পাতা:প্রাচীন বাঙ্গলা সাহিত্যে মুসলমানের অবদান.djvu/৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রাচীন বাঙ্গলা সাহিত্যে মুসলমানের অবদান 8 যখন ভক্তির ছায়ায় বসিয়া অশ্রুপাত করাই জীবনের প্রধান লক্ষ্য মনে করিত না –যখন উন্মত্ত তরঙ্গ-সস্কুল সমুদ্রে তাহারা প্রাণের ভয় ত্যাগ করিয়া দূর-দূরান্তরে চলিতে পাকিত। দুর্লঙ্ঘ্য পৰ্ব্বত, নিৰ্জ্জন সিকতা-ভূমির লোক-বিরলতা, নানারূপ জনশ্রুতির কাহিনীর বিভীষিকা, কিছুতেই তাহাদিগকে টলাইতে পারিত ন—যখন সুন্দরীর প্রেম অর্থে-লোকে বুঝিত না শুধু— ফুরফুরে হাওয়া, চাদিনী রাতের মলয়-সমীর, আগুন-বর্ণ অশোক ফুলের বসন্ত-লীলা, কিন্তু যখন সুন্দরী রমণী কত দুর্লভ ও ঈপ্সিত, তাহাকে পাইতে হইলে শবাসনে তাপসের দ্যায় সাধন চাই, প্রতিপদে উৎকট ও দুরূহ বিপদ তৃণবৎ দলন করিয়া যাইতে হয় এবং ছিন্নমস্তার মত নিজের মস্তক বলি দিয়া সিদ্ধিলাভ ঘটে,—সেই সকল রূপকথা শুনিতে শুনিতে শিশুর মনে দেশ পর্যটনের দুৰ্ব্বার আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত হুইত, যুবকের মনে সাফল্য ও প্রণয়িনীর প্রেমের জন্ত জীবন-পণ করিতে ইচ্ছা হইত। পুরুষোচিত কৰ্ম্মশীলতার ভাব তরুণ-মনে উপ্ত ও অঙ্কুরিত হইত। এই রূপকথার বনে মালঞ্চমালার গল্প ছিল বনস্পতি। উহার অতুলনীয় সৌন্দৰ্য্য ইংরেজ-সমালোচক স্বীকার করিয়াছেন। সেন-রাজত্বের সময় সেই সকল রূপকথার যাদুমন্ত্র আমর ভুলিয়া গেলাম। তৎস্থলে কথকঠাকুর চন্দন-চচ্চিত ললাটে, তুলসী-মঞ্জরী ও ফুলের মালা পরিয়া—ব্রুব, প্রহ্লাদ ও রুক্সাঙ্গদ রাজার একাদশার কথা শুনাইতে লাগিলেন। বৃন্দাবন দাস ষোড়শ শতাব্দীতে লিখিলেন—“এই সকল গল্প-গুজব শুনিয়া বুথ কাল যায়।” হিন্দুরা ছাড়িয়া দিলেও মুসলমানের কুটীরে রমণীর বংশ-পরম্পরা শ্রত পল্লী-সম্পদ সেই রূপকথা এখনও ছাড়েন নাই। আমরা সমধিক পরিমাণে র্তাহাদের নিকটেই এই