পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৩৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ধালাবদল రీyరి মনে হোল, যাকে সে এতদিন সাফল্য ভেবে আত্মপ্রসাদ লাভ করে এসেছে, জীবনে আসলে তার মল্যে কি ? তার যেন আজ একটা নতুন চোখ খালেচে, জীবনের পাতাগুলো নতুনভাবে পড়তে শিখেচে, জীবনে যা নিয়ে এতদিন সে ভুলে আছে আজ মনে হচ্চে তা ভেতরের সম্পদ নয়, বাইরের পালিশ মাত্র । তাও নয় । জীবনটা যেন এতদিন জ্যামিতির সরল রেখার মত প্রস্থবিহীন, গভীরতাবিহীন একটা পথে চলে এসেচে—গভীরতর অনুভুতির অভাবে সে বুঝতে পারে নি যে জীবনের আর একটা বিস্তার অাছে আর একদিকে, সেট তাঁর গভীরতা । নিজের মনের মধ্যে ডুর দেওয়ার অবকাশ কখনো তো হয়নি । যে-পথ দিয়ে নেমে গেলে সরোবরের গভীর অন্ধকারতলে লকোনো মায়াপুরীর সন্ধান মেলে—তার সোপানশ্রেণী অপষ্ট নজরে পড়েচে, কিস্ত সময় উত্তীণ হয়ে গিয়েচে, এমন অসময়ে নজরে পড়লেই কি, বা না পড়লেই কি ? তাকে ফিরে যেতে হবে । কাঠের হিসাব ঠিক করতে হবে, ফরেস্ট অফিসারদের সাথে দেখা করে নতুন জঙ্গল ইজারা নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে, ব্যবসাকে আরও বাড়াবার চেষ্টা পেতে হবে, ব্যাকে জমানো টাকার অঙ্ককে বাড়াতে হবে । আরও কত শত দরকারী কাজ তার জন্য অপেক্ষা করে আছে হোসঙ্গাবাদের কাঠের গোলায় । এখন নতুন পথ ধরে চলবার মত সময়ও নেই, বয়সও নেই। সাফল্যের আলেয়া তাকে ব্যথতার যে-পথে ভুলিয়ে নিয়ে চলেচে—সেই পথই তার পথ । তবুও এই দিনটি সে ভুলবে না। এই মান মেঘলা দপুরের আলো, এই প্রাচীন জগডুমর গাছটা, এই পান-শেওলা-ভরা ডোবা, এই আশ্চৰ্য্য অদ্ভুত জীবনম হত্তেটি স্বপ্নের মত মনে আসবে বহন্দরে উত্তরকালের মানসপটে । সকলের প্রসংসাবাদের মধ্যে ননী একদিন গ্রামের বারোয়ারী ফাণ্ডে শ'দুই টাকা দিলে । গ্রামের সকলকে নিমন্ত্রণ করে হারাণ রায়ের বাড়ীতে ভুরিভোজে আপ্যায়িত করলে। একটি অনাথা বিধবাকে মাসিক কিছু সাহায্য করবার প্রতিশ্রুতি দিলে। এক সপ্তাহ প্রায় কেটে গেল। ননীর সরী আর থাকতে চায় না, ম্যালেরিয়ার দেশ, ছেলেমেয়ের শরীর খারাপ হবে —তাছাড়া হারাণ রায়ের বাড়ীতে তেমন ঘরদোর নেই, থাকবারও কণ্ট । নতুন মোটরগাড়ি চালিয়ে হারাণ রায়ের বাড়িস,"ধ সকলের এবং পাড়ার সবারই চোখের জলের মধ্যে ননী গ্রাম থেকে বিদায় নিলে । পষ্ণু মাখয্যে বল্লেন ঃ একেই বলে ছেলে । বিদেশে না বেরলে কি পয়সা হয় বাপ ? দেখে নিলে তো চোখের ওপর ? তা তোমাদের বলি, তোমরা তো শুনবে না ? গাঁয়ে কারর কিছু নেই, তাই মধ্য লাহিড়ী মুখের সামনে বড়মানুষী চালের কথা বলে পার পায়। দেখি এবার বেরিয়ে একটা কিছল যদি– একটি দিন মনটা ভাল ছিল না। এক এক দিন এরকম হয়, কিছর পড়তে ভাল লাগে না, কিছ ভাবতে ভাল লাগে না, কারর সঙ্গে কথা বলতেও ভাল লাগে না । মনে হয় যেন মনের চাকার তেল ফুরিয়ে গিয়েচে—‘অয়েল' না করে নিলে চাকা আর চলবে না, ক্ৰমে মরচে পড়ে আসবে— তারপর কবে একদিন ফুট করে বন্ধ হয়ে যাবে। জেলেপাড়া লেনে এক পরোনো তাসের আড্ডায় গেলাম । সেই সব পরনো বন্ধরো এসে