পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૧ર বিভূতি-রচনাবলী আছে, ‘দিল্লী জংশন ইন্ট”—একটা গ্যাসোলিনের ট্যাক—তাহার পরই চারদিকে আলোকিত প্ল্যাটফম”—প্রকাণ্ড দোতলাস্টেশন -সেই পিয়াস সোপ,কিটিংস পাউডার, হলস ডিসটেপার, লিপটনের চা ৷ আবদুল আজিজ হাকিমের রৌশনেসেকাৎ, উৎকৃষ্ট দাদের মলম । নিজের ছোট ক্যানভাসের সন্টকেস ও ছোট বিছানাটা হাতে লইয়া অপ স্টেশনুে নামিল —রাত অনেক, শহর সম্পণে অপরিচিত, জিজ্ঞাসা করিয়া জানিল, ওয়েটিংরম দোতলায়, রালি সেখানে কাটানোই নিরাপদ মনে হইল । সকালে উঠিয়া জিনিসপত্র স্টেশনে জমা দিয়া সে বাহিরে আসিয়া দাঁড়াইল । অন্ধমাইলব্যাপী দীঘ শোভাযাত্রা করিয়া সুসজ্জিত হস্তীপঠে সোনার হাওদায় কোন শাহাজাদী নগর ভ্রমণে বাহির হইয়াছেন কি ? দুধারে আবেদনকারী ও ওমরাহ দল আভুমি তসলীম করিয়া অনুগ্রহ ভিক্ষার অপেক্ষায় করজোড়ে খাড়া আছে কি ? নব আগন্তুক নরেন্দ্রনাথ পাৎশা বেগমের কোন সরাইখানায় ধুমপানরত বন্ধ পারশ্যদেশীয় শেখের নিকট পথের কথা জিজ্ঞাসা করিয়াছিল ? কিন্তু এ যে একেবারে কলিকাতার মতই সব! এমন কি মণিলাল জয়েলাসে’র বিজ্ঞাপন পযf্যস্ত । দুজন লোক কলিকাতা হইতে বেড়াতে আসিয়াছিল, টাঙাভাড়া সস্তা পড়িবে বলিয়া তাহাকে তাহারা সঙ্গে লইবার প্রস্তাব করিল। কুতুবের পথে একজন বলিল, মশাই, আরও বার-দই দিল্লী এসেছি, কুতুবের মুরগীর কাটলেট খাননি কখনও, না ? আঃ—সে যা জিনিস, চলন, এক ডজন কাটলেট অডার দিয়ে তবে উঠব কুতুবমিনারে । বাল্যকালে দেওয়ানপরে পড়িবার সময় পরোনো দিল্লীর কথা পড়িয়া তাহার কল্পনা করিতে গিয়া বার বার স্কুলের পাশের একটা পরাতন ইটখোলার ছবি অপর মনে উদয় হইত, আজ অপ দেখিল পরাতন দিল্লী বাল্যের সে ইটের পজিাটা নয়। কুতুবমিনার নতুন দিল্লী শহর হইতে যে এতদরে তাহা সে ভাবে নাই । তদুপরি সে দেখিয়া বিঙ্কিমত হইল, এই দীঘ পথের দুধারে মরভূমির মত অনৰবার কাঁটাগাছ ও ফণিমনসার ঝোপে ভরা রৌদ্রদগ্ধ প্রাস্তরের এখানে ওখানে সৰব'ত ভাঙা বাড়ি, মিনার, মসজিদ, কবর, খিলান, দেওয়াল । সাতটা প্রাচীন মত রাজধানীর মকে কংকাল পথের দুধারে উচুনিচু জমিতে বাবলাগাছ ও ও ক্যাকটাস গাছের ঝোপ-ঝাপের আড়ালে হৃতগৌরব নিস্তবধতায় আত্মগোপন করিয়া আছে —পথীরায় পিথেীরার দিল্লী, লাল, কাট, দাসবংশের দিল্লী, তোগলকদের দিল্লী, আলাউদ্দীন খিলজীর দিল্লী, শিরি ও জাহানপনাহ, মোগলদের দিল্লী। অপর জীবনে এ রকম দশ্য দেখে নাই, কখনো কল্পনাও করে নাই, সে অবাক হইল, অভিভুত হইল, নীরব হইয়া গেল, গাইড-বাক উলটাইতে ভুলিয়া গেল, ম্যাপের নম্বর মিলাইয়া দেখিতে ভুলিয়া গেল-মহাকালের এই বিরাট শোভাযাত্রা একটার পর একটা বায়োস্কোপের ছবির মত চলিয়া যাইবার দশ্যে সে যেন সক্ৰিবৎহারা হইয়া পড়িল । আরও বিশেষ হইল এই জন্য যে, মন তাহার নবীন আছে। কখনও কিছ; দেখে নাই, চিরকুাল অস্তিাকুড়ের আবর্জনায় কাটাইয়াছে অথচ মন হইয়া উঠিয়াছে সব গ্রাসী, বন্ভূক্ষ। তাই সে যাহা দেখিতেছিল, তাহা যেন বাহিরের চোখটা দিয়া নয়, সে কোন তীক্ষদশী তৃতীয় নেত্র, যেটা না খলিলে বাহিরের চোখের দেখাটা নিফল হইয়া যায়। g ঘুরিতে ঘুরিতে দাপরের পর সে গেল কুতব হইতে অনেক দরেগিয়াসদ্দীনতোগলকের অসমাপ্ত নগর—তোগলকাবাদে। গ্রীম দাপরের খররৌদ্রে তখন চারিধারের উষরভূমি আগন-রাঙা হইয়া উঠিয়াছে। দর হইতে তোগলকাবাদ দেখিয়া মনে হইল যেন কোন দৈত্যের হাতে গাঁথা এক বিরাট পাষাণ-দগে । তৃণ-বিরল উষরভূমি, পত্রহীনবাবলা ও কণ্টকময় ক্যাকটাসের পটভূমিতে খররৌদ্রেসেযেন এক বােব'র অসরবীয? স উচ্চ পাষাণদগপ্রাচীর