পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অভিযাত্রিক 8ፃፋ আমার এ প্রশ্নের উদ্দেশু এমন সুন্দর জ্যোৎস্না-রীত্রিতে এই বৃহৎ অরণ্যের প্রাস্তে বলে মনে একটু রহস্ত ও ভয়ের ভাব নিয়ে আসা। জীবনকে উপভোগ করবার একটা দিক হচ্চে, যে-সময়ে যে-রসের বা অনুভূতির আবির্ভাব প্রতিকর—সে সময়ে সেটি মনে আনবার চেষ্টা করতে হবে। দূরে বনরেখা জ্যোৎস্নার আলোয় অস্পষ্ট দেখালেও টান, সোজা, কোণাকুণি রেখাটি টেগ ভাবে দূরদিগন্তে যে কোন মায়ালোকের সীমা নির্দেশ করচে, আকাশচুত জ্যোৎস্না-রাত্রির দল যেন ওই বনের অন্তরালে দল পাকিয়ে থাকে—আরও কত্ত অজানা সৌন্দর্য, অজানা ভয়, অজানা বিপদের দেশ ওটা। আমার সামনে বড় একটা শিলাখণ্ড, তার গা ঘেঁষে একটা বাকা গাছ। গাছটার বড় বড় পাতা, অনেকটা পেঁপে পাতার মত, পাথরখানার ওপর অনেকগুলো শুকনো পাতা ঝরেও পড়েচে—তার মধ্যে খড় খড় শব্দ করে এদেশী বড় বহুরূপী যাতায়াত করচে । মাধোলাল আমার কথার উত্তরে বললে—না বাবুজি, তা কখনো দেখিনি। —দেখ ভেবে । তোমার দেখে আশ্চর্য মনে হয়েছিল, এমন কিছু ? আমি ওকে ছাড়চিনে, ও না বললে কি হবে ? এমন মুন্ধর জ্যোৎস্নারাত্রে ওর মুখে একটা অদ্ভুত ধরনের গল্প না শুনলেই চলবে না আমার। কিন্তু মাধোলাল অনেক আকাশপাতাল ভেবেও কিছু বার করতে পারলে না। অদ্ভুত জানোয়ার কিছু দেখেনি, তবে বাঘ তারপর দু-চারটে মেরেচে, ভালুক, শূয়োরওঁ—আর হরিণের তো কথাই নেই। বললুম—তবে মাধোলাল, আমার একটা আশ্চর্য গল্প শুনবে ? মাধোলাল উৎসাহের সঙ্গে বললে—নিশ্চয়ই, বলুন। বানিয়ে বানিয়ে ওকে একটা খুব বড় ও অদ্ভুত ধরনের জানোয়ারের গল্প করলুম— আরাকান ইরোমের জঙ্গলে দেখেছিলুম। মাধোলাল বিশ্বাস করলে। আমার উদেপ্ত খানিকট ভর ও রহস্তের স্বষ্টি করা, এই অরণ্য-প্রাস্তের এমন অপূর্ব পূর্ণিমারাত্রিকে আরও নিবিড় ভাবে পাবার জন্তে । শীত করতে লাগলো। তখন রাত বারোটার কম নয় । আমি ওকে বললুম—এ বন খুব বড়। —রেওয়া স্টেট পর্যন্ত চলে গিয়েচে–বেশি নয়, মাইল বাইশ-তেইশ এখান থেকে। ওদিকে অমর-কণ্টক পর্যন্ত চলেচে। খুব বড় বন। —বেশ দেখবার জায়গা—না ? লিনারি ভালো ? —লিনারি আপনার কাকে বলেন বুঝি না। তবে এমন সব জায়গা আছে, যেখানে গেলে আর বাড়ি ফিরে আসতে ইচ্ছা করে না, এখানেই থাকি মনে হয়। একটা জায়গার কথা বলি। পশ্চিম দক্ষিণ কোণে এই বনের একটা পাহাড়ের নাম ঘোড়াঘাটির পাহাড়। দেখতে চান তো একদিন নিয়ে যাবো। সাদা পাথরের পাহাড়ট, অনেকট উচু বড় কাটাগাছের দুল, আর পাথরের কাটলে পাহাড়ী মৌমাছির চাব। গ্রামের লোকের ঘোড়াঘাট পাহাড়ে