পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/১৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরাজিত ఫి8సి দর গ্রামের জাওয়া-বাঁশের বন অস্ত-আকাশের রাঙা পটে অতিকায় লায়ার পাখির পাচ্ছের মত খাড়া হইয়া আছে, একধারে খুব উচু পাড়ে সারিবাঁধা গাঙশালিকের গত্ত', কি অপব্ব" শ্যাম লতা, কি সান্ধ্য-শ্ৰী ! - কাজল বলিল—বেশ দেশ বাবা—না ? —তুই এখানে থাক খোকা—আমি যদি রেখে যাই এখানে, থাকতে পারবি নে ? তোর পিসিমার কাছে থাকবি, কেমন তো ? কাজল বলিল—হ’্যা, ফেলে রেখে যাবে বৈ কি ? আমি তোমার সঙ্গে যাব বাবা । অপর ভাবিতেছিল শৈশবে এই ইছামতী ছিল তার কাছে কি অপদ্ৰব কল্পনায় ভরা ! গ্রামের মধ্যের বষাদিনের জলকাদা-ভরা পথঘাট, বণিপাতা-পচা অটিাল মাটির গন্ধ থেকে নিকৃতি পাইয়া সে মুক্ত আকাশের তলে নদীর ধারটিতে আসিয়া বসিত। কত বড় নৌকা ওর ওপর দিয়া দর দরে দেশে চলিয়া যাইত। কোথায় ঝালকাটি, কোথায় বরিশাল, কোথায় রায়মঙ্গল—অজানা দেশের অজানা কলপনায় মন্ধে মনে কতদিন সে না ভাবিয়াছে, সেও একদিন ওই রকম নেপাল মাঝির বড় ডিঙিটা করিয়া নিরদেশ বাণিজ্যযাত্রায় বাহির হইয়া যাইবে । e ইছামতী ছিল পাড়াগাঁয়ের গরীব ঘরের মা । তার তীরের আকাশ-বাতাসের সঙ্গীত মায়ের মাখের ঘন্ম-পাড়ানি গানের মত শত নেহে তার নবর্মকেলিত কচি মনকে . মানুষ করিয়া তুলিয়াছিল, তার তীরে সে সময়ের কত আকাৰক্ষা, বৈচিত্র্য, রোমান্স,—তার তাঁর ছিল দরের অদেখা বিদেশ, বর্ষার দিনে এক ইছামতীর কুলে-কুলে ভরা ঢলঢল গৈরিক রপে সে অজানা মহাসমুদ্রের তীরহীন অসীমতার স্বপ্ন দেখিত—ইংরাজি বই-এ পড়া Cape Nunএর ওদিকের দেশটা”যে দেশ হইতে লোক আর ফেরে না—He who passes Cape Nun, will cither return or not—মধেচোখে কুলছাপানো ইছামতী দেখিয়া তখন সে ভাবিত —ওঃ, কত বড় আমাদের এই গাঙটা ! -- এখন সে আর বালক নাই, কত বড় বড় নদীর দ-কুল-ছাপানো লীলা দেখিয়াছে—গঙ্গা, শোণ, বড়দল, নম্মদা—তাদের অপশব সন্ধ্যা, অপব্ব বণসভার দেখিয়াছে—সে বৈচিত্র্য, সে প্রখরতা ইছামতীর নাই, এখন তার চোখে ইছামতী ছোট নদী। এখন সে বঝিয়াছে তার গরীব ঘরের মা উৎসব-দিনের যে বেশভুযায় তার শৈশব-কল্পনাকে মদ্ধে করিয়া দিত, এসব বনেদী বড় ঘরের মেয়েদের হীরামক্তার ঘটা, বারানসী শাড়ির রংটং-এর কাছে তার মায়ের সেই কাচের চুড়ি, শাঁখা কিছুই নয়। কিন্ত তা বলিয়া ইছামতীকে সে কি কখনো ভুলিবে ? দাপরে সে ঘরে থাকিতে পারে না । এই চৈত্রদপুরের রোদের উষ্ণ নিঃশ্বাস কত পরিচিত গন্ধ বহিয়া আনে—শকেনো বাঁশের খোলার, ফুটন্ত ঘেটুবনের, ঝরা পাতার, সোঁদা সোঁদা রোদপোড়া মাটির, নিম ফুলের, আরও কত কি কত কি,—বাল্যে এই সব দাপরে তাকে ও তাহার দিদিকে পাগল করিয়া দিয়া টো টো করিয়া শধে মাঠে, বাগানে, বাঁশতলায়, নদীর ধারে ঘরাইয়া লইয়া বেড়াইত—আজও সেই রকমই পাগল করিয়া দিল। গ্রামসদ্ধ সবাই দপরে ঘুমায়—সে একা একা বাহির হয়-উদভাস্তের মত মাঠের ঘেটুফুলেভরা উচু ডাঙায়, পথে পথে নিঝুম দ্যপারে বেড়াইয়া ফেরে—কিস্ত তব মনে হয়, বাল্যের সমতিতে যতটা আনন্দ পাইতেছে, বৰ্ত্তমানের আসল•আনন্দ সে ধরণের নয়—আনন্দ আছে, কিন্ত তাহার প্রকৃতি বদলাইয়া গিয়াছে । তখনকার দিনে দেবদেবীরা নিশ্চিন্দ্রিপরে বাঁশবনের ছায়ায় এই সব দাপরে নামিয়া আসিতেন। এক একদিন সে নদীর ধারের সগন্ধ তৃণ-ভূমিতে চুপ