পরামর্শ করলুম। অম্বিক বললে, গাছে উঠে রাত কাটানো যাবে, সেই যে-কথা আগে বলেছিলুম। —তা যদি উঠতে হয় তবে সন্ধ্যার আগেই আশ্রয় নিতে হবে সেখানে, অন্ধকার হলে এ বনে আর এক পা-ও চলা উচিত হবে না। অধিকারও তাই মত। লছমীপুরের জঙ্গলে ভালুক ও বাঘ যথেষ্ট আছে, ভাগলপুরে থাকতে শুনে এসেচি। বন্ধুক ও উপযুক্ত গাইড না নিয়ে বনের মধ্যে যাওয়াই উচিত নয়, একথা আমাদের সবাই বলেছিলেন—এমন কি বুীসাহেব পর্যন্ত। আমরা কারো কখন শুনে যখন এসেচি, তখন এর আনুষঙ্গিক বিপদের জন্যেও আমাদের তৈরী থাকতে হবে বৈকি। সন্ধ্যা হবার আগে দেখা গেল পথটা উৎরাইয়ের দিকে নামচে । আমরা অনেক দূরে নেমে এলুম, ক্রমশ একটা পাহাড়ী ঝরনা আমাদের পথের ওপর কুলুকুলু রৰে চলেচে রাশি রাশি बि. ब्र. २-२* o