পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৩৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যাত্রাবদল లీటసి রং না-ফস" না-কালো। পাণবাব কম মাইনে পেত, এখানে কোন রকমে চালিয়ে বাড়িতে তার কিছর টাকা না পাঠালেই চলবে না—কাজেই তার পরনে ভাল জামা-কাপড় একদিনও দেখি নি। পাণবাব নিজে রোধে খেত। একদিন তার খাবার সময় হঠাৎ গিয়ে পড়েচি— দেখি পুণবাব খাচ্চে শধ্যে ভাত—কোন তরকারী, কি শাক, কি আলভাতে—কিছল না, কেবল একতাল সবুজ পাতালতা বাটা-ওষধের মত দেখতে—কি একটা দ্রব্য ভাতের সঙ্গে মেখে মেখে খাচ্চে । জিজ্ঞাসা করে জানলাম, সবুজ রঙের দ্রব্যটা কাঁচা নিমপাতা বাটা । পাণবাব একটু অপ্রতিভের সরে বললেন, নিমপাতা-বাটা এত উপকারী, বিশেষ করে লিভারের পক্ষে । ভাত দিয়ে মেখে যদি খাওয়া যায়—আমি আজ দু’বছর ধরে—আজ্ঞে দেখবেন খেয়ে, শরীর বড় ঠা-ডা—তা ছাড়া কি জানেন, লোভ যত বাড়াবেন ততই বাড়বে— উপকারী দ্রব্য তো অনেকই আছে, ডাল ঝোলের বদলে কুইনাইন মিকশচার ভাতের সঙ্গে মেখে দ-বেলা খাওয়ার অভ্যেস করতে পারলে দেশের ম্যালেরিয়া সমস্যার একটা সসমাধান হয়, তাও স্বীকার করি । কিন্ত জীবনে বড় বড় উপদেশগুলো চিরকাল লঙ্ঘন করে চলে এসে এসে আজ নীতি ও মধাস্হ্য-পালন সম্বন্ধে এত বড় একটা সজীব আদশ চোখের সামনে পেয়ে খানিকক্ষণের জন্যে নিৰবাক হয়ে গেলাম। আর একদিন দু-দিন নয়, দু-বছর ধরে চলচে এ ব্যাপার । - একদিন পণেবাব নিজের জীবনের অনেক কথা বললেন । কলকাতায় তাঁদের বাড়ি, ভবানীপুরে । তাঁর একজন পিসিমা আছেন, একটু দরে সপকের ৷ সেই পিসিমার মৃত্যুর পরে তাঁর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবেন পাণবাব । কিন্ত পিসিমা মরি-মরি করচেন আজ ত্রিশ-পয়ত্রিশ বছর। পুণবাবর বিবাহ হয় বাগবাজারে সম্প্রান্ত বংশের মেয়ের সঙ্গে—তবে তখন তাদের অবস্হা খুব ভাল ছিল না । পুণবাবদের পৈতৃক বাড়িও নেই কলকাতায়, ভবানীপুরে খাব আগে নাকি প্রকাণ্ড বাড়ি পুকুর ছিল, এখন তাঁদের দ-পরষে ভাড়াটে বাড়িতে থাকে। পণ"বাবর আঠার-উনিশ বছর বয়সে পিতৃবিয়োগ হয়, তিনি ছেলের জন্য শুধ যে কিছু রেখে যান নি তা নয়, ছেলেটিকে লেখাপড়াও শেখান নি। কারণ তিনিও জানতেন এবং সবাই জানত যে তার দরকার নেই, অতবড় সম্পত্তির যে মালিক হবে দু-দিন পরে—তার কি হবে লেখাপড়ায় ? ছেলেটিও জ্ঞান হওয়া পয্যন্ত তাই জানতে বলে লেখাপড়া শেখবার কোন চেণ্টাও ছিল না । পুণবাবর খবশরেও তাই ভেবে মেয়েকে ঐ গরীব ঘরে দিয়েছিলেন । পাণবাবর বাবা তো মারা গেলেন, পাণবাবর ঘাড়ে রেখে গেলেন সংসার,নব-বিবাহিতা পত্রবধু, অলপ কিছু দেনা । কিন্ত পুণবাবর ক্রেডিট তখন পরোমাত্রায়—কি বাজারে কি বন্ধবোধব মহলে ৷ টাকা হাত পাতলেই পাওয়া যায়—ধারে দোকানে জিনিস পাওয়া যায়, নিত্য নতন বন্ধ জোটে । পুণবাব খুশী, পাণবাবর তরণী বৌ খাশী, আত্মীয়-স্বজন খুশী, বন্ধুবান্ধব খুশী । কারণ, সবাই জানে বড়ী আর ক'দিন ? না হয় মেরে কেটে আর পাঁচটা বছর । অবিশ্যি পণ”বাবরে তখন বয়স অনেক কম, সংসারের কিছুই বোঝেন না, জানেন না— মনে উৎসাহ, আশা অদম্য, আনন্দের উৎস–চোখের সামনে দীপ্ত রঙীন ভবিষ্যৎ—ষে ভবিষ্যতের সর্বন্ধে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই, আশংকা নেই, যা একদিন হাতের মুঠোয় ধরা দেবেই—এ অবস্হায় যে যা বুঝিয়েচে পাণবাব তাই-ই বঝেচেন, টাকাকড়ি ধার করে দহাতে উড়িয়েচেন, বন্ধবোন্ধবদের সাহায্যও করেচেন, ধারে যতদিন এবং যতটা নবাবি করা চলে, বাকী রাখেন নি । f 和 o一ss