পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/২২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

੨੨੪ বিভূতি-রচনাবলী রাজলক্ষয়ীকে বলে পাঠালো একবার দেখা করতে । * দর্পরের পর রাজলক্ষী এসে বললে, কি শরৎ দিদি, ডেকেছিলে কি জন্যে ? —বাবা গিয়েছেন তালপুকুরে খাজনা আদায় করতে, আমাদের বাড়ি দ-দিন রাত্রে শবি ? - রাজলক্ষী বললে, মা থাকতে না দিলে তো থাকা হবে না। আচ্ছা, বলে দেখবো এখন । —এইখানেই খাবি কিন্তু এবেলা— —ওই তো তোমার দোষ শরৎদি, কেন বাড়ি থেকে খেয়ে আসতে পারি নে ? —পারবি নে কেন । তবে দুজনে মিলে খেলে বেশ একটু আনন্দ পাওয়া যায়। খাবি ঠিক বললাম কিন্তু । দ,পরের অনেক পরে রাজলক্ষী এসেছে। বেলা প্রায় গড়িয়ে বিকেল হয়ে এল। পর্তুরঘাটে ছাতিমবনের দীঘ ছায়া পড়ে গিয়েছে, যখন ওরা দুজনে পুকুরঘাটে এসে বসলো । মুখে নিদেশে যাবার যত ইচ্ছেই ওরা প্রকাশ কর্ক, এই গ্রাম ওদের অস্তিত্বের সঙ্গে নিবিড় ভাবে জড়িয়ে গিয়েছে এর ছাতিম ফুলের উগ্র স্বাস নিয়ে, ঘাঘ ও ছাতারে পাখীর ডাক নিয়ে, প্রথম হেমন্তে গাছের ডালে ডালে আলকুশী ফলের দলনি নিয়ে—এর সমস্ত রােপ, রস, গন্ধ নিয়ে । শরৎ যখনই এই দীঘির বাঁধা ঘাটের পাড়ে বসে ছাতিমবনের দিকে তাকায়, তখন মনে হয় ওর, সে কত যুগ থেকে এই গ্রামের মেয়ে, তার সমস্ত দেহশন-চেতনাকে আশ্রয় করে আছে এই ভাঙা গড়বাড়ি, এই কালো পায়রার দীঘি, এই পুরনো আমলের মন্দিরগুলো, এই ছাতিমবন, ইটের স্তপে । ঋতুতে ঋতুতে ওদের পরিবত্তনশীল রূপ ওর মন ভুলিয়েছে । শরৎ অত ভাল করে বোঝে না, ঋতুর পরিবত্তন সম্বন্ধে তার মন তত সজাগ নয়, তবুও ভাল লাগে। বধি দিয়ে না বুঝলেও অন্য একটা অনুভুতি দিয়ে তার মন এর সৌন্দয"কে নিতে পারে । শরং পুকুরপাড়ে বাসন নামিয়েই বললে, রাজলক্ষয়ী, পাতাল-কেড়ি তুলে আনবি ? ওই উত্তর দেউলের ওদিকের জঙ্গলে সেদিন অনেক ফুটেছিল—চল দেখে আসি । —এখন বষাকাল নয়, এখন বুঝি পাতাল-কেড়ি ফোটে । —ফুটে বনের তলা আলো করে আছে, বলে ফোটে না ! চল না দেখবি— —আমার বড় ভয় করে শরৎদি ও বনে যেতে, তুমি চলো আগে আগে— বাসন সেখানেই পড়ে রইল। গড়শিবপরে এ পর্যন্ত কোন জিনিস ফেলে রাখলে চুরি যায় নি। কতদিন এমন দীঘির ঘাটে এটো বাসন জলে ডুবিয়ে রেখে চলে যায়, সারা রাত হয়তো পড়ে থাকে—তার পরদিন সকালে সে-সব বাসন মাজা হয়—একটা ছোট তেলমাথা বাটিও চুরি যায় নি। শরৎদির ঘরে বেশি জায়গা নেই বলে কত জিনিসপত্র বাইরেই পড়ে থাকে দিনরাত । শুধ গড়ের মধ্যে বলে যে এমন তা নয়, এ-সব পল্লী অঞ্চলে চোরের উপদ্রব আদৌ নেই । ঘন নিবিড় বনের মধ্যে ঢুকে রাজলক্ষীর গা ছমছম করতে লাগল। শরৎদি শক্ত মেয়েমানুষ, ওর সাহস বলিহারি—ও সব পারে। বাবাঃ, এই বনে মানুষ ঢোকে পাতালকোঁড়ের লোভে ? —ও শরৎ দিদি, সাপে খাবে না তো ? তোমাদের গড়ের ইটের ফাটলে ফাটলে সাপ বাবা— শরৎ কৃত্রিম কোপের সঙ্গে বললে, অমন করে আমার বাপের বাড়ির "নিন্দে করতে দেবো না তোকে—আমাদের এখানে যদি সাপ থাকতো তবে আমায় এতদিন আস্ত থাকতে হত না । আমার মতো বনে-জঙ্গলে তো তুমি ঘোরো না ! কি বষ", কি গরমকাল, ঝড় নেই, বটি