পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরাজিত oq কলমে বাইশ বছর হ’ল বাবদের এখানে—কোন ব্যাটার ফু* খাটবে না বলে দিও-চার সালের ভূমিকম্প মনে আছে ? তখন কত্তা বেচে, গদী থেকে বেরচ্ছি, ওপর থেকে কত্তা হেকে বললেন, ওহে রামধন, পোস্তা থেকে ল্যাংড়া আমের দরটা জেনে এসো দিকে চট করেণ বেরতে যাবো মশাই—আর যেন মা বাসকি একেবারে চোঁদ হাজার ফণা নাড়া দিয়ে উঠলেন—সে কি কাণ্ড মশাই ? হে" হে’, আজকের লোক নই— কষ্ট হয় অপর ও ছোকরা টাইপিস্ট নপেনের। সে বেচারী উকি মারিয়া দেখিয়া আসে ম্যানেজার ঘরে বসিয়া আছে কিনা। অপর কাছে টুলের উপর বসিয়া বলে, এখনও ম্যানেজার হাইকোট থেকে ফেরেন নি ববি, অপব্ববাব-ছটা বাজে, আজ ছুটি সেই সাতটায়— অপ বলে, ও-কথা আর মনে করিয়ে দেবেন না, নপেনবাব । বিকেল এত ভালবাসি, সেই বিকেল দেখি নি যে আজ কত দিন । দেখন তো বাইরে চেয়ে, এমন চমৎকার বিকেলটি, আর এই অন্ধকার ঘরে ইলেকট্রিক আলো জেলে ঠায় বসে আছি সেই সকাল দশটা থেকে । মাটির সঙ্গে যোগ অনেকদিনই তো হারাইয়াছে, সে সব বৈকাল তো এখন দরের সমতি মাত্রা। কিন্তু কলিকাতা শহরের যে সাধারণ বৈকালগুলি তাও তো সে হারাইতেছে প্রতিদিন । বেলা পাঁচটা বাজিলে এক-একদিন লুকাইয়া বাহিরে গিয়া দাঁড়াইয়া সমখের বাড়ির উচু কাণিশের উপর যে একটুখানি বৈকালের আকাশ চোখে পড়ে তারই দিকে বর্ভূক্ষর দটিতে চাহিয়া থাকে। সামনেই উপরের ঘরে মেজবাব বন্ধুবান্ধব লইয়া বিলিয়াড’ খেলিতেছেন, মাক"ারটা রেলিং-এর ধারে দাঁড়াইয়া সিগারেট খাইয়া পনরায় ঘরে ঢুকিল । মেজবাবর বন্ধ; নীলরতনবাব একবার বারান্দায় আসিয়া কাহাকে হকি দিলেন। অপর মনে হয় তাহার জীবনের বৈকালগুলি এরা পয়সা দিয়া কিনিয়া লইয়াছে, সবগুলি এখন ওদের জিমায়, তাহার নিজের আর কোন অধিকার নাই উহাতে । প্রথম জীবনের সে-সব মাধুরীভরা মহোত্তগুলি যৌবনের কলকোলাহলে কোথায় মিলাইয়া গেল ? কোথায় সে নীল আকাশ, মাঠ, আমের বউলের গন্ধভরা জ্যোৎস্নারাত্রি ? পাখি আর ডাকে না, ফুল আর ফোটে না, আকাশ আর সবজে মাঠের সঙ্গে মেশে না— ঘেটুফুলের ঝোপে সদ্যফোটা ফুলের তেতো গন্ধ আর বাতাসকে তেতো করে না। জীবনে সে যে রোমাসের স্বপ্ন দেখিয়াছিল—যে স্বপ্ন তাহাকে একদিন শত দুঃখের মধ্য দিয়া টানিয়া আনিয়াছে তার সন্ধান তো কই এখনও মিলিল না ? এ তো একরঙা ছবির মত বৈচিত্র্যহীন, কমব্যস্ত, একঘেয়ে জীবন—সারাদিন এখানে অফিসের বন্ধ জীবন, রোকড়, খতিয়ান,মটগেজ, ইনকামট্যাক্সের কাগজের বোঝার মধ্যে পঙ্ককেশ প্রবীণ বুনো সংসারাভিজ্ঞ ব্যক্তিগণের সঙ্গে সপিনা ধরানোর প্রকৃষ্ট উপায় সম্বন্ধে পরামর্শ করা, এটানদের নামে বড় বড় চিঠি মশাবিদা করা—সন্ধ্যায় পায়রার খোপের মত অপরিকার নোংরা বাসাবাড়িতে ফিরিয়াই তখনি আবার ছেলে পড়াইতে ছোটা । কেবল এক অপণাই এই বন্ধ জীবনের মধ্যে আনন্দ আনে। অফিস হইতে ফিরিলে সে যখন হাসিমথে চা লইয়া কাছে দাঁড়ায়, কোনদিন হালয়া, কোনদিন দচোরখানা পরোটা, কোনদিন বা মাড়ি নারিকেল রেকাবিতে মাজাইয়া সামনে ধরে, তখন মনে হয় এ যদি না থাকিত । ভাগ্যে অপণাকে সে পাইয়াছিল ! এই ছোট্ট পায়রার খোপকে যে গহ বলিয়া মনে হয় সে শধে; অপণা এখানে আছে বলিয়া, নতুবা চেক, টুল, বাসন-কোসন, জানালার পদা, এসব সংসার নয় ; অপণা যখন বিশেষ ধরণের শাড়িটি পরিয়া ঘরের মধ্যে ঘোরাফেরা করে, অপ ভাবে, এ নেহনীড় শধ ওরই চারিধারে ঘিরিয়া, ওরই মাখের হাসি বকের নেহ যেনঃপরম আশ্রয়, নীড় রচনা সে ওরই ইন্দ্রজাল ।