পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চন্দ্রশেখর ২৩ রছিয়াছে—কলকলরবে অনন্ত প্রবাহিণী গঙ্গ। ধাবিত হইতেছেন । সেই স্রোতে প্রহরী; শব ভাসিমৃ যাইতেছে। পলকমধ্যে ফষ্টর এই সকল দেখিলেন । কসাড়বনের উপর ঈষত্তরল ধূমরেখ দেখিয়৷ ফষ্টর স্বহস্তস্থিত বন্দুক উত্তোলন করিয়া সেই বনের দিকে লক্ষ্য করিতেছিলেন । ফষ্টর বিলক্ষণ বুঝিয়াছিলেন যে, এই বনান্তরালে লুক্কায়িত শক্ৰ আছে । ইহাও পুঝিয়াছিলেন যে, যে শক্ৰ অদৃষ্ঠ পাকির। প্রহরীকে নিপা ভ-করিয়াছিল, সে এখনই তাঁহাকেও নিপাত করিতে পারে । কিন্তু তিনি পলাশীর যুদ্ধের পর ভারতবর্ষে তাসিয়াছিলেন, দেশী লোক বে ইংরেজকে লক্ষ্য কৰূিপে, এ কথা তিনি মনে স্থান দিলেন না । বিশেষ ইংরেঙ্গ হষ্টয়। সে বেশী শক্ৰকে ভধু করিবে – তাঙ্গার মৃত্যু ভাল ; এই ভাবিয়া তিনি সেইখানে দাড়াষ্টয় বন্দুক উত্তোলন করি,াছিলেন ; কিন্তু তন্মুহূর্ক্সে কদড়বলের ভিতর অগ্নিশিখা সলিম উঠিল, আবার বন্দুকের শদ হইল—সক্টর মস্তকে তাহত ইয়। প্রহরীর স্যার গঙ্গাস্রোতমপে। পতিত হুইলল । তাতার হস্তস্তি ত বন্দুক সশব্দে নৌকার উপরেই পড়িল । প্রভাপ সেই সময় কটি ইষ্টতে ছুরিক নিদোষিওঁ করিয়! বজয়ার বন্ধনরজি সকল কাটিলন, সেখানে পল অল্প, স্রোত অল্প বলিয়া নাবিকের লঙ্গর ফেলে নাই । ফেলিলেও লঘুহুস্ত বলবান প্রতাপের বিশেষ বিঘ্ন ঘটিত ন। প্রস্তাপ এক লাফ দিল্ল। বজরার উপর উঠলেন । এই ঘটনাগুলি বৰ্ণনায় সে সময় লাগিয়াছে, তাহীর শতাংশ সময়মধ্যেই সে সকল সম্পন্ন হুইয়াছিল, প্রহরীর পতন, ফক্টরের বহিরে আনা, তাহর পতন এবং প্রতাপের নৌকারোহণ, এই সকলে যে সমর লাগিয়াছিল, ততক্ষণে দ্বিতীয় নৌকার লোকের বজরার নিকটে আসিতে পারে নাই ; কিন্তু তাহারাৎ আসিল । আসিয়া দেখিল, নৌকা প্রতাপের কৌশলে বাহির জলে গিয়াছে। এক জন সাতার দিয়া নৌক৷ ধরিতে আসিল, প্রতাপ একটা লগি তুলিয়। তাহার মস্তকে মারিলেন, সে ফিরিয়া গেল । আর কেহ অগ্রসর হইল না। সেই লগিতে জলতল পৃষ্ট করিয়া প্রতাপ আবার নৌকা ঠেলিলেন। নৌকা ঘুরিয়৷ গভীর স্রোতোমধ্যে পড়িয়া বেগে পূৰ্ব্বাভিমুখে ছুটিল । লগি হাতে প্রতাপ ফিরিয়া দেখিলেন, আর এক জন তেলিঙ্গ সিপাহী নৌকার ছাদের উপর জানু পাতিয়া বসিয়া বন্দুক উঠাইতেছে । প্রতাপ লগি ফিরাইয়া সিপাহীর হাতের উপব মারিলেন ; তাহার হাত অবশ হইল, বন্দুক পড়িয় গেল। প্রতাপ সেই বন্দুক তুলিয়। লইলেন। ফষ্টরের হস্তচু্যত বন্দুকও তুলিয়া লইলেন। তখন তিনি নৌকাস্থিত সকলকে বলিলেন, “শুন, আমার নাম প্রতাপ রান্ন। নবাবও আমাকে ভয় করেন । এই দুই বন্দুক আর লগির বাড়ি-বোধ হয় তোমাদের কয় জনকে একেলাই মারিতে পারি। তোমর। যদি আমার কথা শুন, তবে কাহাকেও কিছু বলিব না । আমি হালে স্বাক্টতেছি, দাড়ীর সকলে দাড় ধরুন । আর আর সকলে সেখানে সে আছি, সেখানে থাক । নড়িলেই মরিবে --নচেৎ শঙ্ক। নাঙ্গ " এই বলিয়। প্রতাপ রায় দাড়াদিগকে এক একটা লগির গোচ দিয়। উঠাইন্ন দিলেন । তাহার। ভয়ে জড়সড় হইয়। দড়ি পরিল । প্রতীপ রায় গিয় নৌকার হাল পরিলেন । কেহ আর কিছু বলিল না । নৌক৷ দ্রুতবেগে চলিল । ভড়ের উপর হষ্টতে দুই একট| বন্দুকের আওয়াজ হুসল, কিন্তু কাহাকে লক্ষ্য করিতে হইবে, নক্ষত্ৰলোকে তাহ কিছু কেহ অবধারিত করিতে না পারভে সে তখনই নিবারিত হইল । তখন ভড় হইতে জন কয়েক লোক বন্দুক লইয়। এক ডিঙ্গীতে উঠিয়৷ বঞ্জর ধরিতে আসিল । প্রতাপ প্রথমে কিছু বলিলেন না । তাহার। নিকটে আসিলে দুইটি বন্দুকই তাহাদিগের উপর লক্ষা করিয়। ছাড়িলেন । দুষ্ট জন লোক আহত হইল, অবশিষ্ট লোক ভাত হইয়। ডিঙ্গা ফিরাইয় পলায়ন করিল। কসাড়বলে লুক্কায়িত রামচরণ প্রতাপকে নিষ্কণ্টক . দেখিয় এবং ভড়ের সিপাহীগণ কসাড়বন খুজিতে আসিতেছে দেখিয় ধীরে ধীরে সরিয়া গেল । দ্রষ্ঠ পরিচ্ছেদ বজ্রাঘাত সেই নৈশ-গঙ্গাবিচারিণী তরণীমধ্যে নিদ্র। হইতে জাগিল -শৈবলিনী । বজরার মধ্যে দুইটি কামরা--একটিতে ফষ্টর ছিলেন ; আর একটিতে শৈবলিনী এবং তাহার দাসী । শৈবলিনী এখনও বিবি সাজে নাই –পরণে কালাপেড়ে শাড়ী, হাতে বালা, পায়ে মল, সঙ্গে সেই পুরন্দরপুরের দাসী পাৰ্ব্বতী ৷ শৈবলিনী নিদ্রিত ছিল—শৈবলিনী স্বপ্ন দেখিতেছিল --সেই ভীমা পুষ্করিণীর চারিপাশে জলসংস্পর্শপ্রার্থিশাখারাজিতে বাপীতার অন্ধকারের রেখাযুক্ত—শৈবলিনী যেন তাহাতে পদ্ম হইয়৷ মুখ