পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৩৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

උඳ8 বিভূতি-রচনাবলী বড় বড় বিলিতি দোপাটি, মতিয়া, বেল, অতসীলতা, রাস্তার ধারের সারিতে নানা ধরনের পাম, ছোট ছোট পাম থেকে ফ্যান পাম ও বড় টবে ভাল এরিকা পামও আছে। সয‘্যমুখীর যদিও এ সময় নয়, কিন্তু সময‘মুখী এসেছে অনেক । তাছাড়া কলকাতার রাস্তায় অনভিজ্ঞ লোকদের কাছে অকি'ড বলে যা বিক্ৰী হয়, সেই নারকোলের ছোবড়া ও তার-বাঁধা ফান ও রঙীন আগাছা যথেষ্টট বিক্ৰী হচ্ছে । লোকের ভিড়ও বেশ । হঠাৎ দেখি আমার অনেকদিন আগেকার পরোনো রুমমেট হিমাংশ । ৭৩ নং কানাই সরকারের লেনে মেসে তার সঙ্গে অনেক দিন একঘরে কাটিয়েছি । সে আজ সাত আট বছর আগেকার কথা--তারপর সে কলকাতা ছেড়ে চলে যায় । আর তার কোনো খবর রাখি নি আজকাল । —এই যে হিমাংশ ? চিনতে পারো ? হিমাংশ চমকে পেছন ফিরে চাইলে এবং কয়েক সেকেণ্ড সবিস্ময়ে আমার দিকে চেয়ে থাকবার পরে সে আমায় চিনলে । হাত বাড়িয়ে এগিয়ে এল হাসিমুখে । —আরে জগদীশবাব যে ! তারপর ? ওঃ আপনার সঙ্গে একযুগ পরে—ওঃ ! তারপর আছেন কেমন বলুন ! “ আমি বল্লাম—তোমার গাছপালার শখ দেখচি আছে হিমাংশ, সেই মনে আছে দুজনে কতদিন এখানে হাটে আসতাম ? হিমাংশ হেসে বল্লে—তা আর মনে নেই ?—সেই আপনি দাsিজলিংয়ের লিলি কিনলেন ? আপনার তো খুব শখ ছিল লিলির । এখনও আছে ? আসন, আসন, অন্য কোথাও গিয়ে একটু বসি । ও মেসটার কোনো খবর আর রাখেন নাকি ? আচ্ছা সেই অনাদিবাব কোথায় গেল খোঁজ রাখেন ? - আর সেই যে মেয়েটি স্টোভ জালাতে গিয়ে গা হাত পড়িয়ে ফেল্পে মনে আছে ? তার বিয়ে হয়েচে ? দুজনে গিয়ে একটা চায়ের দোকানে বসলাম । এ গল্প ও গল্প—নানা পরোনো দিনের কথা । তার কথাবাত্তার ভাবে বঝেলাম সে কলকাতায় এসেচে অনেক দিন পরে । জিজ্ঞেস কল্লাম—আজকাল কোথায় থাকো হিমাংশ ? সে বল্লে—বি. এন. আর-এর একটি স্টেশনে বাকিং-ক্লাক ছিলাম। টাটানগরের ওদিকে, কিছুদিন থাকবার পর দেখলাম জায়গাটার মাটিতে ভারী চমৎকার ফুল জন্মায়, জমিও সন্তা । সেখানেই এখন আছি—ফুলের বাগান করেচি–তুমি তো জানো বাগানের শখ আমার চিরকাল । কিছল চাষবাসের জমি নিয়েচি তাতেই চলে যায়। কিন্তু সে-সব কথা থাক— আজ এখন একটা গলপ করি শোনো । গলেপর মত শোনাবে, কিন্তু আসলে সত্যি ঘটনা । আর আশ্চয" এই, দশ বছর আগে যখন তোমাদের মেসে থাকতাম তখন এ গল্পের শর, এবং এর সমাপ্তি ঘটেছে গতকাল । আমি বোল্লাম—ব্যাপার কি, তোমার কথা শুনে মনে হচ্চে নিশ্চয়ই প্রেমের কাহিনী জড়ানো আছে এর সঙ্গে বলো বলো— সে বোল্লে—না, সে-সব নয় । অন্য এক ব্যাপার, কিন্তু আমার পক্ষে কোনোও প্রণয়কাহিনীর চেয়ে তা কম মধরে নয়। শোনো বলি। আচ্ছা তোমার মনে আছে—মেসে থাকতে আমি একটা এরিকা পাম কিনেছিলাম, আমাদের ঘরের সামনে টবে বসানো ছিল, মনে আছে ? আচ্ছা তা হোলে শোনো ৷ তারপর আধঘণ্টা বসেহিমাংশ তার গল্পটা বলে গেল । আমরা আরও দুবার চা খেলাম, একবাক্স সিগারেট পোড়ালাম । বৌবাজারের মোড়ে গিজার ঘড়িটায় সাড়ে নটা যখন বাজল, তখন হিমাংশ গল্প শেষ করে বিদায় নিয়ে চলে গেল । তার গল্পটা আমি আমার নিজের কথায় বলবো, কেননা হিমাংশ সবধে কিছ জানা