পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/১১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরাজিত పిపిd রাত্রে অপর আর কিছতেই ঘুমাইতে পারে না । চোখের সামনে নিরুপমার সেই হাসিহাসি মাখ, সেই অনাযোগের সরে। আর একটি বার দেখা হয় না তাহার সঙ্গে ? কাজলকে সে কলিকাতায় লইয়া আসিল পরদিন বৈকালের ট্রেনে। সন্ধ্যার পর গাড়িখানা শিয়ালদহ স্টেশনে ঢুকিল । এত আলো, এত বাড়ি-ঘর, এত গাড়িঘোড়া—কি কাণ্ড এ সব ! কাজল বিসময়ে একেবারে নিবাক হইয়া গেল । সে শধে বাবার হাত ধরিয়া চারিদিকে ডাগর চোখে চাহিতে চাহিতে চলিল । হ্যারিসন রোডের বড় বড় বাড়িগলা দেখাইয়া একবার সে বলিল—ওগুলো কাদের বাড়ি, বাবা ? অত বাড়ি ? বাবার বাসাটায় ঢুকিয়া কাপড়-চোপড় ছাড়িয়া সে গলির মোড়ে দাঁড়াই য়া বড় রাস্তার গাড়িঘোড়া দেখিতে লাগিল । অবাক-জলপান জিনিসটা কি ? বাবার দেওয়া দুটো পয়সা কাছে ছিল, এক পয়সার অবাক-জলপান কিনিয়া খাইয়া সে সত্যই অবাক হইয়া গেল। মনে হইল, এমন অপৰবৰ্ণ জিনিস সে জীবনে আর কখনও খায় নাই । চাল-ছোলা ভাজা সে অনেক খাইয়াছে । কিন্তু কি মশলা দিয়া ইহারা তৈরী করে এই অবাক-জলপান ? অপর তাহাকে ডাকিয়া বাসার মধ্যে লইয়া গেল--ওরকম একলা কোথাও যাস নে খোকা। হারিয়ে যাবি কি, কি হবে । যাওয়ার দরকার নেই । কাজলের দঃস্বপ্ন কাটিয়া গিয়াচ্ছে। আর দাদামশায়ের বকুনি খাইতে হইবে না, একা গিয়া দোতলার ঘরে রাত্রিতে শ,ইতে হইবে না, মামীমাদের ভয়ে পাতের প্রত্যেক ভাতটি খুটিয়া গছাইয়া খাইতে হইবে না। একটি ভাত পাতের নিচে পড়িয়া গেলে বড় মামীমা বলিত - পেয়েছ পরের, দেদার ফেল আর ছড়াও ন বাবার অন্ন তো খেতে হ'ল না কখনো ! ছেলেমানষে হইলেও সব সময় এই বাবার খোটা কাজলের মনে বাজিত – অপ বাসায় আসিয়া দেখিল, কে একখানা চিঠি দিয়াছে তাহার নামে-অপরিচিত হস্তাক্ষর । আজ পাঁচ-ছয় দিন পত্ৰখানা আসিয়া চিঠির বাক্সে পড়িয়া আছে । খলিয়া পড়িয়া দেখিল একজন অপরিচি ও ভদ্রলোক তাহাকে লিখিতেছেন, তাহার বই পড়িয়া মগধ হইয়াছেন, শধে তিনি নহেন, তাঁহার বাড়িসদ্ধ সবাই-প্রকাশকের নিকট হইতে ঠিকানা জানিয়া এই পত্র লিখিতেছেন, তিনি তাহার সহিত দেখা করিতে চাহেন । দু-তিনবার চিঠিখানা পড়িল । এতদিন পরে বোঝা গেল যে, অন্ততঃ একটি লোকেরও ভাল লাগিয়াছে তাহার বইখানা। পরের প্রশংসা শুনিতে অপর চিরকালই ভালবাসে, তবে বহন দিন তাহার অদণ্টে সে জিনিসটা জোটে নাই--প্রথম যৌবনের সেই সরল হামবড়া ভাব বয়সের অভিজ্ঞতার ফলে দর হইয়া গিয়াছিল, তবুও সে আনন্দের সহিত বন্ধবোন্ধবের নিকট চিঠিখানা দেখাইয়া বেড়াইল । 隐 পরের দিন কাজল চিড়িয়াখানা দেখিল, গড়ের মাঠ দেখিল । মিউজিয়ামে অধুনালুপ্ত সেকালের কচ্ছপের প্রস্তরীভুত বৃহৎ খোলা দু'টি দেখিয়া সে অনেকক্ষণ অবাক হইয়া চাহিয়া চাহিয়া দাঁড়াইয়া কি ভাবিল। পরে অপর ফিরিয়া যাইতেছে, কাজল বাবার কাপড় ধরিয়া টানিয়া দড়ি করাইয়া বলিল-শোন বাবা - কচ্ছপ দুটোর দিকে আঙ্গল দিয়া দেখাইয়া বলিল—আচ্ছা এ দুটোর মধ্যে যদি যন্ধে হয় তবে কে জেতে বাবা ! অপদ গম্ভীর মখে ভাবিয়া ভাবিয়া বলে—ওই বা দিকেরটা জেতে।--কাজলের মনের দ্বন্দ্ব দরে হয় । কিন্তু গোলদীঘিতে মাঝের ঝাঁক দেখিয়া সে সকলের অপেক্ষা খশী। এত বড় বড় মাছ আর এত একসঙ্গে ! মেলা ছেলেমেয়ে মাছ দেখিতে জটিয়াছে বৈকালে, সেও বাবার কথায় এক পয়সার মুড়ি কিনিয়া জলে ছড়াইয়া দিয়া অধীর আগ্রহে মাছের খেল দেখিতে লাগিল ।