পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৩৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বালাবদল - లిరి বৌদিদি বিন্মিত হইয়া বলিলেন--আমি । কবে—কৈ আমার তো মনে হয় না, কে বলে ? আমি বলিলাম—বলবে আবার কে ? আচ্ছা দাঁড়াও, ভজিয়ে দিচ্চি । আমার মনেও কেমন সন্দেহ হইল । বন্দিনাথকে ডাকাইলাম কিন্ত তাকে বাড়িতে পাওয়া গেল না । বৌদিদি বলিলেন, তিনি দিব্য করিতে প্রস্তত আছেন যে, বন্দ্রিনাথকে কখনও কিছু কিনিয়া আনিতে তিনি দেন নাই । তখন মনে পড়িল বন্দিনাথ এটা-ওটা বাড়ির ফরমাশের ছতায় আমার নিকট হইতে দ'আনা চারআনা অনেকবার আদায়করিয়াছে; প্রায়ই যখন মোহিত ডাক্তারের ডিসপেনসারিতে বসিয়া আভা দিই, সেই সময় গিয়া চায়— উঃ, ছোকরা কি ধড়িবাজ, ঠিকই বুঝিয়াছিল যে আমি যখন আড্ডায় মশগল, তখন পয়মা চাহিলেও আমি তাহার কাছে কোন কৈফিয়ৎ চাহিব না, কেন পয়সা, কিসের জন্য পয়সা— অথবা বাড়িতেও সে বিষয়ের উল্লেখ করিতে ভুলিয়া যাইব । ভাবিলাম, ছোঁড়াকে এমন শিক্ষা দিব যাহাতে ওপথে আর কখনো না যায়, কিন্তু সেদিন আমি আহারাদি করিয়া রাত্রের ট্রেনে যখন কলিকাতা রওনা হইলাম, তখন পষ*্যন্ত বন্দিনাথ বাড়ি ফেরে নাই । পুনরায় বাড়ি আসিলাম মাসখানেক পরে। 憩 বন্দিনাথের কথা তখন নানা কাজে একরপ চাপা পড়িয়া গিয়াছে—তাহার উপর রাগটাও পড়িয়া গিয়াছে। পাজার অল্পই দেরি, রাণাঘাটের বাজারেই প্রতি বছর কাপড়-চোপড় কিনি, কে বহিয়া আনে কলিকাতা হইতে ? হইল না হয় দু'এক পয়সা দর বেশী । বাড়ির ছেলেমেয়ে সঙ্গে লইয়া কাপড়ের দোকানে গিয়া,পছন্দসই জিনিস কিনিবার বেশ একটা আনন্দ আছে, কলিকাতা হইতে মোট বধিয়া কাপড় কিনিয়া আনিলে সে আনন্দ হইতে বঞ্চিত হইতে হয়। বন্দিনাথ আজি পেশ করিল তাহার কাপড় চাই, জতা চাই, শাট চাই, গামছা চাই, একটা টিনের তোরঙ্গ চাই । দেখিলাম অনেক টাকার খেলা ৷ তোরঙ্গের কি দরকার এখন ? থাক এখন, পুজোর পর দেখা যাইবে । দু'জোড়া কাপড় কেন, এখন এক জোড়াই চলকে, একটা শাটেই পজা কাটিয়া যাইবে এখন। জতা একেবারেই নাই ? পায়ের মাপটা দিলে বরঞ্চ আসচে শনিবার চীনে বাড়ি— পজার সপ্তমীর দিন একটা ঘটনা ঘটিল। বৈঠকখানায় বসিয়া দৈনন্দিন বাজার-হিসাব লিখিতেছি, বাহির হইতে অপরিচিত চড়া গলায় কে বলিল—এইটে কি সামস্ত পাড়ার বিনোদ চৌধুরীর বাড়ি ? 廖 জানালা দিয়া মুখ বাড়াইয়া বলিলাম—আমারই নাম । কি চাই ? মড়াইপোড়া বামনের মত চেহারা একটা পাকসিটে গড়নের লোক ঘরে প্রবেশ করিল। মাথার চুল কাঁচায়-পাকায় মেশানো, আর লম্বা লম্বা, গায়ে আধ ময়লা গেঞ্জির ওপরে একটা চাদর । হাত জোড় করিয়া নমস্কার করিয়া বলিল—ভালোই হলো, আপনার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। প্রণাম হই চৌধুরী মশায় । কথাটা বলতেই হয় শেষকালটা । আপনার ছোট ভাই সরেন আমাদের দোকান থেকে— বিন্মিত হইয়া বলিলাম—আমার ছোট ভাই সরেন ? —হ’্যা, ঐ যে ল’বা, একহারা কালোমত চেহারা, ছোকরা, ষোল-সতেরো বছর বয়সবঝিতে বিলম্ব হইল না লোকটা কাহার কথা বলিতেছে। বলিলাম, হ্যা, কি করেচে শুনি ?