পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৪৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উমি্মুখর 8ෂළු না। তাই বইগুলোর ওপরে ঝাল ঝেড়েচে । আমি বললাম—যদি ওকে বশীর বাড়ি না পাঠাও, তবে ওর লেখাপড়া শেখার ব্যবস্হা করো । পাঁচীর কান্না দেখে বড় কষ্ট হোল । কতকাল আগে বাল্যে এক সঙ্গে খেলা করেচি, ওদের পর ভাবতে পারি নে । হাট থেকে যখন ফিরি, তখন বেলা গিয়েচে, রোদ রাঙা হয়ে এসেচে । মাঠে নদীর ধারে একটু বসে ওপারের মেঘস্তুপ লক্ষ্য করি, তারপর জলে নামি স্নান করতে । অধিকার হয়ে গিয়েচে, ওপারের চরে সাইবাবলা গাছের বন, আর সেই প্রতিদিনের উত্তজবল তারাটি উঠেচে, দেখতে বড় চমৎকার হয় ও তারাটা । সকালে বসে যখন লিখচি, মনোরমা এসে বই চাইলে—পাঁচীর মেয়ে মনোরমা । ও আমার কাছে একখানা বই চেয়েছিল এবার, কিন্তু নানা গোলমালে সবিধে হয় নি । বললাম, কলকাতায় গিয়ে পাঠিয়ে দোবো, মা । বেশ মেয়েটি মনোরমা, জেলের মেয়ে বলে ওকে বোঝাই যায় না । ওপাড়ার ঘাটে সাঁতার দিয়ে যাবার সময় নড়াইল থেকে একখানা নেীকো আসচে দেখি, যাবে গঙ্গায় ইলিশ মাছ ধরতে, দু-দিন হোল ইছামতী নদীতে পড়েচে । তারা জিজ্ঞেস করলে—ইছামতীর মুখ আর কত দরে ? 蟾 羈 ঘাটের কেউ জানে না। আমি বললাম—আরও দুদিন লাগবে চণি নদীতে পড়তে । সেখান থেকে আর একদিন । বৈকালে বেলেডাঙার পল্লীমঙ্গল সমিতি প্রতিষ্ঠা করলাম । আরামডাঙা, নতিডাঙা, সদানন্দপুর, চিত্রাঙ্গপুর, নতুনপাড়া, পাঁচপোতা প্রভৃতি সাত-আটখানা গায়ের লোক জড়ো হয়েছিল। সদানন্দপুরের সৈয়দ আলি মোল্লাকে সভাপতি করে আমি এক লম্বা বক্ততা ঝাড়লাম সভার উদ্দেশ্য সম্বন্ধে । ছেলেরা গান গাইলে, ফুলের মালা গলায় দিলে । হৈ হৈ ব্যাপার। তারপর উপস্হিত লোকেদের মধ্যে বেছে বেছে এক কাযf্যকরী সমিতি গঠন করি । নর মহম্মদ মাস্টারের আগ্রহেই এ সব হোল । সে লোকটা নিঃসবাথ সেবাপরায়ণ, গ্রামে গ্রামে ঘরে লোক যোগাড় করা, সকলকে খবর দেওয়া, এসব সে-ই করেচে। মিটিং-এর পরে বৈকালে নীল আকাশের বিচিত্রবণ মেঘস্তুপের তলে মরাগাঙের ধারে সবুজ ঘাসভরা মাঠের মধ্যে বসে গ্রামের লোক কত দুঃখের কথা আমার কাছে বলতে লাগল। গাঁয়ে জলের কণ্ট, কচুরিপানায় পচা জল খাচ্ছে, বেলে জমিতে ফসল হয় না, ক-বছর অজন্মা, মোল্লাহাটির খেয়াঘাটের ঘাটওয়ালাদের জলম । • তাদের বুঝিয়ে দিলাম, এই পল্লীমঙ্গল সমিতি থেকে গ্রামে এসব অভাব অভিযোগ দর করবার চেস্টা করা হবে । তোমরা চাইতে জানো না, তাই পাও না । অন্য গাঁয়ে দুটো টিউবওয়েল হয় দু-পাড়ায়, তোমাদের গোটা গাঁয়ে একটাও হয় না। সন্ধ্যার আগে সেখান থেকে রওনা হলমে যখন, তখন মাথায় সেই উৎজল তারাটি উঠেছে। বাড়ি এসেই উষার পত্র পেলাম । ছুটি শেষ হয়ে আসচে আর আমার মন খারাপ হয়ে আসচে। এই মন্ত নদীর চর, নীল উদার আকাশ, বষ*াশ্যাম তৃণভূমি, আষাঢ়ের টলটলে কালো জল ইছামতী, জোনাকীর ঝকি, বেী-কথা-কও পাখীর ডাক, এসব ছেড়ে যেতে কষ্ট হয়। জীবনের বেগ ষেন মন্দ্ৰীভূত না হয়। আমাদের দেশে, আমাদের জাতীয় জীবনে তার আশঙ্কা খুব বেশী। পেট্রাক" সম্বন্ধে যেমন উক্ত হয়েচে—‘It is a noble Florentine