পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অভিযাত্রিক 8ፃ› গিয়ে বসলুম তার সঙ্গে। ভদ্রলোকের চেহারা এমনি যে বার বার চেয়ে দেখতে ইচ্ছে হয় ; মুনীর বলে ততটা নয়, যতটা কিনা আমার চোখে অপরিচিত সাজপোশাক ও মুখের গড়নের জন্তে ৷ ” আমার বললেন—আজি আমার ওখানে দয়া করে থাকতে হবে। আমার বন্ধু অনেক বাঙালী আছেন, আমি বাঙালীদের বড় ভালোবাসি। আমি বিশ্বাস করি ভারতবর্ষের জাতীয় জাগরণের মূলে রয়েচে বাঙালী। এই সম্পর্কে তিনি মুরেন্দ্রনাথ ও চিত্তরঞ্জনের নাম উল্লেখ করলেন বারবার অত্যন্ত সশ্রদ্ধভাবে। বাংলাদেশ থেকে বহুরে ছত্তিশগড়ির শৈলারণ্যবেষ্টিত ক্ষুদ্র এক গ্রামে এক চুনের ভাটিতে বসে আমার মাতৃভূমির দুজন সুসস্তানের নাম উচ্চারিত হতে শুনে গর্বে আননে আমার বুক ভরে উঠলো। ভদ্রলোক নিজের পরিচয় দিলেন। নাম বালকৃষ্ণ ত্র্যম্বক, রংড়ে ব্রাহ্মণ, বাড়ি খাণ্ডোয়৷ নাগপুরের ওদিকে। এখানে এই চুনাপাথরের খনি ইজারা নিয়ে ভাটিতে চুন পুড়িয়ে মোটর লরি করে এগারো ক্রোশ দূরবর্তী রেলওয়ে স্টেশনে চালান দেন। আমি যে পথে এসেচি, ও পথে বা স্টেশনে নয়, কারণ ওটা মোটর গাড়ি চলাচলের উপযুক্ত রাস্তা নয়। বালকৃষ্ণ ত্র্যম্বক আমাকে তঁর বাসায় নিয়ে গেলেন। তার স্ত্রী, দুই মেয়ে ও একটি দশবৎসরের ছেলে থাকে বাসার । সকলেই আমার সামনে বার হলেন বটে, মেয়েরা কিন্তু কথা কেউই বললেন না। গৃহস্বামী জিজ্ঞেস করলেন—আপনি স্নান করুন। জল তুলে দেবে, না পুকুরে নাইবেন । —পুকুরের জল ভালো ? —খুব ভালো, এমন জল কোথাও দেখবেন না। সত্যিই শালবনের মধ্যে পুকুরটিতে স্নান করে খুব আরাম হল। আজ মেঘ মোটেই নেই আকাশে, বেশ রৌদ্র চড়েচে, এতখানি ঘোড়ায় চড়ে এসে গরম বোধ হচ্ছিল দস্তুরমত। তা ছাড়া, চালবিহীন ঘোড়ায় চড়ার দরুন পেটে খিল ধরে গিয়েচে । বালকৃষ্ণজী বললেন—আমরা কিন্তু মাছমাংস খাইনে বাবুজী—আপনার বড় অসুবিধে হবে খেতে । আমি শশব্যস্ত হয়ে বললুম—কি যে বলেন। তাতে হয়েচে কি ? আমি মাছমাসের छङ नई उठ । খাবার জিনিস অতি পরিপাটা। ‘তুপ অর্থাৎ ঘিরে ডোবানো মোটা আটার রুটি, কুমড়োর ছোক, পাপর, ছোলার ডাল, চাটনি ও মহিষের দুধের দই। বালকৃষ্ণ ত্র্যম্বক এক আহার করলেন আমার মতো সাত জনের সমান। সেই মোট রুটি আমি চারখানার বেশি ওঁদের অত্যন্ত অনুরোধ সত্ত্বেও খেতে পারলুম না, উনি খেলেন কম্সে কম ষোলখানি। সেই অম্বুপাতে ডাল-তরকারি ও দইও টানলেন। জাহারাদির পর তাকে বললুম—এদেশে অন্ত কি ব্যবসা সুবিধে ?