পাতা:আনন্দমঠ - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্বিতীয় খণ্ড—অষ্টম পরিচ্ছেদ
৭৩

 সত্য। তা হউক, সামান্য মনুষ্যদিগের মন স্ত্রীলোকে আসক্ত এবং কার্য্যে বিরত করে। এই জন্য সন্তানের ব্রতই এই যে, রমণী জাতির সঙ্গে একাসনে উপবেশন করিবে না। জীবানন্দ আমার দক্ষিণ হস্ত। তুমি আমার ডান হাত ভাঙ্গিয়া দিতে আসিয়াছ।

 শান্তি। আমি আপনার দক্ষিণ হস্তে বল বাড়াইতে আসিয়াছি। আমি ব্রহ্মচারিণী, প্রভুর কাছে ব্রহ্মচারিণীই থাকিব। আমি কেবল ধর্ম্মাচরণের জন্য আসিয়াছি; স্বামিসন্দর্শনের জন্য নয়। বিরহ যন্ত্রণায় আমি কাতরা নই। স্বামী যে ধর্ম গ্রহণ করিয়াছেন, আমি তাহার ভাগিনী কেন হইব না? তাই আসিয়াছি।

 সত্য। ভাল, তোমায় দিন কত পরীক্ষা করিয়া দেখি।

 শান্তি বলিলেন, “আনন্দমঠে আমি থাকিতে পাইব কি?”

 সত্য। আজ আর কোথা যাইবে?

 শান্তি। তার পর?

 সত্য। “মা ভবানীর মত তোমারও ললাটে আগুন আছে, সন্তানসম্প্রদায় কেন দাহ করিবে?” এই বলিয়া, পরে আশীর্ব্বাদ করিয়া সত্যানন্দ শান্তিকে বিদায় করিলেন।

 শান্তি মনে মনে বলিল, “র বেটা বুড়ো! আমার কপালে আগুন! আমি পোড়াকপালি, না তোর মা পোড়াকপালি?”

 বস্তুত সত্যানন্দের সে অভিপ্রায় নহে—চক্ষের বিদ্যুতের কথাই তিনি বলিয়াছিলেন, কিন্তু তা কি বুড়ো বয়সে ছেলে মানুষকে বলা যায়?


অষ্টম পরিচ্ছেদ

 সে রাত্রি শান্তি মঠে থাকিবার অনুমতি পাইয়াছিলেন। অতএব ঘর খুঁজিতে লাগিলেন। অনেক ঘর খালি পড়িয়া আছে। গোবর্দ্ধন নামে এক জন পরিচারক—সেও ক্ষুদ্রদরের সন্তান—প্রদীপ হাতে করিয়া ঘর দেখাইয়া বেড়াইতে লাগিল। কোনটাই শান্তির পছন্দ হইল না। হতাশ হইয়া গোবর্দ্ধন ফিরিয়া সত্যানন্দের কাছে শান্তিকে লইয়া চলিল।

 শান্তি বলিল, “ভাই সন্তান, এই দিকে যে কয়টা ঘর রহিল, এ ত দেখা হইল না?”

 গোবর্দ্ধন বলিল, “ও সব খুব ভাল ঘর বটে, কিন্তু ও সকলে লোক আছে।”

 শান্তি। কারা আছে?