পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরাজিত పిసి যাচ্ছে দিন দিন—না কি ? জামাইকে ও-সব কথা বলেছ ? আজকালকার ছেলেমেয়েদের ধরণ আলাদা, তুমি জান না। ছেলেমানষে জামাই, টাকাকড়ি, চাকরিবাকরি ভগবান যখন দেবেন তখন হবে । আজকালের মেয়েরা ও-সব বোঝে না, বিশেষ করে তোমার মেয়ে সে ধরণেরই নয়, ওর মন আমি খুব ভাল বঝি। দাও গিয়ে পাঠিয়ে ওকে জামাইয়ের সঙ্গে— ওদের সখ নিয়েই সখি । উৎসাহে অপর রাত্রে ঘন্ম হয় না এমন অবস্হা, কাল সারাদিন অপণাকে লইয়া রেল সটীমারে কাটানো—উঃ !-“শধে সে, আর কেউ না । রাত্রে অস্পষ্ট আলোকে অপণাকে ভাল করিয়া দেখিবারই সযোগ হয় না, দিনে দেখা হওয়া এ বাড়িতে অসম্ভব—কিস্ত কাল সকালটি হইতে তাহারা দুজনে—মাঝে আর কোন বাধা ব্যবধান থাকিবে না ! কিন্ত স্টীমারে অপণা রহিল মেয়েদের জায়গায়। তিন ঘণ্টা কাল সেভাবে কাটিল। তার পরেই রেল। এইখানেই অপর সর্বপ্রথম গহসহালী পাতিল স্ত্রীর সঙ্গে । ট্রেনের তখনও অনেক দেরি। যাত্রীদের রান্না-খাওয়ার জন্য স্টেশন হইতে একটু দরে ভৈরবের ধারে ছোট ছোট খড়ের ঘর অনেকগুলি—তারই একটা চার আনায় ভাড়া পাওয়া গেল । অপ দোকানের খাবার আনিতে যাইতেছে দেখিয়া বধ বালুল—তা কেন ? এই তো এখানে উন্ন আছে, যাত্রীরা সব রোধে খায়, এখনও তো তিন-চার ঘণ্টা দেরি গাড়ির, আমি রঞ্জিব । অপর ভারী খুশী । সে ভারী মজা হইবে ! এ কথাটা এতক্ষণ তাহার যে কেন মনে আসে নাই ! মহা উৎসাহে বাজার হইতে জিনিসপত্র কিনিয়া আনিল । ঘরে ঢুকিয়া দেখে ইতিমধ্যেই কখন বধ স্নান সারিয়া ভিজা চুলটি পিঠের উপর ফেলিয়া, কপালে সিন্দরের টিপ দিয়া লালজরিপাড় মটকার শাড়ি পরিয়া ব্যস্তসমস্ত অবস্হায় এটা-ওটা ঠিক করিতেছে । হাসিমুখে বলিল—বাড়িওয়ালী জিগ্যেস করছে উনি তোমার ভাই বুঝি ? আমি হেসে ফেলতেই বুঝতে পেরেছে, বলছে—জামাই ! তাই তো বলি !—আরও কি বলিতে গিয়া অপণা লজ্জায় কথা শেষ করিতে না পারিয়া হাসিয়া ফেলিল । অপর মাধনেত্ৰে বধর দিকে চাহিয়া ছিল। কিশোরীর তন্যদেহটি বেড়িয়া ফুটনোমখে যৌবন কি অপব্ব স.ষমায় আত্মপ্রকাশ করিতেছে । সুন্দর নিটোল গৌর বাহ দটি, চুলের খোঁপার ভঙ্গিটি কি অপরুপ ! গভীর রাত্রে শোবার ঘরে এ পয্যন্ত দেখাশোনা, দিনের আলোয় নানের পরে এ অবস্হায় তাহার স্বাভাবিক গতিবিধি লক্ষ্য করিবার সযোগ কখনও ঘটে নাই—আজ দেখিয়া মনে হইল অপণা সত্যই সন্দেরী বটে । কাঁচা কাঠ কিছ.তেই ধরে না, প্রথমে বধ, পরে সে নিজে, ফু* দিয়া চোখ লাল করিয়া ফেলিল। প্রৌঢ়া বাড়িওয়ালী ইহাদের জন্য নিজের ঘরে বাটনা বাটিতে গিয়াছিল। ফিরিয়া আসিয়া দু'জনের দন্দ'শা দেখিয়া বলিল—ওগে মেয়ে, সরো বাছা, জামাইকে যেতে বলো । তোমাদের কি ও কাজ মা ? সরো আমি দি ধরিয়ে । বধ তাগিদ দিয়া অপকে স্নানে পাঠাইল । নদী হইতে ফিরিয়া সে দেখিল—ইহার মধ্যে কখন বধ বাড়িওয়ালীকে দিয়া বুজার হইতে রসগোল্লা ও ছানা আনাইয়াছে, রেকবীতে পোপে কাটা, খাবার ও গ্লাসে নেবার রস মিশানো চিনির শরবৎ। অপ: হাসিয়া বলিল— উs, ভারী গিন্নীপনা যে ! আচ্ছা তরকারীতে নন দেওয়ার সময় গিন্নীপনার দৌড়টা একবার দেখা যাবে । অপণা বলিল—আচ্ছা গো দেখো—পরে ছেলেমানষের মত ঘাড় দলাইয়া বলিল—ঠিক হ'লে কিন্তু আমায় কি দেবে ?