পাতা:প্রাচীন বাঙ্গলা সাহিত্যে মুসলমানের অবদান.djvu/৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রাচীন বাঙ্গল সাহিত্যে মুসলমানের অবদান vA নাই। তাহারা দেবতার প্রতি ভক্তিতে বিগলিত হইত না, কৰ্ম্মবাদের উপরই তাহারা জোর দিত এবং দেবতার কৃপার উপর নিরুপায়ভাবে নির্ভর না করিয়া আপদে-বিপদে নিজের পায়ের উপর দাড়াইত । এই সেনাধিকার বহিভূত বাঙ্গালার পল্লী-সাহিত্য এবং ব্রাহ্মণ্য-শাসিত বাঙ্গলা সাহিত্য, এতদুভয়ের মধ্যে পার্থক্য অতি সুস্পষ্টভাবে এই সকল গাথায় স্থচিত হইতেছে। এই পল্লী-সাহিত্যের সর্বত্র দৃষ্ট হয়, বিবাহের পূৰ্ব্বে কুমারীরা স্বেচ্ছায় বর মনোনয়ন করিত এবং অভিভাবকগণ প্রতিকূল হইলে উদ্ধাম নদী-স্রোতের দ্যায় তাহারা গৃহের প্রাচীর ডিঙ্গাইয়া যাইত। বস্তুতঃ —শকুন্তলা, মালবিকাগ্নিমিত্র, কাদম্বর প্রভৃতি কাব্যের যে আদর্শ, এই পল্লী-সাহিত্যের আদশও তাঁহাই । এই সাহিত্যে দেখা যায়, বণিকেরাই সমাজে সম্মানিত ; তাহাদের পুত্রের রাজপুত্রদের সঙ্গী ও অন্তরঙ্গ বন্ধু, ব্রাহ্মণের ও ঠাকুর দেবতার তাদৃশ প্রভাব এই সাহিত্যে লক্ষিত হয় না। এই পল্লী-সাহিত্যে দেখা যায়, বাঙ্গালী-প্রতিভা কত দুৰ্দ্ধমনীয় ও উজ্জ্বল। শিক্ষ-বিভাগের ভূতপূৰ্ব্ব ডিরেক্টর ওটেন সাহেব ও আমেরিকান সমালোচক এলেন লিখিয়াছেন,—“বাঙ্গালী যদি এই প্রাচীন আদর্শের অনুসরণ করিয়া এই পল্লী-কাব্যের প্রকৃত রসাস্বাদ করিতে পারে, তবেই বুঝিব, পৃথিবীর অগ্রগামী জাতিদের সঙ্গে তাহারা তাল রাখিয়া চলিতে পরিবে ।” এই পল্লী-সাহিত্যের সহিত মুসলমানদের কি সংশ্ৰব, এখন আমরা তাহ দেখাইব। গুপ্ত ও পাল রাজত্ব হইতে সেন-রাজাদের যুগ পর্য্যন্ত পূৰ্ব্ব ও উত্তর ময়মনসিংহ সেই প্রাচীন বৌদ্ধ-ভাব মিশ্রিত আদশ অবলম্বন করিয়াছিল। ১২৮০ খৃষ্টাব্দে রাজবংশী বৈশুগাড়ে মামক রাজার সুসঙ্গ দুর্গাপুররাজ্য সোমেশ্বর সিংহ নামক এক পশ্চিমাগত ব্রাহ্মণ যোদ্ধা কড়িয়া লইয়াছিল। তৎপূর্ব পর্য্যন্ত সেই সমাজ পুৰ্ব্বতন আদর্শ রক্ষা করিয়াছিল ।