পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ye বিভূতি-রচনাবলী জোড় মিলিয়ে দিয়েচে—দুই মেঘের মধ্যে একচুল র্যাক নেই আকাশের কুত্রাপি । প্রমাদ গনলাম মনে মনে । - স্বর্যের আলো না দেখতে পেলে মন আমার কেমন যেন মিইরে মুষড়ে পড়ে। বর্ষাকালে বর্ষ ভালো লাগে না এমন কথা বলচিনে—কিন্তু পয়সা খরচ করে এতদূর বেড়াতে এসে যদি এমন অকালবৰ্ষ নামে, তবে মন খারাপ হওয়া খুব বেশি অস্বাভাবিক নয় বলেই আমার বিশ্বাস । কয়েকটি মাত্র স্টেশন পেরিয়ে এসেই কার্গিরোড—ছোট স্টেশনটা, চারিদিক পাহাড় ও বনে ঘেরা । একরকম ভিজতে ভিজতেই নামলুম গাড়ি থেকে। জনপ্রাণী নেই কেউ কোনোদিকে, কোথায় বা বন্ধুর লোক, কোনোদিকে একটা ঘোড়ার টিকিও দেখলুম না । জিনিসপত্র নিয়ে স্টেশনের টিকিটম্বরের সামনে একটা বেঞ্চির ওপর বসে রইলুম। হয়তো এমন হতে পারে, বন্ধুর প্রেরিত লোকটা ঘোড়া নিয়ে আসত্তে আসতে এই ভীষণ বৃষ্টিতে কোথাও আশ্রয় নিয়েছে—তাই সম্ভব। সে ক্ষেত্রে বৃষ্ট্রিট থামলেই সে এসে পড়বে। অবিশ্রান্ত বৃষ্টি চললো মুষলধারে, ঘণ্টা দুই কাটলো—বেলা এগারোটা। কাছের একটা পার্বত্য ঝরনা ফুলে ফেঁপে উঠেচে–নাল দিয়ে তোড়ে জল চলেচে–পাহাড় থেকে জলের ভোড় নেমে রাস্তায় অনেকখানি ডুবিয়ে দিয়েচে । বেলা এগারোটার পর বৃষ্টি একটু কম জোরে পড়তে লাগলো, একেবারে থামলে না— কিন্তু বন্ধুর প্রেরিত কোনো লোকের চিহ্ন দেখা গেল না রাস্তার ওপর। আমি ঠায় বসে আছি বেঞ্চিখানার ওপর, মাদ্রাজী স্টেশন-মাস্টার একবার আমার দিকে চেয়ে দেখে নিজের বাসায় চলে গেল। স্টেশন জনহীন। আমি পেছনের অনুচ্চ পাহাড়শ্রেণীর দিকে চেয়ে রইলুম অনেকক্ষণ। মেঘ যেন পাহাড়ের ,াখা এসে জড়িয়ে আছে—তার চমৎকার দেখাচ্চে—ঠক এমনি দৃপ্ত দেখেছিলুম-সেও ঠিক এমনিধারা এক বর্ষণমুখর দিনে—ফতেপুর সিক্রির বিখ্যাত বুলন দরওয়াজার উচু খিলানের মাথায়, সবুজ বনটিার বর্ণক যেন মেঘের মধ্যে ঢুকচে আর বেরুচ্চে। মেঘের রাশি যেন জড়িয়ে জড়িয়ে পাক খাচ্চে বুলন্দ দরওয়াজার খিলানের কার্নিসে। এই বনবেষ্টিত নির্জন স্টেশনটিতে বলে কয়েক বৎসর আগে দেখা সে ছবিটা মনে এল । মুশকিল হয়েচে, ছাতিটা পর্যন্ত আনিনি যে, না হয় জিনিসপত্র স্টেশনঘরে রেখে একটু পাহাড়ের ওপর গিয়ে বেড়িয়ে আসবে। বেলা দুটাে বাজলে স্টেশনের ঘড়িতে, মাত্রাস্ত্রী স্টেশন-মাস্টারটি বাসা থেকে ফিরে এল, বোধ হয় খাওয়া দাওয়া সেয়ে ঘুমিয়ে উঠে এল এবং পূর্ববং একজায়গায় বসে আছি দেখে স্বামার দিকে চেয়ে দেখতে দেখতে স্টেশনঘরে ঢুকলো। কার্টুনি থেকে একখানা ডাউনট্রেন কিছু পরেই এল, মিনিট দুই দাড়ালে, ছেড়ে বিলাসপুরের দিকে চলে গেল ।