পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরাজিত tjరీ ইঙ্গদী তরমেলে সতক রাত্রি যাপন" ওঝাজী উৎসাহ পাইয়া অপকে একটা পটলি খলিয়া একরাশ সংস্কৃত কবিতা দেখাইলেন গবের সহিত বলিলেন, বাবজী, ছেলেবেলা থেকেই সংস্কৃত কবিতায় আমার হাত আছে, একবার কাশী-নরেশের সভায় আমার গরদেব ঈশ্বরশরণ আমায় নিয়ে যান । একজোড়া দোশালা বিদায় পেয়েছিলাম, এখনও আছে । ত্রিশ-পয়ত্রিশ বছর আগেকার কথা । --তারপর তিনি অনেকগুলি কবিতা শনাইলেন, বিভিন্ন ছন্দের সৌন্দয্য ও"তাহাতে তাঁহার রচিত শ্লোকের কৃতিত্ব সরল উৎসাহে বণনা করিলেন। এই ত্রিশ বৎসর ধরিয়া ওঝাজী বহন কবিতা লিখিয়াছেন, ও এখনও লেখেন, সবগুলি সযত্নে সঞ্চয় করিয়া রাখিয়াও দিয়াছেন, একটিও নাট হইতে দেন নাই, তাহাও জানাইলেন । একটা অদ্ভুত ধরণের দুঃখ ও বিষাদ অপর হৃদয় অধিকার করিল। কত কথা মনে আসিল, তাহার বাবা এই রকম গান ও পাঁচালি লিখিত তাহার ছেলেবেলায় । কোথায় গেল সে সব ? যুগ যে বদল হইয়া যাইতেছে, ইহারা তাহা ধরিতে পারে না। ওঝাজীর এত আগ্রহের সহিত লেখা কবিতা কে পড়িবে ? কে আজকাল ইহার আদর করিবে ? কোন আশা ইহাতে পরিবে ওঝাজীর ; অথচ কত ঐকান্তিক আগ্রহ ও আনন্দ ইহার পিছনে আছে । চাঁপদানীর পোস্টাফিসে কুড়াইয়া পাওয়া সেই ছোট মেয়েটির নাম-ঠিকানা-ভুল পত্ৰখানার মতই তাহা ব্যথা ও নিরর্থক হইয়া যাইবে ! @ সকালে উঠিয়া সে ওঝাজীকে একখানা দশটাকার নোট দিয়া প্রণাম করিল। নিজের একখানা ভাল বাঁধানো খাতা লিখিবার জন্য দিল—কাছে আর টাকা বেশী ছিল না, থাকিলে হয়ত আরও দিত। তাহার একটা দৰব’লতা এই যে, যে একবার তাহার হৃদয় পশ করিতে পারিয়াছে তাহাকে দিবার বেলায় সে মুক্তহস্ত, নিজের সুবিধা-অসুবিধা তখন সে দেখে না। ডাকবাংলো হইতে মাইল খানেক পরে পথ ক্ৰমে উপরের দিকে উঠিতে লাগিল, ক্লমে আরও উপরে, উচ্চ মালভুমির উপর দিয়া পথ—শাল, বশি, খয়ের ও আবলসের ঘন অরণ্য-— ডাইনে বামে উচুনীচু ছোট বড় পাহাড় ও টিলf—শালপপসারভি সকালের হাওয়া যেন মনের আয় বাড়াইয়া দেয়। চতুর্থ দিন বৈকালে অমর-কণ্টক হইতে কিছু দরে অপরপ সৌন্দৰ্য্যভূমির সঙ্গে পরিচয় হইল—পথটা সেখানে নীচের দিকে নামিয়াছে, দই দিকে পাহাড়ের মধ্যে সিকিমাইল চওড়া উপত্যকা, দুধারের সান দেশের বন অজস্র ফুলে ভরা— পলাশের গাছ যেন জলিতেছে। হাত দই উচু পাথরের পাড়, মধ্যে গৈরিক বাল ও উপলশয্যায় শিশু শোণ—নিমলি জলের ধারা হাসিয়া খশিয়া আনন্দ বিলাইতে বিলাইতে ছটিয়া চলিয়াছে-–একটা ময়র শিলাখন্ডের আড়াল হইতে নিকটের গাছের ডালে উঠিয়া বসিল । অপর পা আর নড়িতে চায় না-তার মগধ ও বিসিমত চোখের সম্মুখে শৈশব কল্পনার সবগকে কে আবার এভাবে বাস্তবে পরিণত করিয়া খলিয়া বিছাইয়া দিল ! এত দুরবিসপিতি দিগবলয় সে কখনও দেখে নাই, এতনিজনতার কখনও ধারণা ছিল না তাহার—বহৃদরে পশ্চিম আকাশের অনতিপস্ট সুদীঘ নীল শৈলরেখার উপরকার আকাশটাতে সে কি অগরপ বণ‘সমুদ্র ! কি অপব্ব দশ্য চোখের সম্মুখে ষে খলিয়া যায় ! এমন সে কখনও দেখে নাই— জীবনে কখনও দেখে নাই । এ বিপলে আনন্দ তাহার প্রাণে কোথা হইতে আসে ! এই সন্ধ্যা, এই শ্যামলতা, এই মুক্ত প্রসারের দশনে যে অমত মাখানো আছে, সে মুখে তাহা কাহাকে বলিবে ?’-কে তাহার এ চোখ ফুটাইল, কে সাঁঝ-সকালের, সয্যাস্তের, নীল বনানীর শ্যামলতার মায়া-কাজল তাহার চোখে মাখাইয়া দিল ?