পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৪৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উমি্মুখর 8షిళి শোভিত শৈলমালা, দরে টাটার কারখানার রক্ত-আভা যেন বহন্দরের কোন অজানা আগ্নেয়গিরি অগ্নি-গহবরের রক্তশিখার আভা বলে মনে হচ্ছে । পিছন দিকের ঢালটো সহজ বলে মনে হ’ল, সেখানেই নেমে জঙ্গলের মধ্যে পথ ঠিক করতে পারচি নে । নারীকন্ঠে বললে কে, এদিক দিয়ে বাব । চেয়ে দেখি নিচে একটা সাঁওতালদের ঘর। নেমে এলমে তাদের উঠোনে। দটি মেয়ে ও একটি পর্ষ উঠোনে আগন জেলে সম্ভবতঃ আগন পোয়াচ্চে । আমরা তাদের জিজ্ঞেস করলাম—এই বনে পাহাড়ের নিচে আছিস কেমন করে, হাতী নামে না ? তারা সবাই দেখলাম অদষ্টবাদী। বললে—বাব, ভয় করে কি হবে ? যেদিন বাঘে নেবে সেদিন নেবেই । রথম থেকে আমাদের বাংলো প্রায় দ-মাইল, এদিকে রাত হয়েচে, ন-টা বাজে। আর বেশীক্ষণ এ সব জায়গায় থাকা ভাল নয় বুঝে দু'জনে বেশ জোর পায়ে হেটে রাত পোনে দশটায় পরিপণ" কয়োদশীর জ্যোৎস্নার মধ্য দিয়ে বাংলোতে পৌঁছে গেলাম । আজকার রাতের জ্যোৎস্নাটি আমাকে ইসমাইলপরের কথা স্মরণ করিয়ে দিলে কেন এত ? Shuqul সাহেবের বাগানের মধ্যের গাছগুলো ঠিক যেন ইসমাইলপুর কাছারীর চারিপাশের সেই বনঝাউ গাছ । আহারাদির পরে বাংলোর সামনে বসে গল্প করচি, একটা প্রকাণ্ড উল্কা জলতে জলতে অত জ্যোৎস্নাভরা আকাশেও ঠিক যেন হাউই বাজির মত আগনের রেখা সন্টি করে আকাশের গায়ে মিলিয়ে গেল । ভারি সন্দর ভুমিশ্ৰী সিংডুমের, ভারি চমৎকার জ্যোৎস্না-রারিটা আজ ! অনেককাল এদের কথা মনে থাকবে । রাখামাইনস থেকে এসেও যখন বারাকপুরের এই গাছগুলোর গন্ধ, ছায়া ও শ্যামলতা আমাকে এত মন্ধে করেচে তখন আমাদের এ অঞ্চলের সৌন্দয্য সম্বন্ধে আমার মত আরও দঢ় হয়ে গেল সন্দেহ নেই। সকালে একটু রোদ উঠলে যখন গাছপালায় ঝোপে, ছায়ায় ছায়ায় বেড়ান যায় তখন যে বনলতার কটুতিক্ত সৌরভ, বনফুলের সবাস পাই, পাখীর যে কলকাকলী শকুনি, কোথায় এর তুলনা ? পাহাড় শ্রেণী না থাকলে রাখামাইনস তো মরভূমি । তবে পাহাড়ের ওপরকার বন সকালের ছায়ায় ভাল হয় কিন্ত কেন জানি না সেখানে এ ধরনের কোমলতা নেই, নিধ নয় রক্ষ । শাল তমাল গাছের বৈচিত্র্য নেই, তারা মোহ সন্টি করতে পারে না, তাদের বনে লতা নেই, প্রাকৃতিক কুঞ্জ সটি করতে পারে এমন পপিত ব্যক্ষ বা লতা নেই। এই সব জন্যেই তো প্রথম হেমন্তে দেশের বন এত ভাল লাগে। সমিত জ্যোৎনা রাতে কোথায় এমন পপিত তৃণপণের মন মাতান সৌরভ । কাল বিকেলে বেড়াতে বেড়াতে কুঠির মাঠের বনশোভা দেখে আরও বেশী করে আমার থিওরীটার সত্যতা উপলব্ধি করলম অথাৎ আমাদের এ অঞ্চলের গাছপালার বৈচিত্র্য ও সৌন্দয্য সিংডুম সেন্ট্রাল ইন্ডিয়ার অরণ্যের শোভার অপেক্ষা অনেক বেশী। কত কি লতা, কত কি বিচিত্র বনফুল, কত ধরণের পত্রবিন্যাস—এত বৈচিত্র্য কোথায় ওসব দেশের অরণ্যে ? আমি রাখামাইনস থেকে বারো মাইল পাহাড় ও জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে সবটাই হেটে মনসাবনি রোড পৰ্যন্ত গিয়েচি, সিংডুমের বিখ্যাত সারেণ্ডা ফরেস্ট দেখোঁচ, গবনমেণ্ট প্রোটেক্টড ফরেস্টের মধ্যে গিয়েচি । সেখানে বন খুব ঘন ও বহুবিস্তৃত বটে কিন্তু বনশোভা নিমবঙ্গের বনের মত নয় । ও অঞ্চলের বড় বড় গাছের মধ্যে শাল, কেন্দ, আসান, পলাশ ও মাঝে মাঝে আমলকী ও বন্য শেফালি এই কটি প্রধান । বন্যলতা আমার চোখে অন্ততঃ পড়ে নি । কোন কোন হানে শিমল বক্ষ আছে। সারবান কাঠ বাংলাদেশের বনে তত নেই যত ওদেশে