পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/২১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কৈদার রাজা సీSS রাজলক্ষী উদাস নয়নে অন্য দিকে চেয়েছিল। শরৎদিদির কথায় তার মনে কত অভূত ছবি জেগে উঠেছে। আজ বছর দুই আগে পিসেমশায় একটি বিয়ের সম্মবন্ধ এনেছিলেন তার জন্য—ছেলেটি কলকাতায় চাকরি করতো । চল্লিশ টাকা মাইনে । বেড়ে নাকি হতে পারে একশো টাকা । তাদের পৈতৃক বাড়ি কোন্নগর, চাকরি উপলক্ষে কলকাতায় আছে অনেক ििन । সম্মবন্ধটা রাজলক্ষীর মনে ধরেছিল । ছেলেটিও দেখতে নাকি ভালই ছিল। কি দেনাপাওনার গণডগোলে সম্বন্ধ ভেঙে গিয়েছে । মাস দুই ধরে কথাবাত্তা চলবার ফলে রাজলক্ষীর মন অনেকবার নানা রঙীন স্বপ্ন বনেছিল সেটাকে ঘিরে। কখনো যে কলকাতা সে দেখে নি এবং হয়তো দেখবেও না কখনো ভবিষ্যতে—সেই কলকাতা শহরের একটা বাড়ির দোতলার ঘরে খাট টেবিল চেয়ার সাজানো তাদের ঘরকন্না, দালানের এক কোণে ছোট্ট একটি খাঁচায় টিয়া কি ময়না পাখী, মাটি-দেওয়া টিনের টবে তুলসী গাছ, একটা ঘেরাটোপ-মোড়া সেলাইয়ের কল টেবিলের একপাশে—নিস্তষধ দ,পরে বসে সে হয়তো কিছ একটা বনছে কি সেলাই করছে—উনি গিয়েছেন আপিসে– বাসায় বশর-শাশুড়ী বা ও ধরণের কোনো ঝামেলা নেই—সে আছে একাই—নিজেকে কত মনে মনে সেই কলপনীয় ঘরকন্নাটিতে ডুবিয়ে দিয়েছে সে, সে ঘরেরখ:#টনাটি কত কি পরিচিত হয়ে উঠেছিল তার মনের মধ্যে—দেখলেই যেন চিনে নিতে পারতো ঘরটা—কিস্ত কোথায় কি হয়ে গেল, সে ঘরে গিয়ে ওঠা তার আর ঘটে উঠল না । শরৎ দিদির কথায় সে অলপক্ষণের জন্যে অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিল, শেষের দিকের প্রশ্নের মানে সে ভাল করে না বঝে শনাদটিতে শরতের মুখের দিকে চেয়ে বললে—কি বললে শরৎদি ? মজা ?“ও, মজা হবে না আবার ? খাব হবে । সত্যি কথা বলতে কি, এখান থেকে যেখানে বেরবে সেখানেই ভাল লাগবে । একঘেয়ে দিন যেন আর কাটতে চায় না । অসহ্য হয়ে উঠছে দিন দিন। দ,পরে যে তোমার এখেনে নিশ্চিন্দি হয়ে বসবো তার উপায় নেই । এতক্ষণ কাকীমা ঘুম থেকে উঠলেন, যদি দেখেন এখনও এটো বাসন মাজা হয় নি, রান্নাঘর ধোয়া হয় নি, তবে সন্দে পশুজন্ত বকুনি চলবে । শরৎ হাসিমুখে বললে, তা হলে তুই ঝগড়া করে এসেছিস বাড়ি থেকে, ঠিক বললাম। হ’্যা কি না বল ? 魯 রাজলক্ষয়ী চুপ করে রইল । শরৎ বললে, তাই বুঝলাম এতক্ষণ পরে । নইলে ঠিক দপুর বেলা তুমি আসবার মেয়েই আর কি ! ভাত খেয়ে এসেছিস না আসিস নি, সত্যি কথা বল—েআমার মাথার দিব্যি— আমার মরা মুখ দেখিস— o —না তা নয়। তেমন ঝগড়া নয়। ভাত থেয়েছি বৈকি— —সত্যি বলছিস ? 尊 —মিথ্যে কথা বলবো না শরৎদি, তুমি যখন অমন দিব্যি দিলে । না, সে খাওয়ার কথা নিয়ে নয়—ঝগড়া নিয়েও নয়, সত্যিই এত একঘেয়ে হয়ে উঠেছে এখানে—ইচ্ছে হয় যেদিকে দ-চোখ যায় ছুটে যাই— to —সত্যি, যা বলিল ভাই, আমারও বড় একঘেয়ে লাগে । সেই সকাল থেকে বিকেল পৰজন্ত একই হাঁড়ি-হেসেল নিয়ে নাড়ছি, আর একই দীঘির ঘাটে সতেরো বার দোঁড়চ্ছি, তার পর কেবল নেই আর নেই— কিন্ত তরণী রাজলক্ষীর মন যা চায়, যে জন্যে ব্যাকুল—শরৎ তা ঠিক বুঝতে পারে নি। রাজলক্ষীও ঠিকমত বোঝাতে পারে না, তাই নিয়েই তো আজ বাড়িতে কাকীমার