পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/১১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

سرا(عي তাহাই জাগিতেছিল। শৈবলিনী কলের পুত্তলীর দ্যায় সাতার দিতেছিল। কিন্তু শান্তি নাই । উভয়ে সত্ত্বরণপটু ৷ সন্তরণে প্রতাপের আনন্দ সাগর উছলিয়া উঠিতেছিল । প্রতাপ ডাকিল, শৈবলিনি--শৈ!" শৈবলিনী চমকিয়া উঠিল, –হৃদয় কম্পিত হইল । বাল্যকালে প্রতাপ তাহাকে “শৈ" বা “সই” বলিয়। ডাকিত । আবার সেই প্রিয় সম্বোধন করিল । ক’ত কাল পরে ! বৎসরে কি কালের মাপ ? ভাবে ও অভাবে কালের মাপ | শৈবলিনী যত বৎসর ‘সই’ শব্দ শুনে নাই, শৈবলিনীর সেই এক মন্ত্রস্তর । এখন শুনিয়| শৈবলিনা সেই অনন্ত জলরাশির মধ্যে চক্ষু মুদিল । মনে মনে চন্দ্রতারাকে সাক্ষী করিল। চক্ষু মুদিয়া বলিল, “প্রতাপ ! আজিও এ মরা গঙ্গায় চাদের আলো কেন ?” প্রতাপ বলিল, “র্চাদের ? না ; স্বৰ্য্য উঠিয়াছে —শৈ ! আর ভয় নাই । কেহ তাড়াইয়া অসিতেছে না ।" শৈ । তবে চল, তীরে উঠি । ఆ ! శ ! শৈ। কি ? প্র । মনে পড়ে ? শৈ ! কি ? প্র । আর এক দিন এমনই সাতার দিয়াছিলাম । শৈবলিনী উত্তর দিল না | এক খণ্ড বৃহৎ কাষ্ঠ ভাসিয়া যাইতেছিল, শৈবলিনী তাহ পরিল : প্রতাপকে বলিল, “ধর, ভর সহিবে । বিশ্রাম কর।” প্রতাপ কাষ্ঠ ধরিল ; বলিল, “মনে পড়ে ? তুমি ডুৰিতে পারিলে ন-আমি ডুবিলাম ?" শৈবলিনী বলিল, “মনে পড়ে। তুমি যদি আবার সেই নাম ধরিয়া আজ না ডাকিতে, তবে আজ তার শোধ দিতাম ! কেন ডাকিলে ?” প্র । তবে মনে আছে যে, আমি মনে করিলে ডুবিতে পারি ? শৈবলিনী শঙ্কিত হইয়া বলিল, “কেন প্রতাপ ? চল, তীরে উঠি ” - প্র । আমি উঠিব না। আজি মরিব । প্রতাপ কাষ্ঠ ছাড়িল । শৈ । কেন প্রতাপ ? প্র । তামাস নয়—নিশ্চিত ডুবিব—তোমার হাত । শৈ । কি চাও প্রতাপ ? যা বল তাই করিব । প্র · একটি শপথ কর, তবে আমি উঠিব। শৈ। কি শপথ, প্রতাপ ? শৈবলিনী কাষ্ঠ ছাড়িয়া দিল । তাহার চক্ষে তারা সব নিবিয়া গেল । চন্দ্র কপিশবর্ণ ধারণ করিল। নীল জল নীল অগ্নির মত জলিতে লাগিল । ফষ্টর আসিয়া যেন সম্মুখে তরবারি-হস্তে দাড়াইল। শৈবলিনী রুদ্ধনিশ্বাসে বলিল, “কি শপথ, প্রতাপ ?” উভয়ে পাশাপাশি কাষ্ঠ ছাড়িয়া সাতার দিতেছিল । গঙ্গার কলকল চল-চল জলভঙ্গ-রবমধ্যে এই ভয়ঙ্কর কথা হইতেছিল ; চারিপাশে প্রক্ষিপ্ত বারিকণামধ্যে চন্দ্ৰ হাসিতেছিল । জড় প্রকৃতির দৌরাত্ম্য ! “কি শপথ, প্রতাপ ?” প্র । এই গঙ্গার জলে -- শৈ । আমার গঙ্গ। কি ? প্র । তবে ধৰ্ম্ম সাক্ষা করিমু বল— শৈ । আমার ধৰ্ম্মই ব| কোথায় ? প্র । তবে আমার শপথ ? শৈ ; কাছে আইস—হাত দাও ; প্রতাপ নিকটে গিয়া, বহুকাল পরে শৈবলিনার হাত ধরিল । দুষ্ট জনের সা তার দেওয়া ভার হইল । আবার উভয়ে ক{ষ্ঠ ধরিল ৷ শৈবলিনা বলিল, “এখন যে কথা বল, শপথ করিয়। বলিতে পারি –কত কাল পরে প্রতাপ ?” প্র · আমার শপথ কর, নহিলে ডুবিব ! কিসের জষ্ঠ প্ৰাণ ? কে সাধ করিয়। এ পপিজীবনের ভার সহিতে চায় ? চাদের আলোয় এই স্থির গঙ্গার মাঝে যদি এ বোঝা নামাইতে পারি, তবে তার চেয়ে আর সুখ কি ? উপরে চন্দ্ৰ হাসিতেছিল । শৈবলিনা বলিল, “তোমার শপথ-কি বলিব ?” প্র । শপথ কর, আমাকে স্পর্শ করিয়া শপথ কর –আমার মরণবাচন শুভাশুভের তুমি দায়ী— শৈ । তোমার শপথ –তুমি যা বলিবে, ইহজন্মে তাহাই আমার স্থির । প্রতাপ অতি ভয়ানক শপথের কথা বলিল । সে শপথ শৈবলিনার পক্ষে অতিশয় কঠিন, অতিশয় রুক্ষ, তাহার পালন অসাধ্য, প্রাণান্তকর ; শৈবলিনী শপথ করিতে পারিল না ; বলিল—“এ সংসারে আমার মত দুঃখী কে আছে, প্রতাপ ?” প্র । আমি । শৈ । তোমার ঐশ্বৰ্য্য আছে—বল আছে— কীৰ্ত্তি আছে-বন্ধু আছে-ভরসা আছে—ব্ধপসী আছে—আমার কি আছে, প্রতাপ ?