পাতা:রজনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২ রজনী ।

যদি তাই হয়, তবে বাদ্য শুনিবার জন্য, বাদকের বাড়ী যাই না কেন? সেতার, সারেঙ্গ, এসরাজ, বেহালার অপেক্ষা কি শচীন্দ্র সুকণ্ঠ? সে কথা মিথ্যা।

 তবে কি সেই স্পর্শ? আমি যে কুসুমরাশি রাত্ৰি দিবা লইয়া আছি, কখন পাতিয়া শুইতেছি, কখন বুকে চাপাইতেছি—ইহার অপেক্ষা তাহার স্পর্শ কোমল? তা ত নয়। তবে কি? এ কাণকে কে বুঝাইবে, তবে কি?

 তোমরা বুঝ না, বুঝাইবে কি? তোমাদের চক্ষু আছে, রূপ চেন, রূপই বুঝ। আমি জানি, রূপ দ্রষ্টার মানসিক বিকার মাত্ৰ—শব্দও মানসিক বিকার। রূপ, রূপবানে নাই, দর্শকের মনে—নহিলে একজনকে সকলেই সমান রূপবান দেখে না কেন ? একজনে সকলেই আসক্ত হয় না কেন? সেইরূপ শব্দও তোমার মনে। রূপ দর্শকের একটি মনের সুখ মাত্র, শব্দও শ্রোতার একটি মনের সুখ মাত্র, স্পর্শও স্পর্শকের মনের সুখ মাত্র। যদি আমার রূপসুখের পথ বন্ধ থাকে, তবে শব্দ স্পর্শ গন্ধ কেন রূপ সুখের ন্যায় মনোমধ্যে সৰ্ব্বময় না হইবে?

 শুষ্কভূমিতে বৃষ্টি পড়িলে কেন না সে উৎপাদিনী হইবে? শুষ্ক কাষ্ঠে অগ্নি সংলগ্ন হইলে কেন না সে জ্বলিবে? রূপে হোক,শব্দে হোক,স্পর্শে হোক,শূন্য রমণীহৃদয়ে সুপুরুষ সংস্পর্শ হইলে কেন প্রেম না জন্মিবে? দেখ অন্ধকারে ফুল ফুটে, মেঘে ঢাকিলে চাঁদ গগনে বিহার করে, জনশূন্য অরণ্যেও কোকিল ডাকে, যে সাগরগর্ভে মনুষ্য কখন যাইবে না, সেখানেও রত্ন প্রভাসিত হয়, অন্ধের হৃদয়েও প্রেম জন্মে—আমার নয়ন নিরুদ্ধ বলিয়া হৃদয় কেন প্রস্ফুটিত হইবে না?

 হইবে না কেন, কিন্তু সে কেবল আমার যন্ত্রণার জন্য