পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/২১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২১৬ বিভূতি-রচনাবলী একবার দুই সখীর মধ্যে কথাবাত্তাও হয়েছে। আজও শরৎ বললে—ভালো কথা, রাজলক্ষী—আসল ব্যাপারের কি করবি বল— রাজলক্ষী না বুঝতে পারার ভান করে বললে—কি ব্যাপার আসল ? —তোকে যে-কথা সেদিন বললাম। সাঁতরা পাড়ার সেই সম্বন্ধটা— রাজলক্ষী মনে মনে থশী হয়ে উঠল । মুখে বললে—যাঃ, আর ও-সবে দরকার নেই। বেশ আছি । কেন তাড়িয়ে দেবে শরৎদি ? —না ও-সব চালাকি রাখ দিকি । এখন আমায় বল, বাবাকে কি বলবো । যার সঙ্গে বিবাহের প্রস্তাব উঠেছে তার সম্বন্ধে সব কথা রাজলক্ষী ইতিপবে দ্বার শুনেছে শরতেরই মুখে—তবুও তার ইচ্ছে হল আর একবার সেকথা শোনে । শনতে লাগে ভালই। তবুও কিছল নতনত্ব । সে তাচ্ছিল্যের সরে বললে, ভারি তো সম্মবন্ধ ? ছেলে কি করে বলেছিলে ? শরৎ বললে, নৈহাটিতে পাটের কলে চাকরি করে, শুনেছি মাকে নিয়ে নৈহাটিতেই বাসা করে থাকে । রাজলক্ষী ঠোঁট উলটে বললে, পাটের কলে আবার চাকরি ! তুমিও যেমন - রাজলক্ষী কথাটা বললে বটে, কিন্তু তার মনে হল এ সম্প্রবন্ধ খারাপ নয় । ছেলেটির বিষয়ে আরও কিছ জানবার তার খব কৌতুহল হল, কেমন দেখতে, কত টাকা মাইনে পায়, বাড়িতে আর কেউ আছে কিনা ৷ শরৎ কিন্ত সে দিক দিয়েও গেল না। বললে, তা তো বুঝলাম, তোর খুব উচু নজর । কিন্ত জজ মেজেস্টার পাত্র এখন পাওয়া যাচ্ছে কোথায় বল ? অবস্হা বুঝে তো ব্যবস্হা ? কি মত তোর ? 叠 রাজলক্ষী চুপ করে থেকে বললে, ভেবে বলবো শরৎদিদি—আচ্ছা কি পাশ বলেছিলে যেন সেদিন ? খানিকক্ষণ এ-সম্বন্ধে কথা চলে যদি, বেশ লাগে । —শরৎ বলে ম্যাট্রিক পাশ । —মোটে ! —অমন কথা বলিস নে । দু-তিনটে পাশ পারকি পাওয়া সহজ ? এতগুলো টাকা চাইবে । శ్రా —আচ্ছা, পাটের কল কি রকম শরৎদি ? শরৎ হেসে বললে, আমি তো আর দেখি নি কখনো তোরও পরের মুখে ঝাল খাওয়ার দরকার কি, একেবারে নিজের চোখেই তো দেখবি । —যাঃ, শরৎদি যেন কি ! শরৎ হাসতে হাসতে বললে, আচ্ছা শোন, তুই যে বলছিস ম্যাট্রিক পাশ কিছুই না— দ-তিনটে পাশ ছেলের সঙ্গে তোর বিয়ে দিলে তুই কথা বলতে পারবি তার সঙ্গে ? —কেন পারবো না, দেখে নিও— গল্পে দুজনে উন্মত্ত, কখন ইতিমধ্যে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে, বাইরে বেশ অন্ধকার নেমেছে, .ওরা খেয়ালই করে নি। ছাতিমবনে শেয়াল ডেকে উঠলে ওদের চমক ভাঙলো । রাজলক্ষী ব্যস্ত হয়ে বলে উঠল, ও শরৎদি, একেবারে অন্ধকার হয়ে গেল যে ! আমি কি করে ঘাবো ? —বোস না । বাবা এলে তোকে বাড়ি দিয়ে আসবেন এখন । --না শরৎদি আমি যাই, তুমি গড়ের খাল পার করে দিয়ে এসো আমায়—বাকী পথ ঠিক