পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরাজিত . 84 উপকার করেছেন, তা নিজের আত্মীয়ও করে না আজকাল । কে পরকে থাকবার জন্যে ঘর ছেড়ে দেয় ?--কিন্তু আমার সে বলবার মুখ তো দিলেন না ভগবান, কি করি বলনে। আমি রাগী সামলে মেয়েকে যদি খাওয়াতে না পারি, তাই সে দুবেলা আপনি খেয়ে অফিসে গেলেই পি-টুকে নিজে গিয়ে ডেকে এনে আপনার পাতে খাওয়াত ৷ এক একদিন— কথা শেষ না করিয়াই পিটুর মা হঠাৎ চুপ করিল। অপর মনে হইল ইহার সঙ্গে অপণার কথা কহিয়া সখ আছে, এ বুঝিবে, অন্য কেহ বুঝিবে না । , সারাদিন অপর কাজকমে ভুলিয়া থাকিতে প্রাণপণ চেস্টা করে, যখনই একটু মনে আসে অমনি একটা কিছু কাজ দিয়া সেটাকে চাপা দেয়। আগে সে মাঝে মাঝে অন্যমনস্ক হইয়া বসিয়া কি ভাবিত, খাতাপত্রে গল্প কবিতা লিখিত—কাজ ফাঁকি দিয়া অন্য বই পড়িত । কিন্তু অপণার মৃত্যুর পর হইতে সে দশগণ খাটিতে লাগিল, সকলের কাছে কাজের তাগাদা করিয়া বেড়ায়, সারাদিনের কাজ দ’ঘণ্টায় করিয়া ফেলে, তাহার লেখা চিঠি টাইপ করিতে করিতে নপেন বিরক্ত হইয়া উঠিল । পণিমা তিথিটা অপণা ছাদের আলিসার ধারে দাঁড়াইয়া, এই তো গত কোজাগরী পণিমার রাত্ৰিতে লক্ষীর মত মহিমময়ী, কি সন্দের ডাগর চোখ দুটি, কি সুন্দর মুখশ্ৰী । অপর মনে হইয়াছিল, ওর ধাড় ফেরাবার ভঙ্গিটা যেন বুাণীর মত—এক এক সময় সম্প্রম আসে মনে । অপণা হাসিয়া বলে—আমার যে লৎজা করে, নইলে সকালে তোমার খাবার ক'রে দিতে ইচ্ছে করে, আমার ছোট বোন ল'চ ভাজতে জানে না,—সেজ খড়ীমা ছেলে সামলে সময় পান না—মা থাকেন ভাঁড়ারে, তোমার খাবার কষ্ট হয়—না ? হঠাৎ অপর মনে হয়—দর ছাই—কি লিখে যাচ্ছি মিছে—কি হবে আর এসবে ?-- কি বিরাট শুন্যতা—কি যেন এক বিরাট ক্ষতি হইয়া গিয়াছে, জীবনে আর কখনও তাহা পণ্য হইবার নহে—কখনও নয়, কাহারও দ্বারা না-সম্মুখে বক্ষ নাই, লতা নাই, ফুলফল নাই—শধ্যে এক রক্ষ ধসের বালকোময় বহুবিস্তীণ মরুভূমি । মাসখানেক পরে পিটুর মা চোখের জলে ভাসিয়া বিদায় লইল । পি-টুর বাবা বেশ সবল হইয়া উঠিয়াছেন, দুইজনেই আত্মীয়ের মত নানা সাম্পত্তনার কথা বলিয়া গেল। পি-টুর মা বলিল—কখনো ভাই দেখি নি, ঠাকুরপো । আপনাকে সেই ভাইয়ের মত পেলাম, কিন্ত করতে পারলাম না কিছ—দিদি বলে’ যদি মাঝে মাঝে আমাদের ওখানে যান—তবে জানব সত্যই আমি ভাই পেয়েছি। অপর সংসারের বহন দ্রব্য পি-টুদের জিনিসপত্রের সঙ্গে বধিয়া দিল—ডালা, কুলো, ধামা, ব’টি, চাকী, বেলন । পি-টুর মা কিছুতেই সে সব লইতে রাজী নয়—অপ বলল, কি হবে বৌঠান, সংসার তো উঠে গেল, ওসব আর হবে কি, অন্য কাউকে বিলিয়ে দেওয়ার চেয়ে আপনারা নিয়ে যান, আমার মনে তুপত হবে তবুও । মৃত্যুর পর কি হয় কেহই বলিতে পারে না ? দু-একজনকে জিজ্ঞাসাও করিল—ওসব কথা ভাবিয়া তো তাহদের ঘমে নাই । মেসে বরদাবাবর উপর তাহার শ্রদ্ধা ছিল, তাঁহার কাছেও একদিন কথাটা পাড়িল । বরদাবাব তাহাকে মামুলি সাম্পত্তনার কথা বলিয়া কত্তব্য সমাপন করিলেন। একদিন পল ও ভাজি নিয়ার গল্প পড়িতে পড়িতে দেখিল মৃত্যুর পর ভাজিনিয়া প্রণয়ী পলকে দেখা দিয়াছিল—হতাশ মন এইটুকু সত্ৰকেই ব্যগ্র আগ্রহে অাঁকড়াইয়া ধরিতে ব্যস্ত হইয়া উঠিল । তবুও তো এতটুকু আলো ! সে অফিসে, মেসে, বাসায় যে সব লোকের সঙ্গে কারধার করে—তাহারা নিতান্ত মামলি ধরণের সাংসারিক জীব—অপর প্রশ্ন শনিয়া তাহারা আড়ালে হাসে, চোখ টেপাটেপি করে—করণার হাসি হাসে। এইটাই অপর বরদান্ত করিতে পারে না আদৌ। একদিন একজন সন্ন্যাসীর সন্ধান