পাতা:দেবী চৌধুরানী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

$8२ , দেৰী চৌধুরাণী ইহাদের কারও কোন কষ্ট না হয়, সকলে সুখী হয়, সেই ব্যবস্থা করিতে হইবে। এর চেয়ে কোন সন্ন্যাস কঠিন ? এর চেয়ে কোন পুণ্য বড় পুণ্য ? আমি এই সন্ন্যাস করিব । সা। তবে কিছু দিন আমি তোমার কাছে থাকিয়া তোমার চেলা হইব। যখন সাগরের সঙ্গে প্রফুল্লের এই কথা হইতেছিল, তখন ব্রহ্মঠাকুরাণীর কাছে ব্রজেশ্বর ভোজনে বসিয়াছিলেন। ব্রহ্মঠাকুরাণী জিজ্ঞাসা করিলেন, “বেজ, এখন কেমন রাধি ?" ব্রজেশ্বরের সেই দশ বছরের কথা মনে পড়িল। কথাগুলি মূলাবান্‌—তাই দুই জনেরই মনে ছিল । ব্রজ বলিল, “বেসূ " ব্ৰহ্ম। এখন গোরুর দুধ কেমন ? বেগড়ায় কি ? ব্রজ। বেস্ দুধ। ব্ৰহ্ম। কই, দশ বৎসর হলো—আমায় ত গঙ্গায় দিলি না ? ব্রজ। ভুলে গিছিলেম। ব্রহ্ম। তুই আমায় গঙ্গায় দিস নে । তুই বাগদী হয়েছিস্ । ব্রজ। ঠান্‌দিদি ! চুপ ও কথা না। ব্ৰহ্ম। তা দিস, পারিস্ত গঙ্গায় দিস। আমি আর কথা কব না। কিন্তু ভাই, কেউ যেন আমার চরকা টরক ভাঙ্গে না। t o চতুর্দশ পরিচ্ছেদ কয়েক মাস থাকিয়া সাগর দেখিল, প্রফুল্ল যাহা বলিয়াছিল, তাহা করিল। সংসায়ের সকলকে মুখী করিল। শাশুড়ী প্রফুল্ল হইতে এত সুখী যে, প্রফুল্লর হাতে সমস্ত সংসারের ভার - দিয়া, তিনি কেবল সাগরের ছেলে কোলে করিয়া বেড়াইতেন। ক্রমে শ্বশুরও প্রফুল্লের গুণ বুঝিলেন। শেষ প্রফুল্ল যে কাজ না করিত, সে কাজ তার ভাল লাগিত না। শ্বশুর শাশুড়ী প্রফুল্লকে না জিজ্ঞাসা করিয়া কোন কাজ করিত না, তাহার বুদ্ধিবিবেচনার উপর তাহাদের এতটাই শ্রদ্ধা হইল। ব্ৰহ্মঠাকুরাণীও রান্নাঘরের কর্তৃত্ব প্রফুল্লকে ছাড়িয়া দিলেন। বুড়ী আর বড় রাধিতে পারে না, তিন বেী রাখে ; কিন্তু যেদিন প্রফুল্ল দুই একখানা না রাধিত, সেদিন কাহারও অন্ন ব্যঞ্জন ভাল লাগিত না। যাহার ভোজনের কাছে প্রফুল্ল না দাড়াইত, সে মনে করিত, আধপেটা খাইলাম। শেষ নয়ান বৌও বশীভূত হইল। আর প্রফুল্লের সঙ্গে