পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী والمرا8 সারবন্দী হয়ে কাদের অভ্যর্থনা করে নেবার জন্তে দাড়িয়ে আছে। আমরা যেতেই তারা আমাদের কাছে ছুটে এল—উড়িয়া ভাষায় বললে—বাবুরা কলকাতা থেকে আসচেন ? —ই্যা। তোমরা কাকে খুঁজচো ? —সম্বলপুরের ডেপুটি কমিশনার সাহেব আমাদের পাঠিয়ে দিয়েচেন। আপনাদের আসবার কথা ছিল, আপনাদের সব বন্দোবস্তের ভার নেবার পরোয়ানা দিয়েচেন আমাদের ওপর । প্রমোদবাবুর দাদা বন্ধুবর নীরদবাবুর সঙ্গে সম্বলপুরের ডেপুটি কমিশনার মিঃ সেনাপতির আলাপ ছিল, সেই স্থত্রে নীরদবাবুকে দিয়ে একখানা চিঠি লিখিয়ে এনেছিলুম, আমি ও প্রমোদবাবু কয়েকদিন পূর্বে। চিঠির মধ্যে অনুরোধ ছিল যেন গ্রাম্য পুলিল আমাদের গন্তব্য স্বানে যাবার একটু ব্যবস্থা করে দেয়। কিন্তু সে ব্যবস্থা যে এভাবে অভ্যর্থনায় পরিণত হবে তা আমরা ভাবিনি। বেলপাহাড় স্টেশন থেকে কিছুদূরে ডাকবাংলোয় তারা নিয়ে গিয়ে তুললে। একটু দূরে একটা বড় পুকুর, আমরা সকলে পুকুরের জলে নেমে স্বান করে সারাদিন রেলভ্রমণের পরে যেন নতুন জীবন পেলাম। পুকুরের পাড়ে পুরীর জগন্নাথের মন্দিরের অনুকরণে একটি ক্ষুদ্র মন্দির। স্থানটি চতুর্দিকে পাহাড়ে ঘেরা—অবিপ্তি পাহাড়শ্রেণী দূরে দূরে। একটি বুদ্ধ ব্রাহ্মণ ডাকবাংলোয় আমাদের জন্তে রান্না করে রেখেচে । স্নান করে এসে আমরা আহারে বসে গেলুম, শালপাতায় আলোচলের ভাত আর কাচা শালপাতার বাটিতে ডাল। পাচক ব্রাহ্মণটি যেন সাত্ত্বিকতার প্রতিমূর্তি, শান্ত নম্রস্বভাব—আমাদের ভয়েই যেন সে জড়সড়। সঙ্কোচের সঙ্গে ভয়ে ভয়ে আমাদের পরিবেশণ করছিল—যেন তার এতটুকু ক্রটি দেখলে আমরা তাকে জেলে পাঠাবো। ডেপুটি কমিশনারের বন্ধু আমরা—বলা তো যায় না ! তারপর জিজ্ঞেস করে জানা গেল ব্রাহ্মণ পুকুরপাড়ের সেই মন্দিরের পূজারী। বেলা পড়ে এসেচে। রাঙা রোদ দূরের পাহাড়ের মাথায়, শালবনে, রাঙা মাটির টিলার গায়ে । কি ঘন শালবন, দূরে দূরে নির্জন পর্বতমালা। ডাকবাংলো থেকে অল্প দূরে একটি গ্রাম্য হাট বসেচে। আমরা হাটে বেড়াতে গেলুম। উড়িয়া মেয়ের হাট থেকে ঝুড়ি মাথায় বাড়ি ফিরচে। আমরা হাট বেড়িয়ে বেড়িয়ে দেখলুম। পরিমল কয়েকটি ফটাে নিলে। বেগুন, রেড়ির বীজ, কুচো শুটকি চিংড়ি, কুমড়ে প্রভৃতি বিক্রি হচ্চে। এক দোকানে একটি উড়িয়া যুবতী ধান দিয়ে মুড়কি কিনচে। সন্ধ্যার ছায়া নেমে এল। আমরা ডাকবাংলোর বারান্সার চেয়ার পেতে বললুম। পাচক ব্রাহ্মণটি এসে বিনীত ভাবে উড়িয়া ভাষায় জিজ্ঞেস করলে, রাত্রে আমরা কি খাবো । আমাদের এত আনন্দ হয়েচে যে, কত রাত পর্যন্ত জ্যোৎস্নালোকে বলে আমরা গল্প করলুম। রাত দশটার সমন্ধ আহারাদি শেষ হয়ে গেল—কিন্তু ঘুম আর আসে না করে চোখে।