পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অভিযাত্রিক 8ᏬᏄ ধরনের ধূতি-কামিজ পর একজন লোক যাচ্ছে—কিন্তু অস্পষ্ট জোৎস্নার আলোয় ঠিক চিনতে পারলুম না লোকটি বাঙালী কি না। আমি ওদের বললুম—এখানে দোকান আছে তো ? —ই্যা বাবু, ছোট একটা বাজার আছে—সব পাওয়া যায়। ওদের পয়সা দিলুম চাল ইত্যাদি কিনে আনতে। মোমবাতি যদি পাওয়া যায়, তাও আনতে বলে দিলুম। আমি অন্ধকারে বসে আছি চুপ করে—প্রায় মিনিট কুড়ি পরে দেখি আগের সেই বাঙালী-পোশাক পরা লোকটি সামনের রাস্ত দিয়ে যেদিক থেকে এসেছিল, সেদিকে যাচ্চে। দু-একবার ডেকে জিজ্ঞেস করবার ইচ্ছে হলেও শেষ পর্যন্ত চুপ করেই রইলুম। তারপর আমার লোক দুটি জিনিসপত্র নিয়ে ফিরে এল। ওরা মোমবাতি পায়নি–কিন্তু মহুয়ার তেল ও মাটির প্রদীপ কিনে এনেচে। দড়ি দিয়ে সলতে করে মাটির প্রদীপই জালানো গেল। পাথর কুড়িয়ে এনে উমুন করে ঘরের এককোণে রান্না চড়িয়েচি ওদের সাহায্যে— ভাত প্রায় নামে নামে এমন সময় পেছন থেকে কে পরিষ্কার বাংলায় বলে উঠলোঁ—মশাই কি বাঙালী ? পিছন দিকে চেয়ে দেখি সেই বাঙালী পোশাক পর। লোকটি। বললুম, আঞ্জে হ্যা, বাঙালীই বটে। কলকাতা থেকে আসচি। ভদ্রলোক মহা খুশী হলেন মনে হল । বললেন—তা এখানে কি করচেন ? আমি সংক্ষেপে সব ব্যাপার খুলে বললুম। তিনি ব্যস্ত-সমস্ত হয়ে বলে উঠলেন—তাও কি কখনো হয় । আপনি বাঙালী, এখানে এসে হাত পুড়িয়ে রোধে খাবেন । আমুম, চলুন। ওসব যা রণধচেন, আপনার সঙ্গের লোক থাবে এখন। আপনি চলুন আমার বাড়ি। —আপনি কি করে জানলেন আমার কথা ? - —বাজারে শুনলুম। বললে, এক বাঙালী বাবু কলকাতা থেকে এসেচেন, দারকেশা যাচ্চেন, আপনারই গুদামে আশ্রয় নিরেচেন। চাল ডাল কিনে এনেচে আপনার লোক তাও জানি । –এ যুঝি আপনার গুদাম ? —এখানে জংলী গালা রাখা হয়, আমারই ঘরটা বটে। ভদ্রলোকের সনির্বন্ধ অনুরোধ এড়াতে না পেরে গেলুম ওঁর সঙ্গে। মিনিট পাঁচ-ছয় সোজা রাস্তায় গিয়ে তারপর একটা সরু পথ গিয়েচে ব-দিকে। সে পথে গিয়ে কাঠের পুলের ওপর দিয়ে বা দিকের সেই বে পাহাড়ী নদী বা ঝরনা, আমাদের সঙ্গে রাস্তার সমান্তরাল ভাবে অনেকদূর থেকে চলে আসচে, সেইটে পার হওয়া গেল। ঝরনাট পার হয়ে আবার একটু উদিকে উঠে মাঠের রাস্তার আরও মিনিট ভিন চার হাটবার পর একখানা খোলার বালে৷ ধরনের পাচিল ঘের বাড়ির সামনে এসে তিনি বললেন, আমুন, এই হলো গরিবের কুঁড়ে। বমুন এথানে। চা খান তো ? বাড়িতে বলে আসি। আপনি বাঙালী, বড় আনন্দ হল, বাঙালীর মুখ কতদিন ষে দেখিনি।