পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/১২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

=력 덕ee) প্রচ্ছদন প্রথম পরিচ্ছেদ অামিয়টের পরিণাম মুরশিদাবাদে আসিয়া ইংরেজের নৌকাসকল পৌছিল। মীর কাসেমের নায়েব মহম্মদ তকি গার নিকট সংবাদ আসিল যে, অমিয়ট পৌঁছিয়াছে। মহাসমারোহের সহিত আসিয়া মহম্মদ তকি অামিয়টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিলেন । অমিয়ট আপ।ায়িত হইলেন। মহম্মদ তকি খ পরিশেষে আমিয়টকে আহারার্থ নিমন্ত্রণ করিলেন । আমিয়ট অগত্য স্বীকার করিলেন ; কিন্তু প্রফুল্লমনে নহে। এদিকে মহম্মদ তকি দুরে অলক্ষি তরূপে প্রহরী নিযুক্ত করি লেন—ইংরেজের নৌকা খুলিয়। না যায়। মহম্মদ তকি চলিয়া গেলে, ইংরেজেরা পরামর্শ করিতে লাগিলেন যে, নিমন্ত্রণে যাওয়া কৰ্ত্তব্য কি না ? গলুণ্ঠন ও জনূসন এই মত ব্যক্ত করিলেন যে, ভয় কাহাকে বলে, তাহা ইংরেজ জানে না, জানাও কৰ্ত্তব্য মহে । সুতরাং নিমন্ত্রণে যাইতে হইবে । আমিয়ট বলিলেন, “যখন ইহাদের সঙ্গে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হইতেছি এবং অসদ্ভাব যত দূর হইতে হয় হইয়াছে, তখন আবার ইহাদিগের সঙ্গে আহার-ব্যবহার কি ?” আমিযুট স্থির করিলেন, নিমন্ত্রণে যাইবেন না । এ দিকে যে নৌকায় দলনী ও কুলুসম বন্দিস্বরূপে সংরক্ষিতা ছিলেন, সে নৌকাতেও নিমন্ত্রণ-সংবাদ পৌঁছিল। দলনী ও কুলসম কানে কানে কথা কহিতে লাগিল। দলনী বলিল, “কুলসম্—শুনিভেচ্ছ ? বুঝি মুক্তি নিকট “ কু । কেন ? দ। তুই যেন কিছুষ্ট বুঝিস না ; যাহারা নবীবের বেগমকে কয়েদ করিয়া আনিয়াছে—তাহীদের ষে, নবাবের পক্ষ হইতে সাদর নিমন্ত্রণ হইয়াছে, ইহার ভিতর কিছু গুঢ় অর্থ আছে। বুঝি, আজি ইংরেজ মরিবে । কু। তাতে কি তোমার আহলাদ হইয়াছে ? দ। নহে কেন ? একটা রক্তারক্তি না হইলেই ভাল হয়। কিন্তু যাহার। আমাকে অনর্থক কয়েদ করিয়া আনিয়াছে, তাহারা মরিলে যদি আমরা মুক্তি পাই, তাহাতে আমার আহলাদ বৈ কি । কু। কিন্তু মুক্তির জন্য এত ব্যস্ত কেন ? আমাদের আটক রাখা ভিন্ন ইহাদের আর কোন অভিসন্ধি দেখা যায় না। আমাদের উপর আর কোন দৌরাত্মা করিতেছে না,কেবল আটক । আমরা স্ত্রীজাতি, যেখানে যাইব, সেইখানেই আটক । দলনী বড় রাগ করিল। বলিল, “আপন ঘরে থাকিলেও আমি দলনী বেগম, ইংরেজের নৌকায় আমি বাদী । তোর সঙ্গে কথা কহিতে ইচ্ছা করে না । আমাদের কেন আটক করিয়া রাখিয়াছে, বলিতে পারিস ?” কু। তা ত বলিয়াই রাখিয়াছি । মুঙ্গেরে যেমন হে সাহেব ইংরেজের জামিন হইয়া আটক । আছে, আমরাও তেমনই নবাবের জামিন হইয়া ইংরেজের কাছে আটক আছি । হে সাহেবকে ছাড়িয়া দিলেই আমাদিগকে ছাড়িয়া দিবে । হে সাহেবের কোন অনিষ্ট ঘটিলেই আমাদেরও অনিষ্ট ঘটিবে ; নহিলে ভয় কি ? দলনী আরও রাগিল, বলিল, “আমি তোর হে সাহেবকে চিনি না, তোর ইংরেজের গোড়ামি শুনিতে চাহি না, ছাড়িয়া দিলেও তুই বুঝি যাইবি না ?” কুলুসম রাগ না করিয়া হাসিয়া বলিল, “যদি আমি ন যাই, তবে তুমি কি আমাকে ছাড়িয় মাও ?” দলনীর রাগ বাড়িতে লাগিল ; বলিল, “তাও কি সাধ না কি ?” কুল্সম গম্ভীরভাবে বলিল, “কপালের লিখন কি বলিতে পারি ?” দলনী ক্র কুঞ্চিত করিয়৷ বড় জোরে একটা কিল উঠাইল । কিন্তু কিলটি আপাততঃ পূজি করিয়া রাখিল—ছাড়িল না । দলনী আপন কর্ণের নিকট সেই কিলটি উথিত করিয়া— -গুচ্ছসংস্পর্শে যে কৰ্ণ, সুভ্রমর প্রস্ফুট কুস্থমবৎ শোভা পাইতেছিল, তাহার নিকট কোমলকোরকতুল্য বদ্ধ মুষ্টি স্থির করিয়া বলিল, “তোকে আমিয়ট দুই দিন কেন ডাকিয়া লইয়া গিয়াছিল, সত্য কথা বল্ ত ?”