পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

> o বাঙ্গালীর ছেলেমাত্রেই জুজু নামে ভয় পায়, কিন্তু একটি একটি এমন নষ্ট বালক আছে যে, জুজু দেখিতে চাহে । শৈবলিনীর সেই দশ ঘটিল। শৈবলিনী প্রথম প্রথম তৎকালের প্রচলিত প্রথামুসারে ফক্টরকে দেখিয়া উৰ্দ্ধশ্বাসে পলাইত। পরে কেহ তাহাকে বলিল, “ইংরেজরা মনুষ্য ধরিয়া সদ্য ভোজন করে না-ইংরেজ অতি আশ্চর্য জন্তু—এক দিন চাহিয়া দেখিও ” শৈবলিনী চাহিয়া দেখিল— দেখিল, ইংরেজ তাহাকে ধরিয়া সদ্য ভোজন করিল না। সেই অবধি শৈবলিনী ফষ্টরকে দেখিয়া পলাইত না—ক্রেমে তাহীর সহিত কথা কহিতেও সাহস করিয়াছিল । তাহীও পাঠক জানেন । অশুভক্ষণে শৈবলিনী ভূমণ্ডলে জন্মগ্রহণ করিয়া ছিল। অশুভক্ষণে চন্দ্রশেখর তাহার পাণিগ্রহণ করিয়াছিলেন । শৈবলিনী যাহা, তাহা ক্রমে বলিব । কিন্তু সে যাই হউক, ফষ্টরের যত্ন বিফল হইল । পরে অকস্মাৎ কলিকাতা হইতে ফষ্টরের প্রতি আজ্ঞা প্রচার হইল যে, “পুরন্দরপুরের কুঠীতে অন্ত লোক নিযুক্ত হইয়াছে, তুমি শীঘ্ৰ কলিকাতায় আসিবে । তোমাকে কোন বিশেষ কৰ্ম্মে নিযুক্ত কর। যাইবে ।” যিনি ফুঠীতে নিযুক্ত হইয়াছিলেন, তিনি এই আজ্ঞার সঙ্গে সঙ্গেই আসিয়া উপস্থিত হইলেন । ফষ্টরকে সদ্যই কলিকাতা যাত্র করিতে হইল । শৈবলিনীর রূপ ফষ্টরের চিত্ত অধিকার করিয়৷ ছিল । দেখিলেন, শৈবলিনীর আশা ত্যাগ করিয়া যাইতে হয় । এই সময়ে যে সকল ইংরেজ বাঙ্গালায় বাস করিতেন, র্তাহারা দুইটিমাত্র কার্য্যে অক্ষম ছিলেন । র্তাহারা লোভসংবরণে অক্ষম এবং পরাভবম্বীকারে অক্ষম । তাহারা কখনই স্বীকার করিতেন না যে, এ কার্য্য পারিলাম নী—নিম্নস্ত হওয়াই ভাল এবং র্তাহারা কখনই স্বীকার করিতেন ন যে, এ কার্য্যে অধৰ্ম্ম আছে, অতএব অকৰ্ত্তব্য । যাহার। ভারতবর্ষে প্রথম বৃটেনীয় রাজ্য সস্থাপন করেন, তাহাদিগের দ্যায় ক্ষমতাশালী এবং স্বেচ্ছাচারী মনুষ্যসম্প্রদায়ু ভূমণ্ডলে কখনও দেখা দেয় নাই । লরেন্স ফষ্টর সেই প্রকৃতির লোক। তিনি লোভ সংবরণ করিলেন না—বঙ্গীয় ইংরেজদিগের মধ্যে তখন ধৰ্ম্ম শব্দ লুপ্ত হইয়াছিল । তিনি সাধ্যসাধ্যও বিবেচনা করিলেন না । মনে মনে বলিলেন, “Now or never I" এই ভাবিয়া ষে দিন কলিকাতায় যাত্রা করিবেন, তাহার পুর্বরাত্রে সন্ধ্যার পর শিবিকা, বাহক, কুঠার বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী কয় জন বরকন্দাজ লইয়া সশস্ত্র বেদগ্রাম অভিমুখে যাত্রা করিলেন । সেই রাত্রে বেদগ্রামবাসীর সভয়ে শুনিল যে, চন্দ্রশেখরের গৃহে ডাকাইতি হইতেছে । চন্দ্রশেখর সে দিন গৃহে ছিলেন না, মুর্শিদাবাদ হইতে রাজকৰ্ম্মচারীর সাদর নিমন্ত্রণপত্র প্রাপ্ত হইয়া তথায় গিয়াছিলেন- অদ্যাপি প্রত্যাগমন করেন নাই । গ্রামবাসীরা চীৎকার, কোলাহল, বন্দকের শব্দ এবং রোদনধ্বনি শুনিয়া শয্যাত্যাগ করিয়া বাহিরে আসিয়া দেখিল যে, চন্দ্রশেখরের বাড়ী ডাকাইতি হইতেছে, অনেক মশালের আলো । কেহু অগ্রসর হইল না । তাতারা দুরে দাড়াইয় দেখিল, বাড়ী লুঠিয়া ডাকাইতেরা একে একে নির্গত হই’ল ; বিস্মিত হইয় দেখিল যে, কয়েক জন বাহকে একখানি শিবিক স্বন্ধে করিয়া গৃহ হইতে বাহির হইল। শিবিকার দ্বার রুদ্ধ—সঙ্গে পুরন্দরপুরের কুঠীর সাহেব ! দেখিয় সকলে সভয়ে নিস্তব্ধ হইয়া সরিয়া দাড়াইল । দসু্যগণ ঢলিয় গেলে প্রতিবাসীর গৃহমধ্যে প্রবেশ করিল ; দেখিল, দ্রব্য-সামগ্ৰী বড় অধিক অপহৃত হয় নাই—অধিকাংশই আছে । কিন্তু শৈবলিনী নাই । কেহ কেহ বলিল—“সে কোথায় লুকাইয়াছে, এখনই আসিবে " প্রাচীনের বলিল, “অরি আসিবে ন--আসিলেও B型び*団 তাহাকে আর ঘরে লষ্টবে না । যে পান্ধী দেখিলে, ঐ পান্ধীমধ্যে সে গিয়াছে ” ঘাঁহার প্রতাশ। করিতেছিল সে, শৈবলিনী আবার ফিরিয়া আসিবে, তাহারা দাড়াইয়। টাড়াইয়। শেসে বসিল. বসিয়া বসিয়া নিদ্রায় ঢুলিতে লাগিল, ঢুলিয়া ঢুলিয়া বিরক্ত হইয়া উঠিয় গেল । শৈবলিনী আসিল না । সুন্দরী নামে যে যুবতীকে আমির প্রথম পরিচিত। করিয়াছি, সেই সকলের শেষে উঠিয়া গেল । সুন্দরী চন্দ্রশেখরের প্রতিবাসিনীর কন্যা, সম্বন্ধে তাঙ্গার ভগিনী । শৈবলিনার সর্থী, আবার তাহার কথ। উল্লেখ করিতে হইবে বলিয়, এ স্থলে এ পরিচয় দিলাম । সুন্দরী বসিয়৷ ধসিয়া, প্রভাতে গৃহে গেল, গৃহে গিয়। কাদিতে লাগিল । চতুর্থ পরিচ্ছেদ নাপিতানী সক্টর স্বয়ং শিবিকাসমভিব্যাহারে লইয়া দূরবর্ধিনী ভাগীরথীর তীর পর্যন্ত আসিলেন । সেখানে নৌক৷