পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/২০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

so বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী গৃহিণী ব্রজেশ্বরকে বলিয়া দিলেন, “তাড়াইবার সময় বউমাকে এই কথা বলিও । সে জিজ্ঞাসা করিয়াছিল ।” -> ব্ৰজেশ্বর পিতার নিকট হইতে বিদায় হইয়। ব্রহ্মঠাকুরাণীর নিকুঞ্জে গিয়া দর্শন দিলেন । দেখিলেন, ব্রহ্মঠাকুরাণী তদগতচিত্তে মালা-জপ করিতেছেন, আর মশা তাড়াইতেছেন । ব্রজেশ্বর বলিলেন, “ঠাকুরম !" ব্ৰহ্ম । কেন ভাই ? ব্রজ । আজ না কি নুতন খবর ? ব্ৰহ্ম । কি নুতন ? সাগর আমার চরকাটা ভেঙ্গে দিয়েছে, তাই ? তা ছেলেমানুষ, দিয়েছে দিয়েছে । চরকা কাটতে তার সাধ গিয়েছিল-- ব্রজ । তা নয়, তা নয়—বলি, আজ না কি-- ব্রহ্ম। সাগরকে কিছু বলিও না ; তোমরা বেঁচে থাক, আমার কত চরক হবে । তবে বুড়ো মানুষ– ব্রজ । বলি, আমার কথাটা শুনবে ? ব্ৰহ্ম । বুড়ো মানুষ, কবে আছি কবে নাই, ভুটো পৈতে তুলে বামুনকে দিই বই ত নয়। ত৷ ষাক্ গে— ব্রজ । আমার কথাটা শোন, নহিলে তোমার যত চরকা হবে, সব আমিই ভেঙ্গে দেব ! ব্ৰহ্ম । কি বল্‌ছ, চরকার কথা নয় ? ব্রজ । তা নয়—আমার দুইটি ব্রাহ্মণী আছে, জান ত ? ব্ৰহ্ম । ব্রাহ্মণী ? মা ম৷ মা ! যেমন ব্রাহ্মণী নয়ানবৌ, তেমনি ব্রাহ্মণী সাগরবেী-আমার হাড়টা খেলে—কেবল রূপকথা বল -- রূপকথা বল-রূপকথা বল ! ভাই, এত রূপকথা পাব কোথা ? ব্রজ । রূপকথা থাকৃ– ব্ৰহ্ম তুমি যেন বলুলে থাক, তারা ছাড়ে কই ? শেষে সেই বিহঙ্গমা-বিহঙ্গমীর কথা বলিলাম। বিহঙ্গমাবিহঙ্গমীর কথা জান ? বলি শোন। এক বনে বড় একটা শিমুল গাছে এক বিহঙ্গম-বিহঙ্গমী থাকে— ব্রজ । সৰ্ব্বনাশ ! ঠাকুরমা, কর কি ? এখন রূপকথা ! আমার কথা শোন । ব্ৰহ্ম । তোমার আবার কথা কি ? আমি বলি, রূপকথা শুনিতেই এয়েছ—তোমাদের ত অার কাজ নাই ? ব্ৰজেশ্বর মনে মনে ভাবিল, কবে বুড়ীদের yপ্রাপ্তি হবে । প্রকাস্তে বলিল, “আমার দুইটি ব্রাহ্মণী— আর একটি বাগিদনী । বাগিদনীটি না কি আজ এয়েছে ?” ব্ৰহ্ম । বালাই বালাই—বাদিনী কেন—সে বামুনের মেয়ে । ব্ৰজ | এয়েছে ? ব্ৰহ্ম ৷ ই ৷ ব্রজ । কোথায় ? একবার দেখা হয় না ? ব্ৰহ্ম ৷ ই । আমি দেখা করিয়ে দিয়ে তোমার বাপ-মা'র দু চক্ষের বিষ হই । তার চেয়ে বিহঙ্গমাবিহঙ্গমীর কথা শোন । ব্রজ । ভয় নাই—বাপ-ম। আমাকে ডাকাইয়া বলিয়াছেন—তাকে তাড়াইয়া দাও। তা দেখা না পেলে তাড়াইয়া দিব কি প্রকারে ? তুমি ঠাকুরমা, তোমার কাছে সন্ধানের জন্য আসিয়াছি । ব্ৰহ্ম। ভাই, আমি বুড়ো মানুষ-কৃষ্ণনাম জপ করি, আর আলোচাল খাই। রূপকথা শোন ত বলুতে পারি। বাগদীর কথাতেও নাই, বামনীর কথাতেও নাই। ব্রজ । হায়! বুড়ে বয়সে কবে তুমি ডাকাতের হাতে পড়িবে ! ব্ৰহ্ম । অমন কথা বলিস নে—বড় ডাকাতের ভয় ! কি, দেখা করবি ? ব্রজ । তা নইলে কি তোমার মালা জপা দেখতে এয়েছি ? ব্ৰহ্ম ৷ সাগর-বউয়ের কাছে যা । ব্রজ । সতীনে কি সতীনকে দেখায় ? ব্ৰহ্ম । তুই যা না, সাগর তোকে ডেকেছে। ঘরে গিয়ে বসে আছে । অমন মেয়ে আর হয় না । ব্রজ । চরক ভেঙ্গেছে বলে ? নয়ানকে ব’লে দেব, সে যেন একটা চরকা ভেঙ্গে দেয় । ব্ৰহ্ম । হা—সাগরে আর নয়ানে ! যা ! যা ! ব্রজ । গেলে বাগিদনী দেখতে পাব ? ব্ৰহ্ম । বুড়ীর কথাটাই শোন না ; কি জ্বালাতেই পড়লেম গা ! আমার মালা জপা হলো না, তোর ঠাকুরদাদার তেষট্রিটি বিয়ে ছিল—কিন্তু চোঁদ বছরই হোকৃ– আর চুম্বাত্তর বছরই হোকৃ—কই, কেউ ডাক্‌লে ত কখনও 'না' বলিত না । ব্রজ । ঠাকুরদাদার অক্ষয় স্বর্গ হোক, আমি চোঁদ বছরের সন্ধানের চলুলেম। ফিরিয়া আসিয়া চুম্বাত্তর বছরের সন্ধান লইব কি ? ব্ৰহ্ম । যা যা যা! আমার মালা জপা ঘুরে গেল । আমি নয়নতারাকে বলে দিব, তুই বড় চেঙ্গড়া হয়েছিস । ব্রজ । ব’লে দিও । খুলী হয়ে দুটো ছোলাভাজ দেবে। এই বলিয়া ব্ৰজেশ্বর সাগরের সন্ধানে প্রস্থান করিলেন ।