পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৩৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ల80 বিভূতি-রচনাবলী শরৎ চমকে উঠে বললে—টুঙি-মাজদে ! কই সে চিঠি ? —আছে বোধ হয়, বাড়িতে খুজে দেখবো । তোমরা তখন এখানে ছিলে না—আমি রেখে দিয়েছিলাম— —কতদিন আগে ? —তা ছ-সাত মাস কি তার বেশিও হবে । গত বোশেখ মাসে বোধ হয়। আচ্ছা শরৎদি, ওখানে তোমার বশরেবাড়ি—নয় ? শরৎ অন্যমনকভাবে বললে, হাঁ । একটুখানি চুপ করে কি ভেবে বললে, কে দিয়েছিল জনিস ? —খামের চিঠি । আমি খুলে দেখি নি—কে আছে তোমার সেখানে ? শরৎ দীঘনিঃশ্বাস ফেলে বললে, নিয়ে আসিস চিঠিখানা দেখবো। কিছুক্ষণ দুজনেই চুপচাপ। তারপর রাজলক্ষী বললে, খাও শরৎদি, সন্দে হয়ে আসছে— —নারকোল কেটে দেবো আর একটু ? —না, তুই খেয়ে নে। উত্তর দেউলে সন্দে দেখিয়ে আসতে হবে— —এখনও রোদ রয়েছে গাছের ডগায়, অনেক দেরি এখনো। খেয়ে নাও না— —আমি আর থাবো না এখন । —তুমি না খেলে আমার এই রইল— —না, না, আচ্ছা খাচ্ছি আমি—নে তুই । কাঁচা লঙ্কা একটা নিয়ে আসি– উত্তর দেউল থেকে সন্ধ্যা-প্রদীপ দিয়ে কিছুক্ষণ পরে ওরা ফিরছিল। কালোপায়রা দীঘির ওপাড়ের ঘন জঙ্গলে সেখানে ছাতিম ফুল ফুটে হেমন্তসন্ধ্যার বাতাস সবাসিত করে তুলেছে। শ্যামলতার লম্বা কালো ডাঁটায় কুচে কুচো স্যগন্ধ ফুল প্রত্যেক বৰ্ষাপটে রোপের মাথায় ৷ পায়ে চলার পথ গত বর্ষার ঘাসে ঢেকে আছে, ভাঙা ইটের স্তপে শেওলা জনেeে. গড়ের জঙ্গল ঘন কালো দেখাচ্ছে আসন্ন সন্ধ্যার অন্ধকারে । রাজলক্ষীকে বাড়ি ফিরতে হবে বলে ওরা সম্প্রধ্যা-প্রদীপ দেখানোর কাজ বেলা থাকতে সেরে এল । শরৎ বললে, অনেক মেটে আলী হয়ে আছে বনে, আজ দু-বছর এদিকে আসি নি— —তুলবে একদিন শরৎদি ? আমিও আসবো— wn বাড়ি গিয়ে শরৎ বললে, চল তোকে একটু এগিয়ে দিয়ে আসি—গড়ের খাল পয্যন্ত যাই । জল নেই তো খালে ? রাজলক্ষী হেসে বললে, কোথায় ? বষায় সামান্য জল হয়েছিল, শুকিয়ে গেছে। —থাক না কেন আজ রাতটা ? একা থাকবো ? —বাড়িতে বলে আসি নি যে শরৎদি—নইলে আর কি। আচ্ছা কাল রাত্রে বরং থাকবো। বাড়িতে বলে আসতে হবে কিনা ? রাজলক্ষসীকে এগিয়ে দিয়ে ফিরে আসবার পথে শরৎ একটা কাঠের গড়র ওপর বসলো । হেমস্তের সাধ্য বাতাস কত কি বন্য পপ, বিশেষতঃ বনমরচে ও শ্যামলতার পপের সবাসে ভারাক্লাস্ত । দেউড়ির ভাঙা ইটের ঢিবির সম্বর এ-সময় বনমরচে লতায় ছেয়ে গিয়েছে, পরোনো রাজবাড়ি, লক্ষীছাড়া দৈন্য তাদের শামশোভায় আবত করে রেখেছে। রাজকন্যার সম্মান রেখেছে ওরা সেভাবে । কি হবে এখনি ঘরে ফিরে ? বেশ লাগে বাইরের বাতাস ৷ ভয় নেই ওর মনে, যা ছিল তাও চলে গিয়েছে। তা ছাড়া ভয় কিসের ? সবাই বলে ভুত আছে, অপদেবতা আছে ।