পাতা:দেবী চৌধুরানী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

BB BBB BB BBB BB BBB BBBS BBB BBB BB BBBB BBBBB কিন্তু দশ বৎসরের কঠোর ব্রহ্মচৰ্য্য-সাধনা ও আত্মসংযমের ফলে এই কোমল বাঙ্গালীর মেয়ে নিষ্কামধৰ্ম্ম শিখিয়াছে, অশ্রু সম্বরণ করিতে পারে। অবশেষে যখন ভাবিল যে, জঞ্জি জীবনাস্তে ব্ৰজেশ্বরের দেখা পাইয়াছে, তখন “প্রফুল্লের দশ বছরের বাধা বাৰ ভাঙ্গিয়া, চোখের । জলের স্রোত ছুটিল” ( ৩-২ )। সে যে তখন মৃত্যুকে বরণ করিয়া লইয়াছে ; শ্বশুরের মানরক্ষা করিবার জন্য, শত শত অনুচরকে বৃথা যুদ্ধ হইতে বাচাইবার জন্য, নিজে হইতে সাহেবদের কাছে ধরা দিবে, বিষ খাইয়া মরিবে ; এই তো জীবনের শেষ দিন আসিয়াছে ; আজিকার দিন সেই পূর্বের দশ বৎসরের জীবন হইতে সম্পূর্ণ ভিন্ন নিয়মে চলিবে । ফলতঃ প্রফুল্লকে অন্তরে গৃহিণী করিয়া বঙ্কিম স্মৃষ্টি করিয়াছেন ; শান্তি ছিল বনের পার্থী, ঘরের খাচা তাহার জন্য নয় ; শ্ৰী গৃহিণী হইতে পারিত, হইতে পারিলে সুখী হইত, কিন্তু জ্যোতিষে বিশ্বাসের ফলে কঠোর আত্মত্যাগ করিয়া নিজেকে জোর করিয়া ঘর-সংসার হইতে দূরে টানিয়া ফেলিল। নিশি সহজেই প্রফুল্লকে ধরিয়া ফেলিয়াছিল— নিশি বলিল, “এই কি মা, তোমার নিষ্কাম ধৰ্ম্ম ? এ কি সন্ন্যাস ? --ও সকল ব্রত মেয়েমানুষের নহে। যদি মেয়েকে ও পথে যেতে হয়, তবে আমার মত হইতে হইবে । আমাকে কাদাইবার জন্য ব্রজেশ্বর নাই । আমার ব্রজেশ্বর বৈকুণ্ঠেশ্বর একই ...তুমি সন্ন্যাস ত্যাগ করিয়া ঘরে যাও ।” দেবী ৷ ‘সে পথ খোলা থাকিলে, আমি এ পথে আসিতাম না । ( ২-৮ ) । প্রফুল্ল জানিত যে, স্ত্রীজীবনের পূর্ণ বিকাশ রূপে নহে, অর্থ-লাভে প্রতাপ-চালনে বা ভোগে নহে, কেবল মাতৃত্বে । বৃক্ষের অভিব্যক্তির শেষ এবং সৰ্ব্বোচ্চ স্তর ফলে,—পাতায় নহে, ফুলে নহে, গন্ধে নহে। তাই প্রফুল্ল ঘরে ফিরিল। আর শ্ৰী ? সেও গৃহিণী হইবার উপযুক্ত মন প্রাণ লইয়াই জগতে আসিয়াছিল ; পরিত্যাগকারী, পর-হইয়া-যাওয়া স্বামীর জন্য তাহারও প্রাণ পাগল— শ্ৰী—“আমি ঈশ্বর জানি না—স্বামীই জানি ।...স্বামী ছাড়িয়া আমি ঈশ্বরও চাহি না । যে দিন বালিকা-বয়সে তিনি আমায় ত্যাগ করিয়াছিলেন, সে দিন হইতে আমিও তাহাকে রাত্রিদিন ভাবিয়াছিলাম।--কেবল মনে মনে দেবতা গড়িয়া তাকে আমি এত বৎসর পূজা করিয়াছি।” ( ‘সীতারাম’, ১-১৪ ) । অর্থাৎ খ্ৰীও প্রফুল্লের শেষ পরিণতিতে পৌঁছিয়া সন্ন্যাসিনীত্ব গৃহিণীত্বে লুপ্ত করিতে