পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/১৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Slyసి বিভূতি-রচনাবলী কেদার বললেন—কি ? . —টাকা তো যোগাড় করতে পারি নি আজও, কলাই বিক্ৰী না করে টাকা দিতে পারবো না । 藝 কেদার দ্বিরক্তি না করে সেখান থেকে উঠলেন । ওর মাখের বাপজী’ ডাকের পর আর কখনো তাকে কড়া তাগাদা করা চলে ? আর এক বাড়ি গিয়ে দেখলেন, তাদের বাড়িসদ্ধ সব ম্যালেরিয়া জনরে পড়ে। শুধ রোগের সবধে নানা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে সেখান থেকে তিনি বিদায় নিলেন । পথে বেলা বেশি হয়েছে। এক দিনের পক্ষে যথেষ্ট বিষয়কম” করা হ’ল—বেশি খাটতে তিনি রাজী নন—বাড়ির দিকে ফিরবার জন্যে সড়কে উঠেছেন, এমন সময় একজন বন্ধের সঙ্গে দেখা হ’ল । বন্ধ লোকটির পরনে আধময়লা থান, গায়ে চাদর, হাতে একটা বড় ক্যাবিসের ব্যাগ। তাঁকে দেখে লোকটি জিজ্ঞেস করলে, হ’্যা মশাই, গড়শিবপুর যাবো কি এই পথে ? —গড়শিবপুরে কোথায় যাবেন ? —ওখানকার রাজবাড়ির অতিথিশালা আছে—শনলাম, সকলে বললে। অনেক দর থেকে আসছি, অতিথিশালায় গিয়ে আজ আর কাল থাকবোঁ । —গড়শিবপুরের রাজবাড়ি ? কে বলে দিয়েছে ? আচ্ছা, চলন নিয়ে যাই, আমার সঙ্গে চলন— কেদারের বাড়ির অতিথিশালা পাবপুরুষদের আমল থেকেই আছে—সেই নামডাকেই এখনও গ্রামে অপরিচিত বিদেশী লোক এলে কেদারের বাড়ি অতিথি হতে আসে। নিজে খেতে না পেলেও পৰব'-আভিজাত্যের গৌরব স্মরণ করে কেদার তাদের থাকবার খাবার বন্দোবস্ত করে দিয়ে আসছেন বরাবর । কখনও তাদের ফিরিয়ে দেন নি এ-পয্যন্ত । থাকবার জায়গার অসুবিধা বলে কেদার কাছারীবাড়ির উঠানে অতিথির জন্যে একখানা ছোট দো-চালা খড়ের ঘর তৈরী করে দিয়েছেন অনেক দিন থেকে। খড় পরানো হয়ে জল পড়তে শর করলে কেদার নিজেই চালে উঠে নতুন খড়ের খচি দেন । এই ঘরখানার নামই অতিথিশালা । কেদারকে বিপন্ন হয়ে পড়তে হয় যখন হঠাৎ অতিথি এসে জোটে অতিথিশালায়, হয়তো নিজের ঘরেই সেদিন চাল বাড়স্ত—কিন্তু অতিথিকে যোগান দিতেই হবে। অনেক সময় গ্রামের লোক দুটুমি করেও কেদারের অতিথিশালায় অতিথি পাঠিয়ে দেয়, সকলেই জানে কেদারের অবস্হা-মজা দেখবার লোভ সামলানো যায় না সব সময় । সাধারণ অতিথিকে দিতে হয় এক বোঝা কাঠ ও এক সের চাল, সামান্য কিছল নন আর তেল। তরকারী হিসাবে দু-একটা বেগন। এর বেশী কিছু দেবার নিয়ম নেই পর্বকাল থেকেই—কেদারও তাই দিয়ে আসছেন । তবে ভদ্র-অতিথি এলে অন্যরকম ব্যবস্থা । নিয়ম আছে দধি, ঘি, সৈন্ধব লবণ, মিছরিভোগ, আতপ চাল, মাগের ডাল ইত্যাদি তাকে যোগাতে হবে । কেদারের বক্তমান অবস্হায় সে-সব কোথায় পাওয়া যাবে—কাজেই নিজের ঘরে রোধে তাদের খাওয়াতে হয়— ষতই অসুবিধা হোক, উপায় নেই । মাসের ভিতর পাঁচদিনও শরৎকে অতিথিসেবা করতেই হয় । আজ কেদার একটু অসুবিধায় পড়লেন । ঘরে এমন কিছু নেই যা অতিথিশালায় পাঠাতে পারেন । লোকটি কি শ্রেণীর তা এখনও তিনি বুঝতে পারেন নি, সাধারণ শ্রেণীর বলেই মনে হচ্ছে । অন্ততঃ আধসের চালও তো দিতে হয়, কি করা যাবে সে-সম্বন্ধে পথ হাঁটতে হাঁটতে কেদার সেই কথাই ভাবতে লাগলেন ।