পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/১৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

なげ9 বিভূতি-রচনাবলী কেদার বোধ হয় একটু দীঘনিঃশ্বাস ফেললেন কি ভেবে। গোপেশ্বর চাটুজে কেদারের সঙ্গে বাড়ির চারদিক বেড়িয়ে বেড়িয়ে দেখলেন। গড়ের ঐপারে ওপারে যে সব প্রাচীন ধবংসস্তুপ বনের আড়ালে আত্মগোপন করে রয়েছে, তার সব গলির ইতিহাস কেদারেরও জানা নেই। একটা পাথরের হাত-পা ভাঙা মাত্তি'র চারিদিকে নিবিড় বেতবন । গোপেশ্বর বললেন, এ কি মাত্তি ? কেদার বলতে পারলেন না। বিভিন্ন মত্তি চিনবার বিদ্যা নেই তাঁর। বাপ-পিতামহের আমল থেকে শনে আসছেন এখানে যে মৃত্তি আছে, অনেক দিন আগে মুসলমানদের আক্রমণে তার হাত পা নষ্ট হয়—কেউ বলে কালাপাহাড়ের আক্রমণে ;–এ সব কিছ নয়, আসল কথা কেউ কিছ জানে না। বিস্মত অতীত কোন ইতিহাস লিখে রেখে যায় নি গ্রামের মাটির বকে—সময় যে কি সদরপ্রসারী অতীত ও ভবিষ্যৎ রচনা করে মানষের সমতিতে, সে গহন রহস্য এসব গ্রামের লোকের কল্পনাহীন মনে কখনও তার উদার ছায়াপাত করে নি, পঞ্চাশ বছর আগে কি ঘটেছিল গ্রামে, তাও তারা যখন জানে না—তখন ঐতিহাসিক অতীতের কাহিনী তাদের কাছে শনিবার আশা করা যায় কি করে ? গড়ের বাইরে এসে বেদার একটা প্রাচীন বটগাছ দেখালেন। কেদারের বাড়ি থেকে জায়গাটা অনেক দর। গাছটার তলায় প্রাচীন আমলের বড় বড় শিবলিঙ্গ, গৌরীপট্ট, মকরমুখ পয়োনালা ইত্যাদি এখানে ওখানে পড়ে আছে মরণাতীত কাল থেকে—গ্রামের কেউ বলতে পারে না সে-সব কোথা থেকে এল । বন্ধ গোপেশ্বর চাটুঞ্জে এসব দেখে সেই ধরণের আনন্দ পেল, অধিকতর সচ্ছল অবস্থার ভ্রমণকারী দিল্লী আগ্রার মুঘলের কীত্তি’ দেখে যে আনন্দ পায় । কেদারকে বললে, রাজা মশায়, যা দেখলাম আপনার এখানে, জীবনে কখনও দেখি নি । দেখবার আশাও করি নি—এসব জিনিস কতকালের, যুধিষ্ঠির ভীম অর্জনের সময়কার বোধ হয় ৷ পান্ডবদের রাজ্য ছিল এখানে—না ? সেই রাত্রে বন্ধের জর হ’ল । পরদিন সকালে কেদার অতিথিশালায় এসে দেখলেন বিছানা থেকে উঠবার ক্ষমতা নেই বন্ধের । সারাদিন জর ছাড়ল না—সন্ধ্যার পরে তার ওপর আবার ভীষণ কল্প দিয়ে জর এল । কেদার পড়ে গেলেন মশকিলে । তাঁর বাইরে যাওয়া একেবারে বন্ধ হয়ে গেল । সধবােদা রোগীর কাছে থাকতে হয়, কখনও তিনি কখনও শরৎ । সাতদিন এভাবে কাটল । কেদার পাশের গ্রাম থেকে,সাতকড়ি ডাক্তারকে এনে দেখালেন, বন্ধের জ্ঞান নেই—তার বাড়ির ঠিকানাটা জেনে নিয়ে একখানা চিঠি দেবেন তার আত্মীয়স্বজনকে, তার সযোগ পেলেন না কেদার। শরৎ যথেষ্ট সেবা করলে এই বিদেশী অতিথির । ঠিক সময়ে দটি বেলা বন্ধের পথ্য প্রস্তত করে নিজের হাতে তাকে খাইয়ে আসা, বাপের স্নানাহারের সংযোগ দেবার জন্যে নিজে রোগীর পাশে বসে থাকা, নিজের বাবার অসুখ হলেও শরৎ বোধ হয় এর চেয়ে বেশী করতে পারত না । ন'দিনের পর বন্ধের জর ছেড়ে গেল। পথ্য পেয়ে আরও এক সপ্তাহ বন্ধ রয়ে গেল অতিথিশালায়—কেদার কিছুতেই ছাড়লেন না, এ অবস্হায় তিনি অতিথিকে পথে নামতে দিতে পারেন না। বাড়িতে চিঠি দিতে চাইলে বন্ধ ঘোর আপত্তি তুললে । বললে, কেন মিছে ব্যস্ত করা তাদের ? শী নেই, মেয়ে নেই—থাকবার মধ্যে আছে ছেলে দটি আরছেলের বোঁয়েরা—তাদের অবস্হা ভালও নয় বিশেষ, তাদের বিব্রত করতে চাই নে। পরের সপ্তাহে বন্ধ বিদায় নিয়ে চলে গেল। শরৎ পায়ের ধলো নিয়ে প্রণাম করতে