পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/১১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চন্দ্রশেখর প্র। কিছু না—আইস, তবে দুই জন ডুবি । শৈবলিনী কিছুক্ষণ চিন্তা করিল। চিস্তার ফলে তাহার জীবন-নদীতে প্রথম বিপরীত তরঙ্গ বিক্ষিপ্ত হইল । “আমি মরি তাহাতে ক্ষতি কি ? কিন্তু আমার জন্য প্রতাপ মরিবে কেন ?" প্রকাশ্বে বলিল, “তীরে চল ।” প্রতাপ অবলম্বন ত্যাগ করিয়৷ ডুবিল। তখনও প্রতাপের হাতে শৈবলিনীর হাত ছিল, শৈবলিনী টানিল । প্রতাপ উঠিল । শৈ । আমি শপথ করিব । কিন্তু তুমি একবার ভাবির দেখ । আমার সর্বস্ব কড়িয়া লইতেছ । আমি তোমাকে চাহি না । তোমার চিন্তা কেন ছাড়িব ? প্রতাপ হাত ছাড়িল । শৈ পলিন; আবার পরিল । তখন অতি গম্ভীর, স্পষ্টশীত, অথচ বাষ্পপিরুত স্বরে শৈবলিনী কথ। কহিতে লাগিল-বলিল, - “প্রতাপ, হাত চাপিয়া ধর, প্রতাপ, শুন, তোম। স্পর্শ করিয়া শপথ করিতেছি—তোমার মরণ-পূlচন শুভাশুভ আমার দায় । শুন, তোমার শপথ ! আজি হইতে তোমাকে ভুলিব । আজি হষ্টতেই আমার সৰ্ব্বমুখে জলাঞ্জলি ! আজি হইতে আমি মনকে দমন করিব । আজি হইতে শৈবলিণী মরিল ।” শৈবলিনী প্রতাপের হাত ছাড়িয়। দিল - কাষ্ঠ ছাড়িয়া দিল । প্রতাপ গদগদ কণ্ঠে বলিল, “চল, তীরে উঠি ” উভয়ে গিয়। তীরে উঠিল । পদব্রজে গিয়। বাক ফিরিল । ছিপ নিকটে ছিল, উভয়ে তাহাতে উঠিয় ছিপ খুলিয়। দিল । উভয়ের মধ্যে কেহ জানিত ন যে, রমানন্দ স্বামী তাহাদিগকে বিশেষ অভিনিবেশের সহিত লক্ষা করিতেছেন । এ দিকে ইংরেজের লোক তখন মনে করিল, কয়েদী পলাইল । তাহারা পশ্চাদবর্তী হইল”; কিন্তু ছিপ শীঘ্র অদৃশু হুইল । রূপসীর সঙ্গে মোকদ্দমার আরজি পেষ না হইতেই শৈবলিনীর হার হইল । ‘. সপ্তম পরিচ্ছেদ রামচরণের মুক্তি প্রভাপ যদি পলাইল, তবে রামচরণের মুক্তি সহজেই ঘটিল। রামচরণ ইংরেজের নৌকায় বন্দিভাবে ছিল না । তাহারই গুলীতে যে ফক্টরের আঘাত ও כ9א শাস্ত্রীর নিপাত ঘটিয়াছিল, তাহ কেহ জানিত না । তাহাকে সামান্য ভূত্য বিবেচনা করিয়া আমিয়ট মুঙ্গের হইতে যাত্রাকালে ছাড়িয়া দিলেন । বলিলেন, “তোমার মুনিৰ বড় বদজাত, উহাকে আমরা সাজা দিব, কিন্তু তোমাতে আমাদের কোন প্রয়োজন নাই । তুমি যেখানে ইচ্ছ। যাইতে পার ” শুনিয়া রামচরণ সেলাম করিয়া যুক্ত করে বলিল, “আমি চাষা গোয়ালা –কথা জানি ন। --রাগ করিবেন না - আমার সঙ্গে আপনাদের কি কোন সম্পর্ক আছে ?” তামিয়টকে কেহ কথা বুঝাইয়। দিলে, অমিয়ট, জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেন ?” রা। নহিলে আমার সঙ্গে তামাস করিবেন কেন ? আমিয়ট । কি তামাসা ? র . অামাব প। ভাঙ্গির দিয়া যেখানে ইচ্ছা সেইখানে যাইতে বলায়, বুঝায় যে, আমি আপনাদের বাড়ী বিবাহ করিয়াছি । আমি গোয়ালার ছেলে, ইংরেজের ভগিনী বিবাহ করিলে আমার জাত যাবে। দ্বিভাষী অামিয়টকে কথা বুঝাইয়া দিলেও তিনি কিছু বুঝিতে পারিলেন না । মনে ভাবিলেন, এ বুঝি এক প্রকার এ দেশী খোসামোদ ! মনে করিলেন, যেমন নেটিবের খোসামোদ করিয়া, মা বাপ ভাই' এইরূপ সম্বন্ধস্থচক শব্দ ব্যবহার করে, রামচরণ সেইরূপ খোসামোদ করিষ। তাহাকে সম্বন্ধী বলিতেছে । আমিয়ট নিতান্ত অপ্রসন্ন হইলেন ন| জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি চও কি ?” রামচরণ বলিল, “আমার পা জোড়া দিয়া দিতে হুকুম হউক " আমিয়ট হাসিয়া বলিলেন, “আচ্ছা, তুমি কিছু দিন আমাদিগের সঙ্গে থাক, ঔষধ দিব।” রামচরণ তাহাই চায়। প্রতাপ বন্দী হইয়া চলিলেন, রামচরণ তাহার সঙ্গে থাকিতে চায় । সুতরাং রামচরণ ইচ্ছাপূৰ্ব্বক আমিয়টের সঙ্গে চলিল। সে কয়েদ রহিল না । ষে রাত্রে প্রতাপ পলায়ন করিল, সেই রাত্রে রামচরণ কাহাকে কিছু না বলিয়া নৌকা হইতে নামিয়া ধীরে ধীরে চলিয়া গেল। গমনকালে রামচরণ অফুট স্বরে ইণ্ডিলমিণ্ডিলের পিতৃমাতৃভগিনী সম্বন্ধে অনেক নিনাস্থচক কথা বলিতে ৰলিতে গেল। পা জোড়া লাগিয়াছিল ।