পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/২৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবী চৌধুরাণী তাহাতে ক্ষতি নাই, কিন্তু একটা কথা বুঝাইয়া দাও। শাদা নিশান দেখিয়াই দুই দলে যুদ্ধ বন্ধ করিল কেন ?” রঙ্গরাজ বলিল, “কচি খোকা আর কি ! জান না, শাদ নিশান দেখাইলে ইংরেজের আর যুদ্ধ করিতে নাই ।” ব্ৰঙ্গ । তা আমি জানি তাম না। তা আমি জানিয়াই করি, আর না জানিয়াই করি, রাণীজির হুকুমমত শাদ নিশান দেখাইয়াছি কি না, তুমি না হয় জিজ্ঞাসা করিয়া আইস । আর—তোমারও আজ্ঞা আছে যে, তুমি দরওয়াজ হইতে রাণীজির .হুকুম লইবে । রঙ্গরাজ বরাবর কামরার দরওয়া জায় গেল । কামরার দরওয়াজ বন্ধ আছে দেখিয়৷ বাহির হইতে ডাকিল, “রাণী-ম৷ ” ভিতর হইতে উত্তর, “কে রঙ্গরাজ ?” রঙ্গ । আঞ্জ| কুঁ|-–একট। শাদা নিশান আমাদের বজর হইতে দেখান হষ্টয়াছে—"লড়াই সেই জন্যই বন্ধ আছে । ভিতর ইষ্টতে—“সে আমারই হুকুমমত হইয়াছে । এখন তুমি ঐ শাদ৷ নিশান লইয়। লেফটেনাণ্ট সাহেবের কাছে সাও। গিয়া বল যে, লড়াইয়ে প্রয়োজন নাই, আমি পর দিব ।” রঙ্গ । আমার শরীর থাকিতে তাই কিছুতেই হইবে না । দেবী । শরীরপ ও করিয়াও আমায় করিতে পরিবে না । রঙ্গ । তথাপি শরীরপাত করিব । দেবী ! শোণ, মূর্গের মত গোল করিও না । তোমরা প্রাণ দিয়৷ আমীয় বাচাইতে পারিখে না—এ সিপাহীর বন্দুকের কাছে লাঠিসোটা কি করিবে ? রঙ্গ । কি না করিবে ? দেবী । যাই করুক--অার একবিন্দু রক্তপাত হুইবার আগে আমি প্রাণ দিব, বাহিরে গিয়া গুলীর মুখে দাড়াইব--রাখিতে পারিবে না, বরং এখন আমি ধরা দিলে পলাইবার ভরসা রহিল । বরং এক্ষণে অপেন আপন প্রাণ রাখিয়া সুবিধামত ধাহাতে আমি বন্ধন হুইতে মুক্ত হইতে পারি, সে চেষ্টা করিও । আমার অনেক টাকা আছে । কোম্পানীর লোকসকল অর্থের বশ—আমার পলাইবার ভাবনা কি ? দেবী মুহূৰ্ত্ত জন্যও মনে করেন নাই যে, ঘুম দিয়া তিনি পলাইবেন। সে রকমে পলাইবার ইচ্ছাও ছিল না । এ কেবল রঙ্গরাজকে ভুলাইতেছিলেন। তার রক্ষা 4న মনের ভিতর যে গভীর কৌশল উদ্ভাবিত হইয়াছিল, রঙ্গরাজের বুঝিবার সাধ্য ছিল না—সুতরাং রঙ্গরাজকে, তাহা বুঝাইলেন না। সরলভাবে ইংরেজকে ধরা: দিবেন, ইহা স্থির করিয়াছিলেন। কিন্তু ইহাও বুঝিয়াছিলেন যে, ইংরেজ আপনার বুদ্ধিতে সব খোয়াইবে । ইহাও স্থির করিয়াছিলেন যে, শত্রুর কোন অনিষ্ট করিবেন না, বরং শত্রুকে সতর্ক করিয়া দিবেন। তবে স্বামী, শ্বশুর, সর্থীদিগের উদ্ধারের জন্য যাহা অবশু কৰ্ত্তব্য, তাহাও করিবেন । মাহ। যাহ। হইবে, দেবী যেন দর্পণের ভিতর সকল দেখিতে পাইতেছিলেন । রঙ্গরাজ বলিল, “যাই দিয়া কেম্পানীর লোক বশ করিবেন, তাহা ত বজরাতেই আছে। আপনি ধরা দিলে ইংরেজ বজরাও লইবে ।” দেবী । সেইটি নিসেপ করিও । বলিও যে, আমি ধরা দিব, কিন্তু বজরা দিব না ; বজরায় যাহা আছে, তাহার কিছুই দিব না ; বজরায় যাহারা আছে, তাহীদের কাহাকেও তিনি ধরিতে পারিবেন না । এই নিয়মে আমি ধরা দিতে রাজি । श्रृंश । আসে ? 變 দেবী । বরণ করিও —বজরামু না আসে, বঞ্জরা ন। স্পর্শ করে । বলিও যে, তাই করিলে ইংরেজের বিপদ ঘটিবে । বজরায় আসিলে আমি ধরা-দিব না । যে মুহূত্তে ইংরেজ বজরায় উঠিবে, সেই দণ্ডে আবার যুদ্ধ আরম্ভ জানিবেন । আমার কথায় তিনি স্বীকৃত হুইলে, তাহাদের কাহাকে এখানে আসিতে হইবে না, আমি নিজে তাহার ছিপে যাইব । রঙ্গরাজ বুঝিল, ভিতরে একটা কি গভীর কৌশল আছে, দৌত্যে স্বীকৃত ইষ্টল। তখন দেবী তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “ভবানী ঠাকুর কোথায় ?” রঙ্গ তিনি তারে বরকন্দাজ লষ্টয়া যুদ্ধ করিতেছেন। আমার কথা শোনেন নাই । বোৰ করি, এখনও সেঈখানে আছেন । দেবী । আগে তার কাছে যা ৪। সব বরকন্দাজ লইয়। নদীর তীরে তীরে স্বস্থানে যাইতে বল। বলিও যে, আমার বজরার লোকগুলি রাখিয় গেলেই যথেষ্ট হইবে । আর বলিও যে, আমার রক্ষার জ? আর যুদ্ধের প্রয়োজন নাই—আমার রক্ষার জন্য ভগবান উপায় করিয়াছেন । ইহাতে যদি তিনি আপত্তি করেন, আকাশপানে চাহিয়া দেখিতে বলিও-তিনি বুঝিতে পারিবেন। ইংরেজ যদি না গুণে, যদি বজরা লুঠিতে