পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/১৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88 হইল । অদ্যও সে তাহার সাক্ষাতে যাইতেছে । দেখিতে চাও, আমার সহিত আইস, দেখাইব । “বৎস! কপালকুণ্ডলা বধযোগ্য—আমি ভবানীর আজ্ঞাক্রমে তাহাকে বধ করিব। সে ও তোমার নিকট বিশ্বাসঘাতিনী-তোমারও বধযোগ্য, অতএব তুমি আমাকে সে সাহায্য প্রদান কর । এই অবিশ্বাসিনীকে ধৃত করিয়া আমার সহিত যজ্ঞস্থানে লইয়া চল তথায় স্বহস্তে ইহাকে বলিদান কর । ইহাতে ঈশ্বরীর সমীপে যে অপরাধ করিয়াছ, তাহার মার্জন হুইবে ; পবিত্র কৰ্ম্মে অক্ষয় পুণ্যসঞ্চয় হইবে, বিশ্বাসঘাতিনীর দণ্ড হইবে ; প্রতিশোধের চরম হইবে।” কাপালিক বাক্য সমাপ্ত করিলেন । নবকুমার কিছুই উত্তর করিলেন না। কাপালিক র্তাহাকে নীরব দেখিয়া কহিলেন “বৎস! এক্ষণে যাহা দেখাইব বলিয়াছিলাম, তাহা দেখিবে চল ।” নবকুমার ঘৰ্ম্মাক্তকলেবর হইয়া কাপালিকের সঙ্গে চলিলেন । সপ্তম পরিচ্ছেদ সপত্নীসন্তাষে "Be at peace; it is your sister that ad dresses you. Requito Lucretia's love.” –Lucretia. কপালকুণ্ডল গৃহ হইতে বহির্গত হইয়া কাননা ভ্যন্তরে প্রবেশ করিলেন । প্রথমে ভগ্নগৃহমধ্যে গেলেন । তথায় ব্রাহ্মণকে দেখিলেন । যদি দিনমান হইত, তবে দেখিতে পাইতেন যে, তাহার মুখকাস্তি অত্যন্ত মলিন হুইয়াছে । ব্রাহ্মণবেশী, কপালকুণ্ডলাকে কহিলেন যে, “এখানে কাপালিক আসিতে পারে, এখানে কোন কথা অবিধি । স্থানান্তরে আইস ।” বনমধ্যে একটি অল্পায়ত স্থান ছিল, তাহার চতুষ্পার্থে বৃক্ষরাজি ; মধ্যে পরিষ্কার ; তথা হইতে একটি পথ বাহির হইয়া গিয়াছে। ব্রাহ্মণবেশী, কপালকুণ্ডলাকে তথায় লইয়া গেলেন । উভয়ে উপবেশন করিলে ব্রাহ্মণবেশী কহিলেন, “প্রথমতঃ আত্মপরিচয় দিই । কতদূর আমার কথা বিশ্বাসযোগ্য, তাহ। আপনি বিবেচনা করিয়া লইতে পারিবে । যখন তুমি স্বামীর সঙ্গে হিজলী প্রদেশ হইতে আসিতেছিলে, তখন পথিমধ্যে রজনীযোগে এক ষবনকন্যার সহিত সাক্ষাৎ হয় । তোমার কি তাহা মনে পড়ে ?” বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী কপালকুণ্ডল কহিলেন, “যিনি আমাকে অলঙ্কার দিয়াছিলেন ?” ব্রাহ্মণবেশধারিণী কহিলেন, “আমিই সেই ” কপালকুণ্ডলা অত্যন্ত বিস্মিত হইলেন । লুৎফউন্নিসা তাহার বিস্ময় দেখিয়া কহিলেন, “আরও বিস্ময়ের বিষয় আছে—আমি তোমার সপত্নী ।” কপালকুণ্ডলা চমৎকৃত হইয়। কহিলেন, “সে কি ?” লুৎফউন্নিসা তখন আনুপূৰ্ব্বিক আত্মপরিচয় দিতে লাগিলেন । বিবাহ, জাতিভ্রংশ, স্বামী কর্তৃক ত্যাগ, ঢাকা, আও, জাহঁাগীর, মেহের-উল্লিস, আগ্রাত্যাগ, সপ্তগ্রামে বাস, নবকুমারের সহিত সাক্ষাৎ নবকুমারের ব্যবহার, গত দিবস প্রদোষে ছদ্মবেশে কাননে আগমন, হোমকারীর সহিত সাক্ষাৎ—সকলই বলিলেন । এই সময় কপালকুণ্ডল জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি কি অভিপ্রায়ে আমাদিগের বাটীতে ছদ্মবেশে আসিতে বাসনা করিয়াছিলে ?” লুৎফউন্নিসা কহিলেন, “তোমার সহিত স্বামীর চিরবিচ্ছেদ জন্মাইবীর অভিপ্রায়ে ।” কপালকুণ্ডল চিন্তা করিতে লাগিলেন । কহিলেন, “তাহা কি প্রকারে সিদ্ধ করিতে ?” লুৎফউন্নিসা। আপাততঃ তোমার সতীত্বের প্রতি স্বামীর সংশয় জন্মাইয় দিতাম । কিন্তু সে কথায় আর কাজ কি, সে পথ ত্যাগ করিয়াছি । এক্ষণে তুমি যদি আমার পরামর্শমতে কাজ কর, তবে তোম৷ ইষ্টতেই আমার কামনা সিদ্ধ হইবে —অথচ তোমার মঙ্গলসাধন হইবে । কপ ! হোমকারীর মুখে তুমি কাহার নাম শুনিয়াছিলে ? লু ! তোমারই নাম । তিনি তোমার মঙ্গল বা অমঙ্গল কামনায় হোম করেন, ইহা জানিবার জন্য প্রণাম করিয়ু। তাছার নিকট বসিলাম । যতক্ষণ না তাহার ক্রিয় সম্পন্ন হইল, ততক্ষণ তথায় বসিয়া রহিলাম । হেমাস্তে তোমার নামসংযুক্ত হোমের ভপ্রায় ছলে জিজ্ঞাসা করিলাম । কিয়ৎক্ষণ র্তাহার সহিত কথোপকথন করিয়া জানিতে পারিলাম যে, তোমার অমঙ্গলসাধনই হোমের প্রয়োজন। আমারও সেই প্রয়োজন । ইহাও তাহাকে জানাইলায় । তৎক্ষণাৎ পরস্পরে সহায়তা করিতে বাধ্য হইলাম । বিশেষ পরামর্শজন্য তিনি আমাকে ভগ্নগৃহমধ্যে লইয়৷ গেলেন । তথায় আপন মনোগত অভিপ্রায় ব্যক্ত করিলেন । তোমার মৃত্যুই তাহার অভীষ্ট। তাহাতে আমার কোন ইষ্ট নাই , আমি ইহজন্মে কেবল পাপই করিয়াছি, কিন্তু পাপের পথে আমার এত দুর