পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/১৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

"Φλερ বিস্তৃত হইতে পারিব না । কিন্তু শুন ভগিনি ! অকস্মাৎ মনের কবাট খুলল ; তুমি এ কথা শুনিলে ; কিন্তু আমার শপথ, এ কথ! যেন কণাস্তরে না স্বায় ।” মতি কহিল, “ভাল, তাহাই হইবে । কিন্তু যখন সেলিম শুনিবেন যে, আমি বৰ্দ্ধমানে আসিয়াছিলাম, তখন তিনি অবগু জিজ্ঞাসা করিবেন যে, মেহেরউন্নিসা আমার কথা কি বলিল ? তখন আমি কি উত্তর করিব ?” মেহের-উল্লিস। কিছুক্ষণ ভাবিয়া কহিলেন, “এই কহিও যে, মেহের-উল্লিস। হৃদয়মধ্যে র্তাহার ধ্যান করিবে । প্রয়োজন হইলে তাহার জষ্ঠ আত্মপ্রাণ পৰ্য্যন্ত সমর্পণ করিবে । কিন্তু কখন অপেন কুলমান সমর্পণ করিবে না । দাসীর স্বামী জীবিত থাকিতে সে কখন দিল্লীশ্বরকে মুখ দেখাইবে না। আর যদি দিল্লীশ্বর কর্তৃক তাহার স্বামীর প্রাণাস্ত হয়, তবে স্বামিহুস্তার সহিত ইহজন্মে তাহার মিলন হইবে না ।” ইহ। কহিয়৷ মেহের-উল্লিস। সেই স্থান হইতে উঠিয়। গেলেন । মতিবিবি চমৎক্ল ত হইয়৷ রহিলেন, কিন্তু মতিবিবিরই জয় হইল । মেহের উন্নিসার চিত্তের ভাব মতিবিবি জানিলেন ; মতিবিবির আশা-ভরসা মেহের-উল্লিসা কিছুই জানিতে পারিলেন ন| ধিনি পরে আত্ম-বুদ্ধি প্রভাবে দিল্লীশ্বরেরও ঈশ্বরী হইয়। ছিলেন, তিনিও মতির নিকট পরাজিত হইলেন । ইহার কারণ, মেহের-উল্লিস। প্রণয়শালিনী, মতিবিবি এস্থলে কেবলমাত্র স্বার্থপরায়ণ । মনুষ্য হৃদয়ের বিচিত্র গতি মতিবিবি বিলক্ষণ বুঝিতেন । মেহেরউন্নিসার কথা আলোচনা করিয়৷ তিনি যাহা সিদ্ধাস্ত করিলেন, কালে তাহাই যথার্থীভূত হইল। তিনি বুঝিলেন যে, মেহেরউন্নিসা জার্তাগরের যথার্থ অনুরাগিণী ; অতএব নারীদপে এখন যাহাই বলুন, পথ মুক্ত হইলে মনের গতি রোধ করিতে পারিবেন না। বাদশাহের মনস্কামনা অবশু সিদ্ধ করিবেন । এ সিদ্ধান্তে মতির আশাভরসা সকলই নিৰ্ম্মল হইল। কিন্তু তাহাতে কি মতি নিতান্তই দুঃখিত হইলেন ? তাহা নহে । বরং ঈষৎ সুখানুভবও হুইল । কেন যে এমন অসম্ভব চিত্তপ্রসাদ জন্মিল, তাহা মতি প্রথমে বুঝিতে পারিলেন না । তিনি আগ্রার পথে যাত্রা করিলেন, পথে কয়েক দিন গেল । সেই কয়েক দিনে আপন চিত্তভাব বুঝিলেন। বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী চতুর্থ পরিচ্ছেদ রাজনিকেতনে “পত্নীভাবে আর তুমি ভেবে না আমারে " —বীরাঙ্গন কাব্য । মতি আগ্রায় উপনীত হইলেন । আর র্তাহাকে মতি বলিবার আবখ্যক করে না। কয়দিনে তাহার চিত্তবৃত্তি সকল একেবাবে পরিবৰ্ত্তিত হইয়াছিল । _ জাৰ্ভাগীরের সহিত র্তাহার সাক্ষাৎ হইল। জার্চ গীর তাহাকে পূৰ্ব্ববৎ সমাদর করিয়া তাহার সহোদরের সংবাদ ও পথের কুশল জিজ্ঞাসা করিলেন । লুৎফউল্লিস। যাহা মেতের উন্নিসাকে বলিয়াছিলেন,তাহা সত্য হটল । অন্যান্য প্রসঙ্গের পর বর্দ্ধমানের কথ। শুনিয়। জাৰ্হাগীধ জিজ্ঞাসা করিলেন, “মেহের-উগ্লিসার নিকট দুই দিন ছিলে বলিতেছ, মেহেরউন্নিসা আমার কথ। কি বলিল ?” লুৎফউল্লিস। অকপটহ্নদয়ে মেহের-উল্লিসার অনুরাগের পরিচয় দিলেন । বাদশাহ শুনির নীরবে রছিলেন ; তাহার বিস্ফারি ত লোচনে দুই এক বিন্দু অশ্র বহিল। লুৎফউল্লিসা কহিলেন, “জাঙ্গাপন ! দার্সী শুভ সংবাদ দিয়াছে । দাসীর এখনও কোন পুৰস্কারের আদেশ হয় নাই ।” বাদশাহ হাসিয়া কহিলেন, “ধিবি ! আকাঙ্ক্ষ। অপরিমিত ।” লু । জার্কাপনা ! দাসীর কি দোষ ? বাদ । দিল্লীর বাদশাহকে তোমার গোলাম করিম দিয়াছি ; আরও পুরস্কার চাহিতেছ? লুৎফউগ্লিস হাসিয়া কহিলেন, “স্ত্রীলোকের অনেক সাধ ” তোমার বাদ । আবার কি সাধ হইয়াছে ? লু । আগে রাজাঞ্জা হউক যে, দাসীর আবেদন গ্রাহ্য হইবে । বাদ । যদি রাজকাৰ্য্যের বিঘ্ন না হয় । লু । ( হাসিয়া ) একের জন্ত দিল্লীশ্বরের কার্য্যের বিঘ্ন হয় না । - বাদ । তবে স্বীকৃত হইলাম ;-সাধটি কি, শুনি । লু। সাধ হইয়াছে, একটি বিবাহ করিব । জাহঁাগর উচ্চহাস্ত করিয়া উঠিলেন । কহিলেন, “এ নূতনতর সাধ বটে। কোথাও সম্বন্ধের স্থিরত] হইয়াছে ?”