পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৪৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88% বিভূতি-রচনাবলী করে যাই নি, বষাকালের চেয়ে প্রকৃতি এখন আরও সবজি—সত্যিই আরও সবুজ । গাছে গাছে নতুন শোভা । চারিদিকে পাখী ডাকচে পিড়িং পিড়িং, কোকিল ডাকচে, ঠ্যাং উচু করে বকগলি শেওলার দামে বসে আছে—শিমল গাছগুলোর রপ কি অদ্ভুত 1 , শিমল ষাঁড়া আর বাবলা গাছে নদীর শোভা বাড়িয়েচে । আমি বসে কাগজ দেখাঁচ মেয়েদের, প্রায়ই সব পাস করিয়ে দিচ্চি—মেয়েদের ফেল করাতে মন সরে না—আর রেণুর কথা ভাবচি, কাল খন্দ বলেছিল বিকেলে—“আপনার সঙ্গে কথা বলে যেমন অভূত আনন্দ পাই, এমন আর কারও সঙ্গে কথা বলে পাই নে’ সেই কথা ভাবচি। খাদ্য কাল যেতে বলে দিয়েচে কিন্তু আজ রাত্রেই আমি যাব চলে, সুতরাং কাল কি করে তার সঙ্গে আর দেখা করব ? এ ক-দিনই কি অদ্ভুত আনন্দে কাটচে। আমাদের ঘাটে গিয়ে নেীকো লাগল। এবার বন জঙ্গল কেটে দেশের শোভা অনেকটা নষ্ট করে ফেলেচে । দীপাব হয়ে গিয়েছিল, আমি কুঠীর মাঠের দিকে একটু বেড়াতে গেলাম—প্রটি দিদিদের বাড়ি ব্যাগ রেখেই । বাশবনে পাতা পড়িয়েচে–চারিদিক যেন ফাঁকা ফাঁকা দেখাচ্ছে । স্নান করতে গেলাম ঘাটে, সেই বননিমের ঝাড় দাঁড়িয়ে আছে, খুকু আর আমি সেই ঘাটে নাইতে আসতুম, খুকু ওর তলায় দাঁড়িয়ে থাকত—মনে হোল যেন কত কাল হয়ে গেল । খেয়ে বিশ্রাম করে চড়ক-তলায় গেলাম । উমা এসেচে অনেকদিন পরে, তার সঙ্গে দেখা করতে গেলাম । মণিকুন্তলার পত্ৰখানা ও আবার দেখলে । চড়কতলায় এসে কতয়াগ পরে কাদামাটি দেখি । সোনা, নলিনীদির মেয়ে তাকেও দেখলাম কতকাল পরে। পাগলা জেলে সন্ন্যাসী সেজেচে, ওকে কত ছোট দেখোঁচ । অজয় মন্ডল বড় বড়ো হয়ে গিয়েচে । সে জিজ্ঞেস করলে আমার বাড়ির কথা, আমার ভাই কেমন আছে । চালতেপোতার বাঁধ দিয়ে যেতে যেতে এখন এই অংশটা লিখচি। কি অপব্ব গাছপালার শোভা,—বারাকপরের পলে,—আর এই চালতেপোতার পলে । নদীর জলের ও হাকরা বনের এই যে সুগন্ধ এটা আমাদের ইছামতীর নিজস্ব। এবার গড় ফ্রাইডের ছুটিটা সব রকমে বড় আনন্দেই কাটল । এত আনন্দ জীবনে অনেক দিনই পাই নি। রোদ রাঙা হয়ে আসচে। ডাইনে চালকীর পথের ধারে কচি পাতা ওঠা শিমল গাছটায় চাইলে চোখ যেন আর ফেরানো যায় না । যখন এ সব দশ্য দেখি, তখন অনৰ্থক অথব্যয় করে দেশভ্রমণ করতে প্রবত্তি হয় না। এর চেয়ে ভাল কোন দেশ আছে ! এত বিচিত্র বনশোভা কি ট্রপিক্যাল আফ্রিকার ? একটা পাপড়ি ফাটা শিমল গাছের কি শোভা হয়েচে । পাপড়ি ফেটে তুলো বেরিয়ে আছে অাঁকাবাঁকা গাছের ডালে ডালে । নদীর জলে মাঝে মাঝে কচ্ছপ ভেসে উঠে, মথে বার করে ভু-উ-উস’ শব্দে নিশ্বাস নিচ্চে। আজ অনেকদিন পরে জালিপাড়ার সেই বায়োস্কোপওয়ালা সাহেবের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। দু-চারজন আছে বাল্য জীবনের আলাপী, তাদের সঙ্গে যখন পথে ঘাটে এইভাবে হঠাৎ দেখা হয়ে যায়, তখন বড়ই আনন্দ হয় । একজন আমাদের আচ্চার-দা’, একজন হচ্চে চালকীর শশিবাবর বাড়ি থেকে ফিরে যাচ্ছিল মোল্লাহাটীতে আম কিনতে সেই যে ছোকরা, যাকে আমি ও ছোটমামা আমাদের বাড়ি ডেকে নিয়ে গিয়ে খাইয়েছিলাম, আর একজন হচ্চে পেরর কনসাল ডন মটয়াসকি, যাকে পায়েস খাইয়েছিলাম, বনগাঁয়ের বাসা থেকে তৈরি করে । এই বছরটাতে কি যোগ আছে জানি নে, যত সব পরোনো বন্ধর সঙ্গে আলাপ হয়ে গেল আবার—যেমন ধরি মণিকুন্তলাদের সঙ্গে, এই বছরই বিশেষ করে আবার যোগ পনেঃ- . স্থাপিত হয়েচে রাজপরের অন্নপণাদের সঙ্গে, রমাপ্রসন্নদের সঙ্গে, সরেনদের সঙ্গে। মিনও সেদিন আমার কথা গ্রামে এসে বলেছিল বড়োর কাছে, বড়ো বললে, সেদিন রাত্রের ট্রেনে