পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরাজিত しfö শোণের জল আনিয়া তিন টুকরা পাথরের উপর চাপাইয়া আগন জালিল । হাসিয়া বলিল, একটা ভজন গাও রামচরিত, যে আগন জনলেছে, এর কাছে তোমার ভালকে এগোবে না, নিভর্ণয়ে গাও । t জ্যোৎস্না উঠিল । চারিধারে অদ্ভুত, গভীর শোভা । কল্যকার কাব্যপরাণের রেশ তাহার মন হইতে এখনও যায় নাই। বসিয়া বসিয়া মনে হইল সত্যই যেন কোন সন্দরী চার নেত্রা রাজবধ—নব-পপিতা মল্লীলতার মত তন্বী লীলাময়ী—এই জনহীন নিষ্ঠুর আরণ্যভূমিতে পথ হারাইয়া বিপন্নার মত ঘুরিতেছেন—তাঁহার উদভ্ৰান্ত স্বামী ঘনমস্ত অবস্থায় তাঁহাকে পরিত্যাগ করিয়া চলিয়া গিয়াছে—দরে ঋক্ষবান পৰ্বতের পাশ্ব দিয়া বিদভ যাইবার পথটি কে তাঁহাকে বলিয়া দিবে। উনবিংশ পরিচ্ছেদ নন-কো-অপারেশনের উত্তেজনাপণে দিন খালি তখন বছর তিনেক পিছাইয়া পড়িয়াছে, এমন সময় একদিন প্রণব রাজসাহী জেল হইতে খালাস পাইল । জেলে তাহার স্বাস্থ্যহানি হয় নাই, কেবল চোখের কেমন একটা অসুখ হইয়াছে, চোখ কর্যকর করে, জল পড়ে। জেলের ডাক্টার মিঃ সেন চশমা লইতে বলিয়াছেন এবং কলিকাতার এক চক্ষরোগবিশেষজ্ঞের নামে একটি পত্রও দিয়াছেন । e জেল হইতে বাহির হইয়া সে ঢাকা রওনা হইল এবং সেখান হইতে গেল সবগ্রামে। এক প্রৌঢ়া খড়ীমা ছাড়া তাহার আর কেহ নাই, বাপ মা শৈশবেই মারা গিয়াছেন, এক বোন ছিল, সেও বিবাহের পর মারা যায় । সন্ধ্যার কিছু আগে সে বাড়ি পৌছিল । খুড়ীমা ভাঙা রোয়াকের ধারে কবলের আসন পাতিয়া বসিয়া মালা জপ করিতেছিলেন, তাহাকে দেখিয়া কাঁদিয়া ফেলিলেন । খড়ীমার নিজের ছেলেটি মানুষ নয়, গাঁজা খাইয়া বেড়ায়, প্রণবকে ছেলেবেলা হইতে মানুষ করিয়াছেন, ভালওবাসেন, কিন্ত লেখাপড়া জানিলে কি হইবে, তাঁহার পনেঃ পুনঃ সদপদেশ সত্ত্বেও সে কেবলই নানা হাঙ্গামায় পড়িতেছে, ইচ্ছা করিয়া পড়িতেছে। এ বান্ধবয়সে শধে তাঁহারই মরণ নাই, ইত্যাদি নানা কথা ও তিরস্কার প্রণবকে রোয়াকের ধারে দাঁড়াইয়া শুনিতে হইল । বাগানের বড় কাঁঠাল গাছের একটা ডাল কে কাটিয়া লইয়া গিয়াছে, খড়ীমা চৌকি দিয়া বেড়ান কখন, তিনি ও-সব পরিবেন না, তাঁহাকে যেন কাশী পাঠাইয়া দেওয়া হয়, কারণ কত্তাদের অত কস্টের বিষয়-সম্পত্তি চোখের উপর নষ্ট হইয়া যাইতেছে, এ দশ্য দেখাও তাঁহার পক্ষে অসম্ভব । দিনচারেক বাড়ি থাকিয়া খড়ীমাকে একটু শান্ত করিয়া চশমার ব্যবস্থার দোহাই দিয়া সে কলিকাতায় রওনা হইল। সোদপরে খড়ীমার একজন ছেলেবেলার-পাতানো গোলাপফুল আছেন, তাঁহারা প্রণবকে দেখিতে চান একবার, সেখানে যেন সে অবশ্য অবশ্য যায়, খড়ীমার মাথার দিব্য । প্রণব মনে মনে হাসিল । বৎসর-চার পর্বে গোলাপ-ফুলের বড় মেয়েটির যখন বিবাহের বয়স হইয়াছিল, তখন খড়েীমা ওই কথাই বলিয়াছিলেন, কিন্ত প্রণব যাওয়ার সময় করিয়া উঠিতে পারে নাই । তারপরই আসিল নন-কো-অপারেশনের ঢেউ, এবং নানা দুঃখ দভোগ । সেটির বিবাহ হইয়াছে, এবার বোধ হয় ছোটটির পালা । কলিকাতায় আসিয়া সে প্রথমে অপর খোঁজ করিল, পরিচিত সহানগলিতে গিয়া দেখিল, দু-একদিন ইপিরিয়াল লাইব্রেরী খুজিল, কারণ যদি আপনঁ কলিকাতায় থাকে তবে ইপিরিয়াল লাইব্রেরীতে না আসিয়া থাকিতে পারিবে না । কোথাও তাহার সম্প্রধান মিলিল