পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/১৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ృ:R করিয়া উঠিল । কিন্তু স্থায় খঙ্গ রাখিয়াছিল, তথায় খড়গ পাইল না। আশ্চর্য ! কাপালিক কিছু বিস্মিত হইল। তাহার নিশ্চিত মনে হইতেছিল যে, অপরাহ্লে খড়গ আনিয়া উপযুক্ত স্থানে রাখিয়াছিল এবং স্থানাস্তরও করে নাই, তবে খড়গ কোথায় গেল ? কাপালিক ইতস্ততঃ অনুসন্ধান কবিল, কোথাও পাইল না। তখন পূৰ্ব্বকথিত কুটারাভিমুখ হইয়া কপাল কুণ্ডলাকে ডাকিল, কিন্তু পুনঃ পুনঃ ডাকাতেও কপাল" কুণ্ডলা কোন উত্তর দিল না। তখন কাপালিকের চক্ষু লোহিত, ক্রযুগ আকুঞ্চিত হইল। দ্রুত পদবিক্ষেপে গৃহাভিমুখে চলিল ; এই অবকাশে বন্ধনলতা ছিন্ন করিতে নবকুমার আর একবার যত্ন পাইলেন–কিন্তু সে ষত্বও নিষ্ফল হুইল । এমন সময়ে নিকটে বালুকার উপর অতি কোমল পদধ্বনি হইল—এ পদধ্বনি কাপালিকের নহে ! নব কুমার নয়ন ফিরাইয়। দেখিলেন, সেই মোহিনীকপালকুণ্ডলা । তাহার করে খড়গ দুলিতেছে । কপালকুণ্ডল কহিলেন, "চুপ! কথা কহিও ন— খড়গ আমারই কাছে—চুরি করিয়া রাখিয়াছি।” এই বলিয়া কপালকুণ্ডলা অতি শীঘ্রহস্তে নবকুম। রের লতাবন্ধন খড়গ দ্বারা ছেদন করিতে লাগিলেন । নিমেষের মধ্যে র্তাহাকে মুক্ত করিলেন । কহিলেন, “পলায়ন কর ; আমার পশ্চাৎ আইস. পথ দেখাইয়া দিতেছি ।” এই বলিয়া কপালকুণ্ডলা তীরের স্যায় বেগে পথ দেখাইয়া চলিলেন। নবকুমার লম্ফদান করিয়। তাঙ্গার অমুসরণ করিলেন । সপ্তম পরিচ্ছেদ অন্বেষণে And the great Iord of luna Fell at that deadiy stroke : As falls on mount Alverinus A thunder-smitten oak.” —Lays of Ancient Rome. এ দিকে কাপালিক গৃহমধ্যে তন্ন তন্ন করিয়া অনুসন্ধান করিয়া, না খঙ্গ। ন কপালকুণ্ডলাকে দেখিতে পাইয়া, সন্দিগ্ধচিত্তে সৈকতে প্রত্যাবৰ্ত্তন করিল। তথায় আসিয়া দেখিল যে, নবকুমার তথায় নাই । ইহাতে অত্যন্ত বিস্ময় জন্মিল । কিয়ৎক্ষণ পরেই ছিন্ন লতাবন্ধনের উপর দৃষ্টি পড়িল। তখন বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী স্বরূপ অনুভূত করিতে পারিয়া কাপালিক নবকুমারের অন্বেষণে ধাবিত হইল ; কিন্তু বিজনমধ্যে পলাতকের কোন দিকে কোন পথে গিয়াছে, তাহা স্থির করা চঃসাধ্য। অন্ধকারবশতঃ কাহাকেও দৃষ্টিপথবর্তী করিতে পারিল না । এ জন্য বাক্যশব্দ লক্ষ্য করিয়৷ ক্ষণেক ইতস্ততঃ ভ্রমণ করিতে লাগিল । কিন্তু সকল সময়ে কণ্ঠধ্বনিও শুনিতে পাওয়া গেল ন} । অতএব বিশেষ করিয়া চারিদিক্ পর্যবেক্ষণ করিবার অভিপ্রায়ে এক উচ্চ বালিয়াড়ির শিখরে উঠিল । কাপালিক এক পাশ্ব দিয়া উঠিল ; তাহার অন্ততর পাশ্বে বর্ষার জলপ্রবাহে স্তপমূল ক্ষরিত হইয়াছিল, তাহা সে জানিত না । শিখরে আরোহণ করিবামাত্র কাপালিকের শরীরভরে সেই পতনোন্মুখ স্ত,পশিখর ভগ্ন হইয়। অতি ঘোর-রবে ভূপতিত হইল । পতনকালে পৰ্ব্বতশিখরচু্যত মহিষের দ্যায় কাপালিকও তৎসঙ্গে পড়িয়া গেল । অষ্টম পরিচ্ছেদ আশ্রয়ে “And that very might Shall Romeo bear theo to Mantua.” —Romeo and Juliet. সেষ্ট অমাবস্তার ঘোরান্ধকার যামিনীতে দুই জনে উৰ্দ্ধশ্বাসে বনমধ্যে প্রবেশ করিলেন । বন্যপথ নবকুমারের অপরিজ্ঞাত : কেবল সহচারিণী ষোড়শীকে লক্ষ্য করিয়া ভদ্বত্মসংবর্তী হওয়া ব্যতীত তাহার অঙ্গ উপায় নাই । কিন্তু অন্ধকারে বনমধ্যে রমণীকে সকল সময়ে দেখা যায় না, যুবতী একদিকে ধাবমান। তইলে, নবকুমার অন্য দিকে যান। রমণী কহিলেন, “আমার অঞ্চল ধর ” নবকুমার ক্টাঙ্গার অঞ্চল ধরিয়া চলিলেন । ক্রমে তাহারা পাদক্ষেপ মন্দ করিয়া চলিতে লাগিলেন । অন্ধকারে কিছুই লক্ষ্য হয় না ; কেবল কখন কোথায় নক্ষত্রলোকে কোন বালুকাস্তুপের শুভ্র শিখর অস্পষ্ট দেখা যায়, কোথাও খদ্যোতমালাসংরত বৃক্ষের অবয়ব জ্ঞানগোচর হয় । কপালকুণ্ডল পথিককে সমভিব্যাহারে লইয়া নিভৃত কাননাভ্যস্তরে উপনীত হইলেন । তখন রাত্রি দ্বিতীয় প্রহর। সম্মুখে অন্ধকারে বনমধ্যে এক অত্যুচ্চ দেবালয়চূড়া লক্ষিত হইল ; তন্নিকটে ইষ্টকনিৰ্ম্মিত