পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/১৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরাজিত $ర్చి —তা এ তোমার অন্যায় কাজ ভাই—তোমার এ বয়সে বিয়ে করবে না কেন ?••• তোমাকে তো এতটুকু দেখেছি, এখনও বেশ মনে হচ্ছে—ছোট্ট, পাতলা টুকটুকে ছেলেটি→ একটি ক9ি হাতে নিয়ে আমাদের ঘাটের পথের বাঁশতলাটায় বেড়িয়ে বেড়িয়ে বেড়াচ্ছ— কালকের কথা যেন সব—না না, ও কি, ছিঃ—বিয়ে কর ভাই । খোকাকে কলকাতায় রেখে এলে কেন—দেখতাম একবারটি । লীলাও উঠিতে দেয় না—অপও উঠিতে চায় না। লীলার স্বামীর সঙ্গে আলাপ করিল —ছেলেমেয়েগুলিকে আদর করিল। উঠিবার সময় লীলা বলিল—কাল আসিস অপ, নেমস্তন্ন রইল—এখানে দুপুরে খাবি। পরদিন নেমস্তন্ন রাখিতে গিয়া কিন্ত অপ লীলাদির পরাধীনতা মৰ্ম্মে মন্মে" বুঝিল—সকাল হইতে সমুদয় সংসারের রান্নার ভার একা লীলাদির উপর । কৈশোরে লীলাদি দেখিতে ছিল খুব ভাল—এখন কিন্তু সে লাবণ্যের কিছুই অবশিষ্ট নাই—চুল দু-চার গাছ এরই মধ্যে পাকিয়াছে, শীর্ণ মুখ, শিরা-বাহির হওয়া হাত, আধময়লা শাড়ি পরনে, রধিবার আলাদা ঘরদোর নাই, ছোট দালানের অন্ধেকটা দরমার বেড়া দিয়া ঘেরা, তারই ও-ধারে রান্না হয় । লীলাদি সমস্ত রাম সারিয়া তার জন্য মাছের ডিমের বড়া ভাজিতে বসিল, একবার কড়াখানা উন্ন হইতে নামায়, আবার তোলে, আবার নামায়, আবার ভাজে । আগনের তাতে মুখ তার রাঙা দেখাইতেছিল—আপ ভাবিল কেন এত কষ্ট করছে লীলাদি, আহা রোজ রোজ ওর এই কন্ট, তার ওপর আমার জন্যে আর কেন কষ্ট করা ? বিদায় লইবার সময় লীলা বলিল—কিছই করতে পারলাম না ভাই—এলি যদি এত কাল পরে, কি করি বল, পরের ঘরকন্না, পরের সংসার, মাথা নিচু ক'রে থাকা, উদয়াস্ত খাটুনিটা দেখলি তো ? কি আর করি, তবুও একটা ধরে আছি । মেয়েটা বড় হয়ে উঠল, বিয়ে তো দিতে হবে ? ঐ বটঠাকুর ছাড়া আর ভরসা নাই। সন্ধ্যেবেলাটা বেশ ভাল লাগে— দশাবমেধ ঘাটে সন্ধের সময় বেশ কথা হয়, পাঁচালী হয়, গান হয়—বেশ লাগে ! দেখিস নি ? আসিস না আজ ওবেলা—বেশ জায়গা, আসিস, দেখিস এখন । এসো, এসো, কল্যাণ হোক ।—তারপর সে আবার কাঁদিয়া ফেলিল—বলিল—তোদের দেখলে যে কত কথা মনে পড়ে—কি সব দিন ছিল— এবার অপর অতিকণ্টে চোখের জল চাপিল । আর একটি কত্তব্য আছে তাহার কাশীতে—লীলার মায়ের সঙ্গে দেখা করা । বাঙালীটোলার নারদ ঘাটে তাঁর নিজেদের বাড়ি আছে—খাজিয়া বাড়ি বাহির করিল। মেজ-বৌরানী অপকে দেখিয়া খুব আনন্দ প্রকাশ করিলেন। চোখের জল ফেলিলেন। কথাবাত্তা চলিতেছে এমন সময় ঘরে একটি ছোট মেয়ে ঢুকিল—বয়স ছয়-সাত হইবে, ফ্রকপরা কোঁকড়া কোঁকড়া চুল—অপ তাহাকে দেখিয়াই বুঝিতে পারিল-লীলার মেয়ে। কি সন্দর দেখিতে ! এত সন্দেরও মানুষ হয় ? সেনহে, মতিতে, বেদনায় অপর চোখে জল আসিল—সে ডাক দিল—শোন থাকী মা, শোন তো । খাকী হাসিয়া পলাইতেছিল, মেজ-বৌরানী,ডাকিয়া আনিয়া কাছে বসাইয়া দিলেন। সে তার দিদিমার কাছেই কাশীতে থাকে আজকাল । গত বৈশাখ মাসে তাহার বাবা মারা গিয়াছেন—লীলার মৃত্যুর পবে । কিন্তু লীলাকে সে-সংবাদ জানানো হয় নাই। দেখিতে অবিকল লীলা—এ বয়সে লীলা যা ছিল তাই । কেমন করিয়া অপর মনে পড়িল শৈশবের একটি দিনে বন্ধমানে লীলাদের বাড়িতে সেই বিবাহ উপলক্ষে মেয়ে-মজলিসের কথা—লীলা যেখানে হাসির কবিতা আব,ত্তি করিয়া সকলকে হাসাইয়াছিল—সে-ই লীলাকে সে প্রথম দেখে এবং লীলা তখন দেখিতে ছিল ঠিক এই খকেীর মত অবিকল ।