পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/১৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরাজিত S&సి বকুলতলায় ? সারাদিন বকুলতলাতেই পড়ে আছি আমি, দগগা—আজকাল ছেলেমেয়েরা আর মালা গাথে না, বকুল ফুলও আর তেমন পড়ে থাকে না-কালে কালে সবই যাচ্চে । কিছু পরে জল লইয়া ফিরিবার সময়ে বলিল—এক কাজ কর না কেন অপ, সতু তো তোদের নীলমণি জ্যাঠার দরুণ জমাটা ছেড়ে দেবে, তুই কেন গিয়ে বাগানটা নিগে যা না ? তোদেরই তো ছিল—ও যা, নিজের জমি-জমাই বিক্ৰী ক'রে ফেললে সব, তা আবার জমার বাগান রাখবে—নিবি তুই ? অপ বলিল,—মায়ের বড় ইচ্ছে ছিল, রাণাদি । মরবার কিছুদিন আগেও বলত, বড় হ’লে বাগানখানা নিস অপ। আমার আপত্তি নেই, যা দাম হবে আমি দেব। প্রতি সন্ধ্যায় সতুদের রোয়াকে মাদর পাতা হয়, রানী, লীলা, অপ, ছেলেপিলেদের মজলিস বসে। সতুও যোগ দেয়, তবে তামাকের দোকান বন্ধ করিয়া আসিতে তাহার রাত হইয়া যায়। অপ বলে—আচ্ছা আজকাল তোমরা ঘাটের পথে ষাঁড়াতলায় পিঠে দাও না রাণাদি ? কই সেই ষাঁড়াগাছটা তো নেই সেখানে ? রানী বলে—সেটা মরে গিয়েছে—তার পাশেই একটা চারা, দেখিস নি সিদর দেওয়া আছে 2... - নানা পরানো কথা হয় । অপর জিজ্ঞাসা করে—ছেলেবেলায় একবার পঙ্গপালের দল এসেছিল, মনে আছে লীলাদি ?“গ্রামের একটি বিধবা যখন নববধরপে এ গ্রামে প্রথম আসেন, অপ, তখন ছেলেমানষে। তিনিও সন্ধ্যার পরে এ বাড়িতে আসেন। অপর বলে —খড়ীমা, আপনি নতুন এসে কোথায় দুধে-আলতার পাথরে দtiড়য়েছিলেন মনে আছে আপনার ? বিধবাটি বললেন—সে সব কি আর এ জন্মের কথা, বাবা ? সে সব কি আর মনে আছে ? আপদ বলে—আমি বলি শ,নন, আপনাদের দক্ষিণের উঠোনে যে নিচু গোয়ালঘরটা ছিল, তারই ঠিক সামনে । বিধবা মেয়েটি আশ্চযf্য হইয়া বলেন–ঠিক ঠিক, এখন মনে পড়েছে, এত দিনের কথা তোমার মনে আছে বাবা ! তাঁদেরই বাড়ির আর এক বিবাহে কোথা হইতে তাঁদের এক কুটুম্বিনী আসেন, খব সন্দরী—এতকাল পরে তাঁর কথা উঠে। সবাই তাঁকে দেখিয়াছিল সে সময়, কিন্তু নামটা কাহারও মনে নাই এখন " অপ বলে—দাঁড়াও রাণাদি, নাম বলছি—তার নাম সবাসিনী । সবাই আশ্চয্য হইয়া যায়। লীলা বলে—তোর তখন বয়স আট কি নয়, তোর মনে আছে তার নাম ?—ঠিক, সবাসিনীই বটে। সবারই মনে পড়ে নামটা । অপ, মদ মদ হাসিমধুে বলে—আরও বলছি শোনো, ডুরে শাড়ি পরত, রাঙা জমির ওপর ডুরে দেওয়া—না ? বিধবা বধটি বলেন,—ধন্যি বাপ যা হোক, রাঙা ডুরে পরত ঠিকই, বয়েস ছিল বাইশতেইশ। তখন তোমার বয়েস বছর আল্টেক হবে । ছাবিশ-সাতাশ বছর আগেকার কথা যে ! অপর খুব মনে আছে, অত সন্দরী মেয়ে তাদের গায়ে আসে নাই ছেলেবেলায়। সে বলিল—রাঙা শাড়ি পরে আমাদের উঠোনের"কাঁঠালতলায় জল সইতে গিয়ে দাঁড়িয়েছে, ছবিটা দেখতে পাচ্ছি এখনও । এখানকার বৈকালগুলি সত্যই অপবে। এত জায়গায় তো সে বেড়াইল, মাসখানেক এখানে থাকিয়া মনে হইল এমন বৈকাল সে কোথাও দেখে নাই। বিশেষ করিয়া বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ3 মাসের মেঘহীন এই বৈকালগুলিতে সয্য যেদিন অস্ত যাইবার পথে মেঘাবত না হয়, শেষ । রাঙা আলোটুকু পৰ্য্যন্ত বড় গাছের মগডালে, বাঁশঝাড়ের আগায় হালকা সিদরের রংঃ