পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ساد . : সাক্ষাৎ পাইবে না । তোমার মন যদি এইরূপ থাকে, ; তবে উপযুক্ত সময়ে তোমাকে দেখা দিব । তখন অকস্মাৎ কোন পথে ব্রহ্মচারী অন্তৰ্হিত হইলেন । মহেন্দ্ৰ পূৰ্ব্বপ্রদৃষ্ট পথে নির্গমন পূৰ্ব্বক দেখিলেন, নাট্যমন্দিরে কল্যাণী কন্যা লইয়া বসিয়া আছেন । : এদিকে সত্যানন্দ অঙ্গ সুড়ঙ্গ দিয়া অবতরণ পূর্বক এক নিভৃত ভূগর্ভকক্ষায় নামিলেন । সেখানে জীবানন্দ ও ভবানন্দ বসিয়া টাকা গণিয়া থরে থরে সাজাইতেছেন। সে ঘরে স্তপে স্তপে স্বর্ণ, রৌপ্য, তাম্র, হীরক, প্রবাল, মুক্ত সজ্জিত রহিয়াছে। গত রাত্রের লুঠের টাকা ইহার সাজাইয়া রাখিতেছেন । সত্যানন্দ সেই কক্ষমধ্যে প্রবেশ করিয়া বলিলেন, *জীবানন্দ ! মহেন্দ্র আসিবে । আসিলে সস্তানের বিশেষ উপকার আছে, কেন না, তাহা হইলে উহার পুরুষানুক্রমে সঞ্চিত অৰ্থরাশি মা’র সেবায় অর্পিত ইবে । কিন্তু যত দিন সে কায়মনোবাক্যে মাতৃভক্ত না হয়, তত দিন তাহাকে গ্রহণ কবিও না । তোমাদিগের হাতের কাজ সমাপ্ত হইলে, তোমরা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে উহার অনুসরণ করিও, সময় দেখিলে উহাকে ঐবিষ্ণুমণ্ডপে উপস্থিত করিও ; আর সময়ে হউক, অসময়ে হউক, উহাদিগের রক্ষা করিও ; কেন না, যেমন দুষ্ট্রের শাসন সস্তানের ধৰ্ম্ম, শিষ্টের রক্ষা ও সেইরূপ ধৰ্ম্ম ।” 했 দ্বাদশ পরিচেছদ অনেক দুঃখের পর মহেন্দ্র আর কল্যাণীতে সাক্ষাৎ হইল । কল্যাণী কাদিয়া লুটিয়া পড়িলেন । মহেন্দ্র আরও কাদিলেন । কাদা-কাটার পর চোখ মুছার ধুম পড়িয়! গেল। যতবার চোখ মুছা যায়, ততবার আবার জল পড়ে । জল পড়া বন্ধ করিবার জন্য কল্যাণী খাবার কথা পাড়ি’লন ; ব্রহ্মচারীর অল্পচর যে খাবার রাখিয়া গিয়াছে, কল্যাণী মহেন্দ্রকে তাহ খাইতে বলিলেন । দুর্ভিক্ষের দিন অন্ন ব্যঞ্জন পাইবার কোন সম্ভাবনা নাই, কিন্তু দেশে যাহা আছে, সন্তানের কাছে তাহ সুলভ । সেই কানন সাধারণ মন্ত্রষ্ঠের অগম্য, যেখানে যে গাছে যে ফল হয়, উপবাসী মনুষ্যগণ তাহ পাড়িয়া খায় । কিন্তু এই অগম্য অরণ্যের গাছের ফল আর কেহ পায় না । এই জন্য ব্রহ্মচারীর অম্লচর বহুতর বন্যফল ও কিছু দুগ্ধ আনিয়া রাগ্লিয়া যাইতে পারিয়াছিল। সন্ন্যাসী ঠাকুরদের সম্পত্তির মধ্যে অনেকগুলি _ 轟 গাই ছিল । কল্যাণীর অনুরোধে মহেন্দ্র প্র কিছু ভোজন করিলেন। তার পর ভুক্তাবশেষ কল্যাণী বিরলে বসিয়া কিছু খাইলেন। দুগ্ধ কন্যাকে কিছু খাওয়াইলেন, কিছু সঞ্চিত করিয়া রাখিলেন— আবার খাওয়াইবেন । তার পর নিদ্রায় উভয়ে পীড়িত হইলে উভয়ে শ্রম দূর করিলেন। পরে নিদ্রাভঙ্গের পর উভয়ে আলোচনা করিতে লাগিলেন, “এখন কোথায় যাই ?” কল্যাণী বলিলেন, “বাড়ীতে বিপদ বিবেচনা করির গৃহত্যাগ করিয়া আসিয়াছিলাম, এখন দেখিতেছি, বাড়ীর অপেক্ষা বাহিরে বিপদ অধিক । তবে চল, বাড়ীতেই ফিরিয়া যাই ।” মহেন্দ্রেরও তাহা অভিপ্রেত । মহেন্দ্রের ইচ্ছা, কল্যাণীকে গৃহে রাখিয়া কোন প্রকারে এক জন অভিভাবক নিযুক্ত করিয়া দিয়া, এই পরম রমণীয় অপার্থিব পবিত্রতাযুক্ত মাতৃসেবাবত গ্রহণ করেন । অতএব তিনি সহজেই সন্ধত ইষ্টলেন । তখন দুই জন গতক্রম হইয়। কন্যা কোলে তুলিয়া পদচিহ্নাভিমুখে যাত্র করিলেন । কিন্তু পদচিহ্নে কোন পথে যাইতে হুইবে, সেই দুৰ্ভেদ্য অরণ্যানীমধ্যে কিছুই স্থির করিতে পারিলেন না । তাহারা বিবেচনা করিয়াছিলেন যে, বন হইতে বাহির হইতে পারলেই পথ পাইবেন । কিন্তু বন ইষ্টতে বাহিব শুইবার পপ পাওয়া যায় না । অনেকক্ষণ বনের ভিতর ঘুরিতে লাগিলেন, ঘুরিয়া ঘুরিয়া সেই মঠেই ফিরিয়া আসিতে লাগিলেন, নিগমের পথ পাওয়া যায় না । সম্মুখে এক জন বৈষ্ণববেশধারী অপরিচিত ব্রহ্মচারী দাড়াইয়া হাসিতেছিলেন । দেখিয়৷ ম.হন্দ্র রুষ্ট হইয়া জিজ্ঞাস করিলেন, “গোসাই, হাস কেন ?” গোঁসাই । বলিলেন, “তোমরা এ বনে প্রবেশ করিলে কি প্রকারে ?" মহেন্দ্র । যে প্রকারেই হউক, প্রবেশ করি য়াছি । গোসাই “প্রবেশ করিয়াছ ত বাহির হইতে পারিতেছ না কেন ?" এই বলিয়া বৈষ্ণব আবার হাসিতে লাগিলেন । রষ্ট হুইয়া মহেন্দ্র বলিলেন, “তুমি হাসিতেছ, তুমি বাহির হইতে পার ?” * বৈষ্ণব বললেন, “আমার সঙ্গে আইস, আমি পথ দেখাইয়া দিতেছি । তোমরা অবহু কোন সন্ন্যাসী ব্রহ্মচারীর সঙ্গে প্রবেশ করিয়া থাকিবে, নচেৎ এ মঠে আসিবার বা বাহির হইবার পথ আর কেহই জানে না।”