পাতা:দেবী চৌধুরানী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

به رهl ব্রাহ্মণ জমিদারদের পরিশ্রমে। এইরূপে রাষ্ট্রীয় শাস্তি ও সুশাসন বাড়িবার সঙ্গে সঙ্গে মুবা বাঙ্গলার মোট রাজস্ব বাড়িতে লাগিল ; মুর্শিদ কুলী খা প্রথমে আকবরী জমা ছাড়াইয়৷ উঠেন, আলিবর্দী তাহার উপর রাজকর কয়েক লাখ বাড়াইয়া দেন, এবং সর্বশেষে হতভাগ্য মির কাসিম ইংরেজদের শোষণের ফলে মোট খাজনার পরিমাণ অসম্ভব রকম বেশী করিয়া ভোলেন । কিন্তু নবাবের শাসনশক্তি যেই পলাসী ও উচ্চুযানালাল যুদ্ধের ফলে ভাঙ্গিয়া পড়িল, অথচ যখন ইংরেজেরা বণিকৃত্ব ত্যাগ করিয়া দেশশাসনের দায়িত্ব লইতে ইতস্ততঃ করিতেছিলেন, কোন রকমে খাজনার টাকা আদায় হইলেই তাহারা সন্তুষ্ট, ঠিক সেই সময়, সৰ্ব্বপ্রথমে সীমান্তু জেলাগুলিতে শান্তি চলিয়া গেল, অরাজকতা তন্দ্রা হইতে জাগিল, প্রজা দরিদ্র হইতে লাগিল, খাজনা কোথা হইতে আসিবে ? মির কাসিমের বৰ্দ্ধিত হারের জমা আদায় করা মন্থম্ভের সাধ্যাতীত হইল। তখন সরকারী তহসিলদারগণ প্রজাদের মারপিট এবং নিজেদের উদর পূরণের জন্য লুঠ আরম্ভ করিয়া দিল । ঠিক যেমন অযোধ্যা রাজ্য যত দিন অকৰ্ম্মণ্য নবাবদের অধীন ছিল, তত দিন কোন জেলায় খাজনা তাদায় করিতে হইলে সিপাহীর পল্টন পাঠানো আবশ্যক হইত, কখন কখন সেই সঙ্গে দুই একটা তোপও—এখানেও সেইরূপ হইল । দেবী চৌধুরাণীতে বর্ণিত যুগে ইংরেজের জমির অস্থায়ী বন্দোবস্ত করিতেন, নিলামে সৰ্ব্বোচ্চ দরে এক এক বৎসরের জন্ত ( পরে একবার ৫ বৎসরের জন্ত ) জমিদাবীগুলি ইজারা দেওয়া হইত। ইতিহাস-পাঠক সৰ্ব্বদেশেই দেখিয়াছেন যে, এই কুপ্রথার ফল ভীষণ প্রজাপীড়ন, চাষের হ্রাস, জমিদারের সর্বনাশ এবং রাজারও নিয়মিত বার্ষিক আয়ে দ্রুত অবনতি । দেশের এই তুর্দশার চিত্র বঙ্কিম ঠিক শাকিয়াছেন, ইহার কোন অংশ কল্পিত বা অতিরঞ্জিত নহে । কর্ণওয়ালিসের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত (১৭৯৩) আর যাহাই করুক না কেন, অনেক বৎসর ধরিয়া মফস্বলে শান্তি, প্রজার সুখ, এবং রাজস্বের নির্দিষ্টতা আনিয়া দেয় । কিন্তু তাহা যখন ঘটে, তখন “দেবী চৌধুরাণী মরিয়াছে" এবং প্রফুল্ল এক পাল “বড় ডব্ৰডবে চোখ, গালফুলো” জমিদার-শাবক পালন করিতে ব্যস্ত ; ডাকাত-রাণীর বজরা ভাঙ্গিয়া ফেলা হইয়াছে—তখন আর তাহার আবশ্যকতা নাই । আর একটা কথা বলা আবশ্বক। ঐ নিরস্ত্র বজরাটা যেরূপে ইংরেজ সিপাইদের ঠেলিয়া ফেলিয়া দিয়া লেফটেনাণ্ট ব্রেনানকে বন্দী করিল, তাহা অসম্ভব মনে হইতেছে কি ? জলের মধ্যে লাঠির কাছে সঙ্গীনের পরাজয় কি “বঙ্কিমের বিকৃত মস্তিষ্কের” কল্পনা মাত্র, যেমন একজন অতি প্রসিদ্ধ লেখক ‘আনন্দমঠে’ শান্তির ঘোড়াচড়াকে বর্ণনা করিয়াছেন :